দোষী সাব্যস্ত লালুপ্রসাদ
১ অক্টোবর ২০১৩প্রায় ১৭ বছর পর গবাদি পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রীয় জনতাদলের সর্বময় কর্তা ও বর্তমান সাংসদ লালুপ্রসাদসহ ৪৫ জনকে দোষী বলে রায় দেয় রাঁচির কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর বিশেষ আদালত৷ সাজা ঘোষণা করা হবে ৩রা অক্টোবর৷ সাজা হিসেবে দোষীদের দুই থেকে সাত বছর জেল হতে পারে৷ এই সাজার ওপর নির্ভর করছে ৬৬ বছর বয়সি লালুপ্রসাদের সাংসদ তথা রাজনৈতিক ভবিষ্যত৷
সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায় অনুসারে সাজা যদি দু'বছর বা তার বেশি হয় তাহলে লালুপ্রসাদকে তাঁর সাংসদ পদ খোয়াতে হবে এবং আগামী ছয় বছর আর কোনো নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না তিনি৷ শীর্ষ আদালতের এই রায় খারিজ করে দিতে মনমোহন সিং সরকার বিশেষ সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে তড়িঘড়ি অর্ডিন্যান্স পাস করলে রাষ্ট্রপতি তা আটকে দেন৷ কংগ্রেস তরুণ সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী পর্যন্ত এই অর্ডিন্যান্সকে বাজে কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দেবার কথা বলেন৷ কংগ্রেসের একাংশ মনে করেন, সাজাপ্রাপ্ত সদস্যদের বাঁচানোর অর্থ গণতন্ত্রের সর্বনাশ ডেকে আনা৷
অর্ডিন্যান্স সম্পর্কে দলের সহ-সভাপতির যদি এই অবস্থান হয়, তাহলে সরকার কেন এই অর্ডিন্যান্স আনতে গেলেন? পর্যবেক্ষকদের ধারণা, লালুপ্রসাদকে বাঁচাতেই৷ কারণ লালুপ্রসাদ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর বিশ্বাসভাজন এবং ঘনিষ্ট৷ বিপদে আপদে সংসদের ভেতরে-বাইরে দলের চারজন সাংসদ নিয়ে আরজেডি প্রধান সর্বদাই সরকারের পাশে থেকেছেন৷ লালুপ্রসাদের আরজেডি দলের ভবিষ্যত অনিশ্চিতের মুখে পড়ায় বিহার ও ঝাড়খন্ডে কংগ্রেস আঁতাতের ওপর কী প্রভাব পড়বে? হয়ত নতুন আঁতাতের সম্ভাবনা বিহারের শাসকদল নীতীশ কুমারের সংযুক্ত জনতা দলের সঙ্গে৷ লালুপ্রসাদের প্রতিদ্বন্দ্বী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার হালে মোদী ইস্যু নিয়ে বিজেপি-জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে৷ ২০১৪ সালের সংসদীয় ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক করমর্দন সম্ভাবনা নিয়ে তাই রাজনৈতিক অলিন্দে জোর জল্পনা৷
কী হয়েছিল এই কেলেঙ্কারিতে? ১৯৯৬ সালে অবিভক্ত বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন লালুপ্রসাদ ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে গবাদি পশুর খাদ্য ও ওষুধ-পত্র কেনার নামে ভুয়ো বিল দিয়ে বেআইনিভাবে চাঁইবাসা সরকারি ট্রেজারি থেকে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা তুলে সেই টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে৷ সমগ্র দুর্নীতি কাণ্ডে প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা জড়িত৷ পাটনা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত শুরু কোরে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো ৯৭ সালে গ্রেপ্তার করে লালুপ্রসাদকে৷ হাজতে যাবার আগে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসিয়ে যান তিনি তাঁর স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও৷ কারণ ক্ষমতার হাল স্ত্রীর হাতে দিয়ে জেলখানার ভেতরে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়তে পারতেন৷ পরে অবশ্য তিনি জামিন পান৷