নর্থ মেসিডোনিয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গন বদলে দিচ্ছে কনট্রাপুংক্ট
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪২০১৭ সাল অবধি নর্থ মেসিডোনিয়ার সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে নিষেধাজ্ঞা এবং ভয় দেখানোর ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হতো৷ কিন্তু কনট্রাপুংক্ট এনজিও প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরিস্থিতিতে পরিবর্তন এসেছে৷
স্কোপইয়েতে গ্রীষ্মের দিনগুলো বেশ গরম থাকে৷ তা সত্ত্বেও ইসক্রা গেশওস্কা শহরের মধ্য থেকে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইয়াদ্রোতে যান৷ স্বাধীন শিল্পক্ষেত্রের কেন্দ্র হিসেবে তিনি এবং তার মতো সমমনারা এটা প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ ছোট্ট কিন্তু প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই সম্প্রদায়ের নর্থ মেসিডোনিয়ার রাজধানীতে এরকম গুটিকয়েক ভেন্যু রয়েছে৷
ইসক্রা গেশওস্কা বলেন, ‘‘এই ছোট্ট সম্প্রদায়ের মানুষগুলো অন্যান্য দৃষ্টিভঙ্গি, সমসাময়িক সংস্কৃতি, বিকল্প এবং স্বাধীন সংস্কৃতির জন্য লড়ছেন৷ এটা অনেকটা মরুভূমির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গাছের মতো৷ হ্যাঁ, আমরা নিঃসঙ্গ৷ কারণ, সমাজ আমাদের এরকম করেছে৷''
স্কোপইয়ে ইসক্রা গেশওস্কার বাড়ি৷ তিনি গত শতকের সত্তরের দশকের রেটরো ফিউচারস্টিক ভবনগুলোর বিশেষ ভক্ত৷ ১৯৬৩ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর আন্তর্জাতিক সহায়তায় এগুলো তৈরি করা হয়েছিল৷
পুরনো ট্রেন স্টেশনে ঘড়িটি সেই সময়ের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে৷ তিনি মনে করেন, অর্ধশতক পর স্কোপইয়ে আবারও ধ্বংস হয়েছে৷ রাজনীতিবিদরা মর্ডানিজমের শহরটিকে এক নিওক্লাসিকাল ফেরিটেইল ফেসেইডে পরিনত করেছে যা স্যুডো হিস্টোরিকাল মনুমেন্টস দিয়ে সম্পূর্ণ হয়েছে৷
ইসক্রা গেশওস্কা বলেন, ‘‘১৯৬৩ সালের ভূমিকম্পের পর এটি সংহতির শহর ছিল৷ বর্তমানে এটি জম্বিফাইড সিটি৷ আমি এটিকে একধরনের রাজনৈতিক-প্রত্নতাত্ত্বিক ‘ইঞ্জিনিয়ারিং' বলবো - এক ঐতিহাসিক পুনর্ব্যাখ্যা৷ আমাদের ইতিহাস আমাদের কাছ থেকে চুরি করা হয়েছে৷ এবং আমাদের অবশ্যই এখন সৃজনশীল প্রতিরোধের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে হবে৷''
নিউজ চ্যানেল ভেস্টি২৪-কে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন ইসক্রা গেশওস্কা৷ তিনি একজন সম্মানিত বিশেষজ্ঞ এবং সংস্কৃতি মন্ত্রীদের একজন উপদেষ্টা৷ কিন্তু জাতীয় রক্ষণশীলরা এখন ক্ষমতায় ফিরেছেন৷ সংস্কৃতি নীতির ক্ষেত্রে এর অর্থ কী হবে?
শহরের উপরের দিকে মিউজিয়াম অব কনটেম্পোরারি আর্ট স্কোপইয়ে-এর অবস্থান৷ এটি ১৯৭০ সালে নির্মিত৷ কিন্তু উপস্থিতি প্রতারণামূলক: সমসাময়িক শিল্প এখানে কোনো সমর্থক নয়৷ গেশওস্কার মতো সাংস্কৃতিক অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে গ্যাটে ইন্সটিটিউটের যুক্ত হওয়ার আরো একটি কারণ এটি৷
ক্যাথরিন অস্টভাল্ট-রিশটার বলেন, ‘‘এমন সময়ও ছিল যখন সরকার তার কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ না করলেও সরাসরি অবরুদ্ধ করেছিল৷ যেমন কালচারাল সেন্টার টোটকা৷ এখন পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে সহজ৷ কিন্তু এটাও সত্য যে বিকল্প শিল্পক্ষেত্রকে সম্মান করা হচ্ছে না৷ আমি অবাক হই যে তিনি এত শক্তি কোথা থেকে পান এবং তিনি কখনো ক্লান্ত হন না৷ তিনি সত্যিই তরুণ শিল্পীদের একত্রিত হতে, প্রদর্শনী করতে এবং সহায়তা দিতে লড়াই করছেন৷''
এই লড়াইয়ে গেশওস্কার সঙ্গী তিয়ানা স্পাসোভস্কা৷ তারা একসঙ্গে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করেন এবং সাংস্কৃতিক এনজিও কনট্রাপুংক্টের জন্য প্রকল্প তৈরি করেন৷ তারা স্কোপইয়ে-র শিল্পীদেরকে বলকান এবং ইউরোপের অন্যান্যদের সঙ্গেও যুক্ত করেন৷
স্কোপইয়ে-র নাট্যমঞ্চ গেশওস্কাকে তার ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়৷ তার বাবামা রাতের পর রাত এখানে অভিনয় করেছেন৷ এখানে বেড়ে ওঠার প্রভাব রয়েছে তার জীবনে৷ তিনি গভীরভাবে ভাবতে শিখেছেন৷ বর্তমানে এই ছবিগুলো তার মায়ের বর্ণিল ক্যারিয়ারের সাক্ষী হয়ে আছে৷ তারা একটি দেশ গঠনে সংস্কৃতির শক্তিতে বিশ্বাসী৷
ইসক্রা গেশওস্কা বলেন, ‘‘আমরা শুধুমাত্র সাংস্কৃতি রাজধানী জমাতে পারি৷ আমরা একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়তে পারি না, কিন্তু আমরা সাংস্কৃতিক উৎপাদন থেকে কিছু তৈরি করতে পারি৷ সৃজনশীল তরুণদের মধ্যে আগ্রহ আছে - আমরা তাদেরকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে দিতে পারি না৷ আমরা তাদের হারাতে পারি না৷''
অনেক মানুষ দেশান্তরীতে আগ্রহী দেশটিতে সৃজনশীল তরুণদের মাঝে দেশে থেকে কিছু গড়ার আগ্রহ আশা জাগায়৷
প্রতিবেদন: রাইনার ট্রাউবে, ভিলিস শ্যুমান/এআই