পর্যটকদের চাপে বিপর্যস্ত যেসব প্রাকৃতিক বিস্ময়
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ থেকে অসাধারণ সুন্দর হিমবাহ অবধি বেশ কিছু স্থানে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে, কেননা অনেকেই সেগুলো হারিয়ে যাওয়ার আগে দেখতে চান৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকিতে রয়েছে অনেক প্রাকৃতিক বিস্ময়৷
অস্থায়ী সম্পদ
প্রতিবছর যে বিশ লাখ মানুষ গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ ভ্রমণ করেন, তাদের ৬৯ শতাংশই সেখানে যান এক বিশেষ উদ্দেশ্যে৷ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তারা হারিয়ে যাওয়ার আগেই দেখতে চান৷ আইপিসিসি জানিয়েছে, ভবিষ্যতে আমরা যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেও সীমাবদ্ধ রাখতে পারি, তাহলেও বিশ্বের ৯৯ শতাংশ কোরাল হারিয়ে যাবে৷
শ্বেত ভাল্লুকের রাজ্যে
প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিগুলো দেখতে যেতে কী পরিমাণ কার্বন নির্গমন হচ্ছে ভেবেছেন কখনো? ২০১০ সালের এক গবেষণায় দেখে গেছে ক্যানাডার চার্চিলে অবস্থিত শ্বেত ভাল্লুকের সাফারিতে পর্যটন ব্যবসার কারণে বছরে ২০ মেগাটন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন হচ্ছে৷ অধিকাংশ পর্যটক বিমানে করে সেখানে যান৷
বাড়ছে তাপমাত্রা, গলছে বরফ
হিমশৈলের বরফ গলে সৃষ্ট এমন প্রাকৃতিক ভাস্কর্য দেখে অনেকে মুগ্ধ হতে পারেন৷ কেউ কেউ আবার লাখ টাকা খরচ করে সেসবের কাছেও যান৷ গত শতকের নব্বইয়ের দশকের দিকে অ্যান্টার্কটিকায় বছরে পাঁচ হাজারের মতো পর্যটক যেতেন৷ এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬,০০০-এ৷ তবে হিমশৈলের এই করুণ দশা আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়তে থাকলে একসময় হয়ত তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না৷
ভরা মৌসুম
তবে হারিয়ে যেতে বসা বরফখণ্ড দেখতে আপনার মেরু অঞ্চলেই যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই৷ কিলিমাঞ্জারোর তুষারাবৃত্ত চূড়াও অনেকের প্রিয়৷ প্রতিবছর সেখান থেকে পর্যটন খাতের আয় হয় ৪৪ মিলিয়ন ইউরো৷ অনেকে আবার পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে ফ্যুর্টভেঙ্গলার গ্ল্যাসিয়ারে চলে যান৷ সেখানকার ৮৫ শতাংশ বরফ ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে, বাকিটাও হারিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে মনে হচ্ছে৷
মুকুটহীন রাজা
মন্টানার গ্লেসিয়ার ন্যাশনাল পার্ক ১৯১০ সালে যখন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়, তখন সেখানে একশো’র বেশি বরফের আকৃতি ছিল৷ এখন তা কমে দুই ডজনের মতো হয়েছে৷ অবস্থা এমন যে পার্কটি এখন জলবায়ু বিজ্ঞান গবেষণার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে৷ প্রতিবছর ত্রিশ লাখের মতো হাইকার এবং পর্যটক সেখানে ছুটি কাটাতে যান৷
হারিয়ে যাচ্ছে স্বর্গ
মালদ্বীপ হচ্ছে পর্যটকদের আদি স্বর্গ৷ সেখানকার সাদা সমুদ্রতটযুক্ত বারোশো কোরাল দ্বীপ পানি থেকে মাত্র আড়াই মিটার উচ্চতায় জেগে রয়েছে৷ তবে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশটি তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে৷ আর সেকথা শুনে পর্যটকদের সংখ্যা এত বেড়েছে যে ২০১৭ সালে দেশটির তৎকালীন রাষ্ট্রপতি নতুন একটি বিমানবন্দর নির্মাণ এবং পর্যটন খাত থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে দেশটির বাসিন্দাদের জন্য নতুন দ্বীপ তৈরি করতে চেয়েছিলেন৷