পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ইস্পাত উৎপাদনের উদ্যোগ
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩সুইডেনের উত্তরাঞ্চলে সুমেরু বৃত্তের দক্ষিণে বাল্টিক সাগর উপকূলে এসএসএবি কোম্পানির ইস্পাত কারখানা অবস্থিত৷ কারখানার ব্লাস্ট ফারনেস এককালে কোম্পানির গর্বের বিষয় ছিল৷ সেখানে প্রথাগত পদ্ধতিতে ইস্পাত উৎপাদন করা হয়৷ সেখানে দিনে ৬,০০০ টন ইস্পাত উৎপাদন করা হয়৷ কয়লা ব্যবহার কর- ব্লাস্ট ফারনেস চালানো হয়৷
ইস্পাত উৎপাদনের প্রচলিত পদ্ধতিতে বিশাল পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন করা হয়৷ বিশেষ করে ব্লাস্ট ফারনেসে সবচেয়ে বেশি নির্গমন ঘটে৷ কারণ কয়লা জ্বালিয়ে ১,৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রায় লৌহ আকরিক গরম করা হয়৷
কোম্পানি এবার সে ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে চাইছে৷ গোটা বিশ্বে জলবায়ুর জন্য ক্ষতিকর নির্গমনের প্রায় ছয় শতাংশের উৎস ইস্পাত উৎপাদন৷ এসএসএবি কোম্পানির মুখপাত্র লটা ইয়াকবসন বলেন, ‘‘লৌহ আকরিক ও কয়লা ব্যবহার করে ইস্পাত উৎপাদনের সময় আমরা অবশ্যই কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ঘটাই৷ সে কারণেই আমরা ব্লাস্ট ফারনেস সরিয়ে ‘হাইব্রিট' প্রক্রিয়া চালু করতে চাই৷''
ব্লাস্ট ফারনেসের কাছে একটি পরীক্ষামূলক কারখানা তৈরি করা হয়েছে৷ গোটা বিশ্বে এই প্রথম পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়ায় তৈরি হাইড্রোজেন কাজে লাগিয়ে ইস্পাত উৎপাদনের প্রচেষ্টা সফল হয়েছে৷ একটি জায়গায় ইস্পাত উৎপাদনের আগের পর্যায়ের পণ্য হিসেবে ছোট পেলেট মজুত করা হয়৷ লৌহ আকরিক থেকেই সেগুলি পাওয়া যায়৷ এক রোটারি ফারনেসে লৌহ আকরিকের পাথর পেলেটে রূপান্তরিত করা হয়৷
অন্য একটি প্রক্রিয়ায় পেলেটে লোহার মাত্রা আরো একবার বাড়ানো হয়৷ সেই লক্ষ্যে হাইড্রোজেনের সাহায্যে পেলেট গরম করে গলিয়ে দেওয়া হয়৷ ভাটেনফাল কোম্পানির মিকায়েল নর্ডলান্ডার বলেন, ‘‘আমরা এখানে এমন এক প্রযুক্তি পরীক্ষা করছি, যা ব্লাস্ট ফারনেসের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে৷ ব্লাস্ট ফারনেসে কয়লা ব্যবহার করা হয়৷ আর আমরা এখানে হাইড্রোজেনের সাহায্যে লৌহ আকরিক থেকে বিশুদ্ধ লোহা বার করি৷''
কোম্পানির গোপনীয়তার কারণে সেই প্রক্রিয়ার ছবি তোলা নিষিদ্ধ৷ কিন্তু এভাবে সেই প্রক্রিয়ার বর্ণনা দেওয়া যায়৷ সবার আগে পরিবেশবান্ধব ‘গ্রিন হাইড্রোজেন' উৎপাদন করা হয়৷ সেই লক্ষ্যে বায়ু বা সৌরশক্তির মতো পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি কাজে লাগানো হয়৷ ইলেকট্রোলিসিস প্রক্রিয়ায় পানি বিভক্ত করা হয়৷ তখন অক্সিজেনের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব উপায়ে হাইড্রোজেনও সৃষ্টি হয়৷
সেই হাইড্রোজেন হাইব্রিট ফারনেসে চালনা করা হয় এবং লৌহ আকরিকের পেলেটে লোহার মাত্রা আরো বাড়ানোর কাজে লাগানো হয়৷ তারপর দ্বিতীয় পর্যায়ে ইলেকট্রিক আর্ক ফারনেসে তরল ইস্পাত সৃষ্টি হয়৷ এই উদ্যোগ সফল হলে শিল্পজগতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে এবং নতুন যুগের সূচনা ঘটাবে৷
ইস্পাত কারখানায় পুরোপুরি এই নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে৷ ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব উপায়ে তৈরি বিদ্যুতের মাধ্যমে সব কাজ করা হবে৷ সব ফারনেস ও নতুন রোলিং মিল বিদ্যুতে চলবে৷
কয়েক বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হবার কথা৷ নতুন এই প্রযুক্তি অনেক পরিমাণ সিওটু নির্গমন কমাবে৷ তাছাড়া সবকিছু আরো দ্রুত ঘটবে৷ লটা ইয়াকবসন বলেন, ‘‘লৌহ আকরিক গলানো, ইলেকট্রিক আর্ক ওভেনে স্পঞ্জ আয়রন হয়ে আমাদের ক্রেতাদের পাঠানোর উপযুক্ত চূড়ান্ত কয়েল তৈরি করতে মাত্র তিন ঘণ্টার মতো সময় লাগবে৷''
বর্তমানে গোটা উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য কয়েক দিন সময় লাগে৷ নতুন প্রযুক্তির দৌলতে গ্রিন স্টিল ব্যয়ও কমাবে৷ চাহিদাও বেড়ে যাবে৷
ক্রিস্টিয়ান প্রিসেলিউস/এসবি