1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নব্য জেএমবি আবার সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে

২ মার্চ ২০১৭

বগুড়ায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নব্য জেএমবির সামরিক শাখার উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডার আমিজুল ইসলাম ওরফে আল-আমিন বা রনি নিহত হয়েছে৷ ঊর্ধ্বতন এক পুলিশ কর্মকর্তার দাবি, ‘‘নব্য জেএমবি এখনও আঞ্চলিকভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে৷’’

https://p.dw.com/p/2YXNq
বাংলাদেশের পুলিশ
ফাইল ছবিছবি: picture-alliance/NurPhoto/Z. Chowdhury

বুধবার রাতে বাংলাদেশের উত্তরের জেলা বগুড়ার শেরপুর উপজেলার জামনগর এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে আমিজুল ইসলাম নিহত হয় বলে পুলিশ জানায়৷

শেরপুর থানার ওসি খান মো. এরফান সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘‘নিহত আমিজুল শেরপুরের মহিপুর জুয়ানপুর কুটিরভিটা গ্রামে গ্রেনেড বিস্ফোরণ মামলার সন্দেহভাজন আসামি৷ তার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ি এলাকায়৷ বগুড়ার ডিবি পুলিশের একটি দল গত মঙ্গলবার রাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে৷ গ্রেপ্তারের সময় তার সঙ্গীদের ছুরিকাঘাতে ডিবি পুলিশের দুই কনস্টেবল গুরুতর আহত হন৷’’

তিনি দাবি করেন, ‘‘অস্ত্র উদ্ধার ও অন্য জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে জন্য বগুড়ার ডিবি ও শেরপুর থানা পুলিশ জঙ্গি আমিজুলকে নিয়ে বুধবার দিন ও রাতে বগুড়া এবং রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়৷ রাতে তাকে রাজশাহী নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ বৃহস্পতিবার ভোররাত ৩টার দিকে সীমাবাড়ি-রানীরহাট আঞ্চলিক সড়কের জামনগর এলাকায় পৌঁছালে সঙ্গিরা জঙ্গি আমিজুলকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করে৷ পুলিশও পাল্টা গুলি করে৷ এ সময় আমিজুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গুলিবিদ্ধ হয়৷ তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷’’ তার কাছ থেকে তিন রাউন্ড গুলিভর্তি একটি বিদেশি পিস্তল ও দু’টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ৷

পুলিশ আরো জানায়, ‘‘এক বছর আগে সে জেএমবিতে যোগ দিয়েছিল৷ মাঝে মাঝে সে রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার বুজরুক রাজারামপুর গ্রামে তার পালক বাবা আতাউর রহমানের বাড়িতে থাকতো৷ সেখানে জেএমবি সদস্যের গোপন বৈঠক ও প্রশিক্ষণ দেয়া হতো৷ এলাকায় তার চলাফেরা ছিল সন্দেহজনক৷ দক্ষতার কারণে পরবর্তীতে তাকে জেএমবির সামরিক নব্য শাখার উরাঞ্চলীয় প্রধান করা হয়৷’’

গত বছরের ১ জুলাই ঢাকার হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার পর নব্য জেএমবির নাম আলোচনায় আসে৷ নব্য জেএমবি ওই হামলা চালায়৷ হামলায় দেশি-বিদেশি মোট ২২ জন নাগরিক নিহত হন৷ এরপর থেকে নব্য জেএমবির বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু হয় বাংলাদেশে৷ এই অভিযানে হোলি আর্টিজানে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও নব্য জেএমবির প্রধান তামিম চৌধুরীসহ এপর্যন্ত ৩৯ জন নিহত হয়েছে৷

যেসব জঙ্গি নিহত হয়েছে

হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলায় দেশি-বিদেশি ২২ জন নাগরিক নিহতের বাইরেও, অভিযানে পাঁচজন জঙ্গিও নিহত হয়৷ তারা হলো – রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিব্রাস ইসলাম, মীর সাবিহ মোবাশ্বের, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল৷

