1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পরিবেশের ক্ষতি না করে লিথিয়াম উত্তোলনের চ্যালেঞ্জ

৩১ জানুয়ারি ২০২৩

ব্যাটারিচালিত গাড়ি পরিবেশের জন্য ভালো হলেও সেই ব্যাটারির জন্য প্রয়োজনীয় লিথিয়াম উত্তোলন, এমনকি রিসাইক্লিংও পরিবেশের ক্ষতি করে৷ ক্ষতি এড়িয়ে লিথিয়াম সংগ্রহের প্রক্রিয়া এখনো লাভবান হয় নি৷

https://p.dw.com/p/4MvKW
প্রতীকী ছবিছবি: Deutsche Lithium GmbH

ব্যাটারিচালিত গাড়ি পরিবেশের জন্য ভালো, তবে...

প্রাকৃতিক পরিবেশে লিথিয়াম সব সময়ে অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে মিশে থাকে৷ লিথিয়ামের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো সেটির মধ্যে একটি হালকা ইলেকট্রন রয়েছে৷ ফলে অন্য উপাদানের সঙ্গে লিথিয়াম সহজেই যুক্ত হয়৷ সেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা কঠিন৷

দক্ষিণ অ্যামেরিকায় পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম৷ বিশ্বের লিথিয়াম ভাণ্ডারের অর্ধেকের বেশি সেখানেই পাওয়া গেছে৷ হ্রদগুলির নীচে সাদা স্তরে লবণের সঙ্গে লিথিয়াম সংযুক্ত রয়েছে৷

সেই লিথিয়াম লবণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা অপেক্ষাকৃত সহজ৷ হ্রদের পানি পাম্পের সাহায্যে উপরে তুলে এনে বাষ্পীভূত করা হয়৷ সেই প্রক্রিয়ার শেষে লিথিয়াম ভরা একটা তাল অবশিষ্ট থাকে৷ তার মধ্যে বেশ কিছু বিষাক্ত রাসায়নিকও থাকে৷ সেই তাল থেকে লিথিয়াম বার করে নিতে হয়৷

তবে হ্রদ থেকে লবণাক্ত পানি পাম্প করার সময় আশেপাশের শুকনো এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি সেই শূন্যস্থান ভরাট করতে এগিয়ে আসে৷ মাঝারি মাপের একটি ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরির জন্য তিন থেকে বারো হাজার লিটার পানি নষ্ট হয়, যা ৮২টি পানি ভরা বাথটবের সমান৷ স্থানীয় চাষি ক্লেমেন্তে ফ্লোরেস মনে করেন, ‘‘এত কম সময়ে অতো পরিমাণ পানি বার করে নিলে আগামী পাঁচ বা ছয় বছরে এখানে পানির অভাবে মরুভূমি সৃষ্টি হবে৷ আমরা জানি, কত পরিমাণ পানি তোলা হচ্ছে৷ তখন আর শুধু  চাষাবাদ বা পশুপালন নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ থাকবে না, মানুষের বসতিই অসম্ভব হয়ে উঠবে৷'' 

ব্যাটারিচালিত গাড়ি পরিবেশের জন্য ভালো, তবে...

আমাদের ব্যাটারির জন্য সেটা এক বড় মূল্য বটে৷ প্রকৃতি সংরক্ষণকারীরা ইউরোপেও লিথিয়াম উত্তোলনের পরিণাম নিয়ে সম্প্রতি দুশ্চিন্তা করছেন৷ কারণ পর্তুগালের উত্তরে পাহাড়ি অঞ্চলে অদূর ভবিষ্যতে বড় আকারে এই মূল্যবান সম্পদ উত্তোলনের তোড়জোড় চলছে৷ সেই ভাণ্ডার গোটা ইউরোপের ব্যাটারির চাহিদা পূরণ করার জন্য যথেষ্ট৷

কিন্তু বারোসো অঞ্চলের মানুষ নিজেদের জমির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ পাউলো পিরেশ নামের আর এক চাষি বলেন, ‘‘এখান থেকে ২০০ মিটার দূরে খনির কাজ শুরু হবার কথা৷ এই বাড়িতে ঢুকলেই খনি দেখা যাবে৷ সেই খনি পানি নষ্ট করে দেবে এবং সব ধুলো এখানকার মাঠ ঢেকে দিয়ে ঘাস নিশ্চিহ্ন করে দেবে৷ পরিবেশের মান আর আগের মতো থাকবে না৷ পানি উধাও হয়ে যেতে পারে৷ এমনটা ঘটলে সবুজ ঘাসও আর গজাবে না৷''

অথচ ই-মোবিলিটির প্রচলন আরও বাড়ার কারণে লিথিয়ামের চাহিদাও বাড়ছে৷ এখনো পর্যন্ত ইউরোপকে লিথিয়াম আমদানি করতে হচ্ছে৷

নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগিয়ে চাহিদা পূরণের সম্ভাবনা ও কৌশল নিয়ে জার্মানিতেও গবেষণা চলছে৷ জার্মানির মাটিতে প্রায় ২৭ লাখ টন লিথিয়াম মজুত আছে, যা ইউরোপের সবচেয়ে বড় ভাণ্ডার৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশেও লিথিয়ামের ভাণ্ডার রয়েছে৷ সমস্যা হলো এই কাঁচামাল মজুত থাকলেও সেটির উত্তোলন হয় কঠিন, কিংবা ব্যয়বহুল৷

জার্মানিতে লিথিয়ামের বড় ভাণ্ডার রয়েছে৷ যেমন রাইন নদীর নীচে কয়েক হাজার মিটার গভীরে ফুটন্ত গরম পানির মধ্যে আবদ্ধ অবস্থায় সেই সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে৷

গবেষকরা জিওথার্মাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই সম্পদের নাগাল পেতে চান৷ এক ঢিলে দুই পাখি মারতে ভূগর্ভস্থ পানির সাহায্যে একদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, অন্যদিকে সেই পানি থেকে লিথিয়াম বার করে নেওয়াই সেই আইডিয়ার মূলমন্ত্র৷ ভালকান এনার্জি রিসোর্সেস সংস্থার কর্ণধার ড. রোব্যার্ট ক্রয়টার বলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ অ্যামেরিকা থেকে যে লিথিয়াম আমাদের কাছে আসে, তার তুলনায় আপার রাইন এলাকায় সম্পূর্ণ কার্বন নির্গমনহীনভাবে লিথিয়াম উৎপাদন করা হয়৷ সেই দুই জায়গায় উৎপাদন ও পরিবহণের কারণে বিশাল পরিমাণ সিওটু সৃষ্টি হয়৷''

শুনতে ভালো মনে হলেও এমন প্রচেষ্টার অর্থনৈতিক সার্থকতা আছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ রিসাইক্লিং আরও বাড়িয়ে আমদানির মাত্রা হয়তো কমানো যাবে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধাপে ধাপে রিসাইক্লিং বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে৷ তবে রিসাইক্লিং-এর মাধ্যমে লিথিয়াম পুনরুদ্ধারের জন্য অনেক পরিমাণ জ্বালানি ও রাসায়নিকের প্রয়োজন৷

তাই এখনো এমন প্রক্রিয়ার অর্থনৈতিক সার্থকতা নেই৷ মূল্যের হেরফের সত্ত্বেও দক্ষিণ অ্যামেরিকা থেকে লিথিয়াম আমদানির ব্যয় সে তুলনায় অনেক কম৷

গ্র্যুন্ডার/রিডেল/এসবি