নদিয়ার হাসপাতাল সুপারের বিরুদ্ধে চিকিৎসকের হুমকির অভিযোগ
৪ জানুয়ারি ২০২৫আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের পর ক্ষোভে উত্তাল হয়েছিল কলাকাতা৷ সার্বিক নারী সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল৷ উঠে এসেছিল হুমকি নিয়ে নানা অভিযোগ৷ পাঁচ মাস পর একই ধরনের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে
চিকিৎসকের অভিযোগ
নারী সুরক্ষার দাবিতে আন্দোলনের মধ্যেই একাধিকবার স্বাস্থ্যকর্মীদের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে৷ হাসপাতালে চড়াও হওয়া জনতার দিকে আঙুল তুলেছেন তারা৷ এবার অভিযোগ, খোদ হাসপাতাল সুপারের দিকে৷
নদিয়া জেলার শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের এই ঘটনায় অভিযোগ তুলেছেন এক নারী চিকিৎসক৷ অভিযোগ, আরজি করের পরিণতি করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে৷ এই অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে৷ ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামকে ইমেল করেও অভিযোগ জানিয়েছেন চিকিৎসক৷তার দাবি, ডিউটি নিয়ে মতান্তরের কারণে তাকে এমন হুমকি দেওয়া হয়েছে৷
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে চার মাস আগে শান্তিপুর হাসপাতালে বদলি হয়ে এসেছিলেন ওই চিকিৎসক৷ তিনি প্যাথলজি বিভাগে সিনিয়র রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন৷ তার সঙ্গে ডিউটি রস্টার নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয় হাসপাতাল সুপারের৷ অভিযোগ, তাকে প্যাথলজির বদলে প্রতিদিন আউটডোর, ইনডোর ও ইমারজেন্সি বিভাগে ডিউটি দেওয়া হচ্ছে৷
এই বিষয়টি হাসপাতাল সুপারকে জানিয়েছিলেন ওই নারী চিকিৎসক৷ তার আর্জি, ইমারজেন্সি বিভাগে ঘন ঘন ডিউটি না দিয়ে তাকে যেন প্যাথলজি বিভাগেও কাজ করতে দেওয়া হয়৷ এই পরিস্থিতিতে দুই পক্ষের মতবিরোধ দেখা দেয়৷ অভিযোগকারিণীর দাবি, গত ৩১ ডিসেম্বর হাসপাতাল সুপার চিকিৎসককে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘আরজি করের মতো পরিণতি হতে পারে৷’’
চিকিৎসকের বক্তব্য, তিনি নিজেও অসুস্থ৷ হাঁপানির সমস্যা আছে৷ একইসঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক অবসাদে ভোগেন৷ নতুন জায়গায় মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ পড়ায় তিনি হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ এমনকী জীবনের ঝুঁকি আছে, এমন আশঙ্কাও জানিয়েছেন চিকিৎসক৷
অভিযোগের প্রতিক্রিয়া
হাসপাতাল সুপার তারক বর্মণকে নিজের সমস্যার কথা জানানোর পর তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে অভিযোগ প্যাথলজি বিভাগের চিকিৎসকের৷ বৃহস্পতিবার শান্তিপুর থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি৷
এই অভিযোগ পৌঁছেছে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরে৷ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে তারা৷ পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গড়া হয়েছে৷ সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে তাদের৷ নদিয়া জেলায় মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে নারী চিকিৎসকের অভিযোগ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে৷ ওই চিকিৎসককে আপাতত বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে৷ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷''
হাসপাতাল সুপার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই৷ এখানে রোস্টার কমিটি ডিউটি ঠিক করে৷ আমার পরামর্শ নেয়া হয়৷ সবাইকে যেভাবে ডিউটি দেয়া হয়, সেভাবেই ওকে ডিউটি দেয়া হয়েছে৷ ৩১ তারিখ আমার সঙ্গে তার দেখাই হয়নি৷ তাই হুমকি দেয়ারও প্রশ্ন নেই৷''
চিকিৎসকের এই ধরনের অভিযোগ ঘিরে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ নার্সদের সংগঠন নার্সেস ইউনিটির সম্পাদক ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘প্রতিবাদের পর এখনো একই পরিস্থিতি বজায় রয়েছে ৷ ‘আরজিকর করে দেব' বলায় বোঝা যাচ্ছে, একটা চক্র কাজ করছে৷ এর আগে হাসপাতালে রোগীর পরিজনেরা যখন চড়াও হয়, তখন একই কথা শোনা গিয়েছিল৷ কিন্তু এই কথা যদি সত্যিই কোনো কর্তৃপক্ষ বলে থাকেন, সেটা খুব চিন্তার৷ শুধু হাসপাতাল বলে নয়, এটা নারী নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও উদ্বেগজনক৷''
আন্দোলনের ফল
আরজি কর-কেন্দ্রিক প্রতিবাদ স্মরণাতীত কালে কলকাতা ও জেলার সবচেয়ে বড় নাগরিক আন্দোলন৷ দিনের পর দিন কর্মবিরতি থেকে ধরনা, অনশন, জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন অন্য মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছিল৷ এর পাশাপাশি নারী বাহিনীর ‘রাত দখলের' কর্মসূচি অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল আন্দোলনকে৷ তার কতটা ফল মিলল?
ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের সদস্য ও আন্দোলনের নেতা অর্ণব তালুকদার ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘এত বড় আন্দোলন হয়ে যাওয়ার পর এ ধরনের অভিযোগ উঠলে ভাবতে হয়, কারা এদের পেছনে আছে৷ এটাই প্রমাণ করে, এই আন্দোলনের দাবি পূরণ এখনো হয়নি৷ আন্দোলন আমাদের চালিয়ে যেতে হবে, যতদিন না এই ধরনের থ্রেট কালচার থেকে প্রতিষ্ঠানগুলি মুক্ত হয়৷’’
অর্ণব জানান, শুধু স্বাস্থ্য পরিষেবার কর্মীরাই নয়, সকলকে নিয়ে এই বৃহত্তর আন্দোলন চলছে৷ গণ-কমিটি তৈরি করা হচ্ছে যাতে আমজনতা ও অন্যান্য পেশার মানুষরাও থাকেন৷ জুনিয়র চিকিৎসকদের বক্তব্য, তাদের আন্দোলনের একটা বড় সাফল্য সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিবাদের সাহস ঢুকিয়ে দেয়া৷ তাই শান্তিপুরের মতো ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হচ্ছে৷ আগে এসব সামনে আসত না৷
হাল ছাড়তে নারাজ আন্দোলনকারীরা৷ নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মক্ষেত্র ও সমাজ গড়ার লক্ষ্যে তারা আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর৷ ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক সময়ে আরজি কর বড় পরিষেবায় অগ্রণী হাসপাতাল ছিল৷ কেউ তখন বলেননি, আরজি কর করে দেব৷ উন্নত পরিষেবা পেতেন রোগীরা৷এখন বলছেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক৷’’