গুলশানের ঘটনার সাতদিনের মাথায় ৮ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের দিন পুলিশের ওপর হামলা চালায় নব্য জেএমবির একটি গ্রুপ৷ এ সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আবীর রহমান নামে নব্য জেএমবির এক সদস্য৷ পরে ৫ আগস্ট র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ওই ঘটনায় আটক শফিউল ও তার সহযোগী আবু মোকাতিল নিহত হয়৷

২৬ জুলাই ঢাকার কল্যাণপুরের তাজমঞ্জিলের জঙ্গি আস্তানায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযানে নিহত হয় ন’জন জঙ্গি, যাদের মধ্যে আটজনের পরিচয় মিললেও একজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি৷ পরিচয় পাওয়া আটজন হলো – দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ, টাঙ্গাইলের আবু হাকিম নাইম, ঢাকার ধানমন্ডির তাজ-উল-হক রাশিক, ঢাকার গুলশানের আকিফুজ্জামান খান, ঢাকার বসুন্ধরার সেজাদ রউফ অর্ক, সাতক্ষীরার মতিউর রহমান, রংপুরের রায়হান কবির ওরফে তারেক এবং নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন৷

২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অভিযানে নিহত হয় নব্য জেএমবির ‘মাস্টার মাইন্ড’ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্যানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহম্মেদ চৌধুরী৷ তামিমের সঙ্গে তার আরো দুই সহযোগী নিহত হয়৷ তাদের একজন ধানমন্ডির তওসিফ হোসেন ও যশোরের ফজলে রাব্বী৷

২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয় জাহিদুল ইসলাম নামে অবসরপ্রাপ্ত এক মেজর৷ সে জেএমবির সামরিক প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিল৷

১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের একটি বাড়িতে অভিযান নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা তানভীর কাদেরী নিহত হয়৷ সেখান থেকে আটক করা হয় তিন নারী জঙ্গি ও তানভীরের ১৪ বছর বয়সি ছেলেকে৷

৮ অক্টোবর গাজীপুরে পৃথক দুই অভিযানে ৯ জঙ্গি ও টাঙ্গাইলে দুই জঙ্গি নিহত হয়৷ একই রাতে সাভারের আশুলিয়ায় র‌্যাবের অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় জেএমবির অর্থদাতা আবদুর রহমান ওরফে নাজমুল ওরফে সারওয়ার জাহান৷ পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়৷ ২৪ ডিসেম্বর আশকোনার জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় সারিকা নামে এক নারী জঙ্গি আত্মঘাতী হয় এবং কিশোর আফিফ কাদেরি নিহত হয়৷ আফিস আজিমপুর অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরির ছেলে৷

৬ জানুয়ারি ঢাকার রায়ের বাজারে নিহত হয় জঙ্গি মারজান ও সাদ্দাম৷ সর্বশেষ ২ ফেব্রুয়ারি বুধবার ভোররাতে বগুড়ায় নিহত হলো আমিজুল ইসলাম ওরফে আল-আমিন ওরফে রনি৷

‘নব্য জেএমবির শক্তি এখন আর আগের মত নেই’

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘নব্য জেএমবির শক্তি এখন আর আগের মতো নেই৷ তাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কেউই আর তেমন বেঁচে নেই৷ তবে এরপরও তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে৷ আর আমাদের কাছে যখন সংগঠিত হওয়ার খবর আসে, তখনই আমরা ব্যবস্থা নিই৷’’

তিনি আরো জানান, ‘‘নব্য জেএমবির বিচ্ছিন্ন সদস্যরা আঞ্চলিকভাবে সংগঠিত হয়ার চেষ্টার খবর আমরা পাই৷ তবে কেন্দ্রীয়ভাবে তাদের সাংগঠিন কার্যক্রম আছে বলে মনে হয় না৷’’

শায়খ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ নামে একজন কেন্দ্রীয়ভাবে নব্য জেএমবির হাল ধরেছেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ এ নিয়ে মনিরুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এর সত্যতা পাইনি৷’’

প্রিয় পাঠক, এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানাতে পারেন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান