1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌নরকঙ্কালের রমরমা ব্যবসা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৪ মার্চ ২০১৭

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জেলায় জেলায় নরকঙ্কালের ফলাও ব্যবসা দীর্ঘদিনের৷ কবর থেকে কঙ্কাল তুলে বেচে দেওয়ার এই কারবার চেষ্টা করেও বন্ধ করতে পারে না প্রশাসন৷

https://p.dw.com/p/2Zsbv
নরকঙ্কাল
ছবি: dapd

ওদের কাজ রাতের অন্ধকারে৷ খ্রিষ্টান অথবা মুসলিমদের কবর খুঁড়ে পচা-গলা মৃতদেহ বের করে এনে, ভেতরের কঙ্কাল চুন, অ্যাসিড ও অন্যান্য রাসায়নিক দিয়ে পরিষ্কার করে বিদেশে পাচার করা৷ প্রত্যন্ত এলাকায় টাকার অভাবে অর্ধেক জ্বালিয়ে ফেলে চলে যাওয়া মৃতদেহ, নদীর জলে ভাসিয়ে দেওয়া শব জোগাড় করা হয় একই তৎপরতায়৷ এ ছাড়াও হাসপাতালের মর্গ, প্রায়শই যেখানে বেওয়ারিশ লাশের পাহাড় জমে ওঠে, সেখান থেকেও মৃতদেহ চোরাপথে বাইরে চলে আসে বলে খবর৷

দু'দিন আগেই বর্ধমানের পূর্বস্থলিতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ হানা দেয়৷ একটি-দু'টি নয়, মোট ১৮টি পূর্ণ দৈর্ঘের নরকঙ্কাল উদ্ধার হয়, আটক করা হয় চোরাই নরকঙ্কাল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত চারজনকে৷ রাজ্য পুলিশের কালনা সাব ডিভিশনের দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসার প্রিয়ব্রত রায় ডয়চে ভেলেকে জানালেন, কীভাবে এই ব্যবসা চলে৷ মূলত এদের কারখানা থাকে শ্মশানের পাশে, নদীর ধারে৷ নানা উপায়ে সংগ্রহ করা লাশ অ্যাসিড দিয়ে, হাইড্রোজেন পারঅক্সইডের সাহায্যে পরিষ্কার করে, তার থেকে বের করে আনা কঙ্কালটাকে প্রথমে রোদে শুকিয়ে, তার পর ব্লিচ করে তৈরি করা হয় বিক্রির জন্য৷ জেলা পুলিশের কাছে খবর, মূলত কলকাতার মেডিকেল কলেজে অস্থিবিদ্যা পড়ানোর জন্য বিক্রি হয় এই নরকঙ্কাল৷ কিন্তু বৃহত্তর ক্ষেত্রে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, নেপাল এবং চীনেও নরকঙ্কালের রমরমা ব্যবসা৷ এছাড়া জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, এমনকি সুদূর ইউরোপ-অ্যামেরিকাতেও মেডিকেল স্কুলে পৌঁছে যায় এই নরকঙ্কাল৷

পুলিশ অফিসার প্রিয়ব্রত রায়

কিন্তু কলকাতার অস্থি চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, আজকাল আসল নরকঙ্কালের অপ্রতুলতার জন্যই মেডিকেল কলেজে পলিমারের তৈরি নকল নরকঙ্কাল ব্যবহার হয় বেশি৷ কিন্তু কালনার এসডিপিও বলছেন, এখনও আসল নরকঙ্কাল পেলে, তারই বেশি কদর৷ ফলে এই ব্যবসা চলতেই থাকছে৷ যদিও মানবাধিকার সংগঠনগুলির চাপে ১৯৮৫ সালে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে নরকঙ্কালের ব্যবসা৷ পুলিশ খবর পেলে হানা দেয়, বেআইনি কঙ্কালের মজুত বাজেয়াপ্ত করে পুড়িয়ে নষ্ট করে, এই ব্যবসায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয় – কিন্তু এর বেশি কিছু করার নেই পুলিশ কিংবা প্রশাসনের৷ দোষীদের সাজা দেওয়ার বিষয়টাও স্বাভাবিকভাবেই আদালতের হাতে৷

আসল নরকঙ্কালের আরও কিছু বেআইনি ব্যবহারের কথা শোনা যায় চীনে এবং জাপানে৷ প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী নানা ধরনের ওষুধ, বিশেষত যৌনশক্তি বর্ধক ওষুধ বানাতে নরদেহের কিছু বিশেষ হাড় নাকি কাজে লাগে৷ এছাড়া আছে তান্ত্রিক আরাধনার জন্য করোটি ও হাড়ের চাহিদা৷ নানা ধরনের ব্ল্যাক ম্যাজিক, আধিভৌতিক বিদ্যার চর্চার জন্যও মানবশরীরের হাড়ের প্রয়োজন হয়৷

পশ্চিমবঙ্গ এই মুহূর্তে অবৈধ নরকঙ্কাল ব্যবসার এক বড় কেন্দ্র৷ এখান থেকে চোরাপথে কঙ্কাল যায় লাগোয়া রাজ্য বিহার বা ঝাড়খণ্ড হয়ে নেপালে ও অন্যত্র৷ ২০০৯ সালে বিহারের ছাপরা জেলায় এক বাসযাত্রীর কাছ থেকে ৬৭টি করোটি বা মাথার খুলি উদ্ধার করেছিল পুলিশ৷ তার মাসখানেকের মাথায় উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে উদ্ধার হয় ২৭টি বাচ্চার মাথার খুলি এবং শ'‌খানেক হাড়৷ তবে এ সংক্রান্ত সবথেকে বড় ঘটনা ২০০৪ সালে৷ বিহারে বোধগয়ায় ল্গু নদীর তীরে বালি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছিল ১০০০ করোটি!‌ আর পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সম্পন্ন জেলা বর্ধমান বরাবরই চোরাই নরকঙ্কাল ব্যবসার এক বড় ঘাঁটি৷ ২০০৬ সালে এই পূর্বস্থলী গ্রামেই একসঙ্গে ২০টি করোটি উদ্ধারের পর উত্তেজনা ছড়ায়৷ এলাকার কবরখানাগুলির নিরাপত্তার দাবিতে সরব হন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ তবে সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে৷ স্থানীয় গুন্ডা-মস্তানরা অনেক ক্ষেত্রেই এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকে, যে বস্তুত এক বড় এবং ক্ষমতাবান আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের অংশ৷ এদের ক্ষমতার হাত অনেক দূর পর্যন্ত প্রসারিত এবং অর্থের দাপটও বেশি৷ ফলে চাইলেও নরকঙ্কাল ব্যবসা বন্ধে খুব বেশি দূর এগোনো সম্ভব হয় না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান