1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচন পরবর্তী সংঘাতের নতুন রূপ

১০ জানুয়ারি ২০২৪

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া ঠেকাতে পারলেও নির্বাচন পরবর্তী সংঘাত এড়াতে পারছে না আওয়ামী লীগ৷ এবার ‘নৌকা আওয়ামী লীগ' আর ‘স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ'-এর সংঘাতেই প্রতিপক্ষকে ভোট দেয়ার ‘শাস্তি' ভোগ করছে অসংখ্য মানুষ৷

https://p.dw.com/p/4b5TT
পুড়ে যাওয়া বাড়ির পরিস্থিতি
নির্বাচনের পরদিন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হুদার সমর্থকের বাড়িতে বোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরীর সমর্থকদের বিরুদ্ধেছবি: Ruhul Babu

আওয়ামী লীগের নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন পরবর্তী সংঘাত শুরু হয়েছে৷ এদিকে স্বতন্ত্রদের কেউ কেউ স্বতন্ত্ররা মিলে সংসদে বিরোধী দল হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করায় জাতীয় পার্টির ভয় আরো বেড়ে গেছে৷

বিএনপি এবং তাদের সমমনাবিহীন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল ছাড়াও আরো যেসব ছোট ছোট দল অংশ নিয়েছে তাদেরও  ‘বড় আশা’ ছিল৷ কিন্তু তাদের সেই আশা পূরণ হয়নি ৷

আওয়ামী লীগ ছাড়া আর সবার আসন ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় তলানিতে এসে পৌঁছেছে৷ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল৷ তাই প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক আর ১৪ দলীয় জোট শেষ পর্যন্ত থাকবে কিনা৷ জাতীয় পার্টির নির্বাচিতরা প্রথমে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত তারা বুধবার শপথ নিয়েছেন৷ অন্যদিকে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বড় ধরনের ফাটলের আশঙ্কা করা হচ্ছে৷

ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ি
মাদারীপুর-৩ আসনের কালকিনিতে নৌকার সমর্থক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল বেপারীর বাড়িসহ বেদে সম্প্রদায়ের অন্তত ১৮টি ঘর ভাংচুর ও লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থকদের বিরুদ্ধেছবি: Pradyut Kumar

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও স্বতন্ত্রদের মধ্যে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ গত ২৪ ঘন্টায় ঝিনাইদহ সদর, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, শরিয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, মাদারীপুরের কালকিনী, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে৷  

৭ জানুয়ারি নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় নেত্রকোনা ও টাঙ্গাইলে দুইজন জন নিহত হয়েছেন৷ ২০ জেলায় সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে৷ এই সব সংঘাতে দুই শতাধিক আহত হয়েছেন৷ সংঘাত হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্রের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে৷

নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, তবে নির্মূল হবে না: ড. শান্তনু মজুমদার

স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র যারা জয়ী হয়েছেন তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের নির্বাচনের সময়েই বিভেদ তৈরি হয়৷ আর এবার কোনো স্বতন্ত্রকেই কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার করা হয়নি৷ শুধু জেলা কমিটি ফরিদপুর সদরের এ কে আজাদকে বহিস্কার করেছে৷ স্থানীয় নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের যারা স্বতন্ত্র হিসেবে জয়ী হয়েছেন তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগেও প্রভাবশালী৷ ফলে সংঘাত ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী রাজনীতিতে বিভাজন আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা৷

এবার স্বতন্ত্রদের কাছে আওয়ামী লীগের অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী পরাজিত হয়েছেন৷ তিন প্রতিমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের ১৯ জন এমপি স্বতন্ত্রদের কাছে পরাজিত হয়েছেন৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার মনে করেন, "সংঘাতের যে খবরগুলো আসছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যদি যথাযথ বার্তা পাঠানো যায়, তাহলে সেটা বাড়বে বলে মনে হয় না৷ দলের তৃণমূলে নানা দ্বন্দ্ব, স্বার্থ এগুলো নিয়ে বিভেদ আগেও ছিল এবং থাকবে৷ উপর থেকে বার্তা গেলে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, তবে নির্মূল হবে না৷ আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্মূল করার জন্য কুতথ্য, অর্থশক্তি ও সহিংসতার আশ্রয় নেয় কিনা সেটা দেখার আছে৷”

ক্ষতিগ্রস্ত একটি ঘর
ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার দুধসর ইউনিয়নে নির্বাচনের পরে দোকানপাট, বাড়ি-ঘর ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধেছবি: Nasim Ansari

তার মতে, " ১৪ দলীয় জোটের প্রয়োজনীতা এখনো আছে বলে আমি মনে করি৷ মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতা- এই বিষয়গুলো বিবেচনায় তাদের সম্মানের জায়গায় ফিরিয়ে নেয়া উচিত৷ আর জাতীয় পার্টি বিলীয়মান শক্তিতে পরিণত হয়েছে৷”

বুধবার শপথ নেয়ার পর স্বতন্ত্রদের মধ্যে যারা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন তারা জানান, তারা এখনো আওয়ামী লীগের৷ তাদের নৌকা প্রতীক না দেয়া হলেও নির্বাচনে দাঁড়াতে অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ তারা নিজেদের আওয়ামী লীগের এমপিই মনে করেন৷

তৃণমূলে সংঘাত ও বিভেদ বাড়ছে: শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন মনে করেন, "আওয়ামী লীগের তৃণমূলে এই প্রেক্ষাপটে সংঘাত এবং বিভেদ বাড়তে পারে৷ তবে সেটা সব সময়ই ছিল৷ যারা এমপি হন, তাদের একটা গ্রুপ থাকে৷ তাদের বিরোধী আরেকটি গ্রুপ থাকে৷ তবে দল ক্ষমতায় থাকায় এটা খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না৷ স্বতন্ত্ররাও তো আওয়ামী লীগ৷ এই কারণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রে বিভেদ ও দল ভাঙার কোনো আশঙ্কা আমি দেখছি না৷ তবে নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের ওপরও হামলা হয়েছে, যা দু:খজনক৷”

আর জোটের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘জোট তো আসলে এখন আর নেই৷ ভবিষ্যতে সব দল নির্বাচনে এলে তখন বোঝা যাবে এরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থাকে কিনা৷ একেকটা প্রেক্ষাপটে জোট তৈরি হয়৷ ২০১৪ সালে তো জোট ছিল না৷’’

তিনি মনে করেন, "এই নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতির নতুন ধারাও সৃষ্টি হতে পারে৷ সেটা কী রকম তা সময়ই বলে দেবে৷”

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান