1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তফসিল নিয়ে সংকট কাটেনি

১২ নভেম্বর ২০১৮

নির্বাচন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর পুনঃনির্ধারণ করা হলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট৷ তারা মনে করছে, নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার নামে এক ধরনের চালাকি করা হয়েছে৷ এর মাধ্যমে আদতে নির্বাচনে কারচুপির পরিকল্পনা করছে তারা৷

https://p.dw.com/p/3869I
ছবি: AFP/Getty Images

এর আগে নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হয়েছিল ২৩ ডিসেম্বর৷ কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ আরো কিছু দল ও জোটের দাবি ছিল নির্বাচন পেছানোর৷ ঐক্যফ্রন্ট লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে নির্ধারণের দাবি জানায়৷ কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ কে এম নূরুল হুদা সোমবার ঢাকায় ইভিএম মেলায় জানান যে নির্বাচন হবে ৩০ ডিসেম্বর৷ এ জন্য মনোনয়ন-পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৮ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে৷ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘সব দলের অংশগ্রহণ আশা করেছিলাম এবং তা হয়েছে৷ এ জন্য দলগুলোকে অভিনন্দন জানাই৷ ঐক্যফ্রন্টসহ বিরোধী দলগুলো পুনঃতফসিলের আবেদন জানিয়েছিল, তাদের আবেদনে আমরা পুনঃতফসিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’’

নির্বাচনের তারিখ পেছানোর পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মাত্র সাতদিন নির্বাচন পেছানোর মধ্যে সরকারের চালাকি আছে৷ এটা একটা প্রতারণা৷ সরকার ভয় পাচ্ছে এবং তাই তারা চালাকি ও প্রতারণা করছে৷ আরো অনেক সময় আছে৷ তাই নির্বাচন আরো পেছানো যায়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এমনভাবে নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কিনা ৩১ ডিসেম্বর ইংরেজি নববর্ষের আগের দিন৷ এছাড়া নির্বাচনের আগের দু'দিন শুক্র ও শনিবার সরকারি বন্ধ৷ ইংরেজি নববর্ষের আগের দিন কি বিদেশি পর্যবেক্ষক এখানে থাকবে? বিদেশিরা সব দেশে চলে যাবে৷ সরকার তখন ইচ্ছামত ব্যালট পেপারে সিল মারার সুযোগ পাবে৷’’

মাত্র সাতদিন নির্বাচন পেছানোর মধ্যে সরকারের চালাকি আছে: ডা. জাফরউল্লাহ

তিনি আরো বলেন, ‘‘এখনো আমাদের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় অব্যাহত আছে৷ তারা ক্যাম্পেইনও চালাচ্ছে৷ সরকারের প্রতি আহ্বান, এই প্রতারণা আর চালাকি বন্ধ করে যৌক্তিক সময় নিয়ে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে৷’’

এদিকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সব দলই নির্বাচন পেছানোর দাবি করেছে৷ আমরা সব দিক বিবেচনা করে এক মাস নির্বাচন পেছাতে বলেছি৷ এবং সেই সময়ও আছে৷ সাতদিন বেশি সময় নয়৷ এখন বিরোধী দলের কোনো কথাই যদি সরকার শুনতে না চায়, তাহলে একটি ভালো নির্বাচন হবে কীভাবে? নির্বাচন কমিশন যদি সব সময়ই সরকারি দলকে সুযোগ-সুবিধা দেয় আর বিরোধী দলকে শত্রুজ্ঞান করে, তাহলে তো মীমাংসার দিকে এগানো খুব কঠিন৷ আমরা তো আমাদের পাওনাটুকুই চাই৷ আমরা তো কোনো বাড়তি সুবিধা চাই না৷’’

নির্বাচন কমিশন বিরোধী দলকে নির্বাচনে চাচ্ছে কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন: দুদু

তিনি আরো বলেন, ‘‘নির্বাচন ভালে কী মন্দ হবে সেটা আরো পরের বিষয়৷ কিন্তু নির্বাচন কমিশন বিরোধী দলকে নির্বাচনে চাচ্ছে কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন৷ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, উৎসবমুখর করতে হলে আরো সময় দরকার৷ আমরা ফ্রন্ট নেতারা এখন বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব৷’’

আওয়ামী লীগেরসাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আগেও বলেছি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং উৎসবমুখর করতে নির্বাচন যদি পিছানো হয়, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না৷ কমিশন যে সাতদিন নির্বাচন পিছিয়েছে, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাই৷’’

ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচন আরো পেছানোর দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তারা আসলে দেশে শান্তি ও সমৃদ্ধি চায় না৷ তারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে৷ তারা চায়, বাংলাদেশ একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হোক৷ তাই তাদের দাবি শেষ হয় না৷’’

তারা চায়, বাংলাদেশ একটা অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হোক: খালিদ মাহমুদ

এদিকে সংসদ নির্বাচনের তারিখ সাতদিন পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর নির্ধারণ করায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী৷

এবারের নির্বাচনে সব দলই অংশ নিচ্ছে৷ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য মনোনয়নপত্র বিক্রি সোমবার শেষ হয়েছে৷ বুধবার থেকে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হবে৷ বিএনপিও মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে সোমবার থেকে৷ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে নিজের মনোনয়নপত্র কেনার সময় সোমবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘নির্বাচনের কোনো পরিবেশ বা পরিস্থিতি নেই৷ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত আমরা অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করব৷’’

আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির দলীয় কর্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের তারিখ এক সপ্তাহ পেছানোর সিদ্ধান্তকে আওয়ামী লীগ সমর্থন করে৷ এই সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার শুধু নির্বাচন কমিশনের৷ এখানে আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই৷ নির্বাচনের তারিখ না পেছালেও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসত, এটা আমরা জানতাম৷ কারণ নির্বাচনে আসা তাদের সিদ্ধান্ত৷’’

এর বাইরে জাতীয় পার্টিসহ সব দলই প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র বিক্রি করছে৷ জামায়তে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক না থাকায় তাদের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করবে৷

নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিক্রি হচ্ছে ঢাকা থেকে৷ তাই প্রার্থী হতে আগ্রহী ও সমর্থকদের ব্যাপক ‘শো ডাউন’-এর কারণে শহর প্রায় অচল হয়ে পড়েছে৷ ট্রাফিক ব্যবস্থা বলতে গেলে ভেঙেই পড়েছে৷

প্রসঙ্গত, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয় ২০১৪ সালের ১২ জানুয়রি৷ আর সংসদ সদস্যরা শপথ নেন ৯ জানুয়ারি৷ ২৯ জানুয়ারি সংসদের অধিবেশন বসে৷ সেই হিসেবে, বর্তমান সরকারের মেয়াদ ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত৷ তাই বিরোধীদের কথায়, ২৮ জানুয়ারির আগে নির্বাচন করলেই হবে৷