1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গ কি এখন সন্ত্রাসবাদের ট্রানজিট রুট!

২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সম্প্রতি আসামে গ্রেপ্তার হয়েছে আট সন্ত্রাসী। পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেপ্তার পাকিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী। কেন উত্তর-পূর্ব ভারতকে ট্রানজিট রুট বলা হচ্ছে?

https://p.dw.com/p/4oVKE
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ
কলকাতা পুলিশের এসটিএফ টিমছবি: Debajyoti Chakraborty/NurPhoto/IMAGO

শনিবার গভীর রাতে কলকাতা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে ক্যানিং থেকে এক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের অফিসারেরা। ধৃতের নাম জাভেদ মুন্সি। এর আগেও একাধিকবার সন্ত্রাসী কাজকর্মের অপরাধে জম্মু-কাশ্মীরে গ্রেপ্তার হয়েছে জাভেদ। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়েই ক্যানিংয়ে জাভেদের খোঁজে তল্লাশি চালায় স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। শেষ পর্যন্ত পুলিশের জালে ধরা পড়ে সে। পুলিশ জানিয়েছে, জাভেদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ নথি মিলেছে। যা দেখে মনে করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে, নেপাল ঘুরে পাকিস্তান যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল জাভেদের।

পুলিশ জানিয়েছে, ধরমপুর থেকে দিল্লি হয়ে শুক্রবার কলকাতায় পৌঁছান জাভেদ। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় একটি বাড়িতে গিয়ে ওঠে সে। বস্তুত, এক কাশ্মীরী শালওয়ালা ওই বাড়িটিতে থাকতেন। জাভেদ তার পরিচিত। ওই শালওয়ালার মাধ্যমেই বাড়িটি ভাড়া করেছিল সে।

সন্ত্রাসবাদীদের বাংলাদেশ-যোগ

এদিকে কেরালায় আরেক সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে সেখানকার স্থানীয় পুলিশ। ওই সন্ত্রাসী পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ায় ডেরা বানিয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ধৃতের নাম শাব আলি। পুলিশ জানিয়েছে, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লা বাংলা টিম বা এবিটি-র সদস্য ওই শাব আলি। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা মিনারুল শেখ এবং আব্বাস আলির মাধ্যমে শাব আলি পশ্চিমবঙ্গে জাল ছড়ানোর চেষ্টা করছিল বলে পুলিশের দাবি। মিনারুল এবং আব্বাসকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, শাবের বাবা মুর্শিদাবাদের লোক। বছর চল্লিশেক আগে তিনি বাংলাদেশে চলে যান। শাবের জন্ম এবং বড় হয়ে ওঠা বাংলাদেশে। তবে মুর্শিদাবাদে এখনো তার পরিবার-পরিজন আছেন। তাদের সূত্রেই মুর্শিদাবাদে নিজের জাল তৈরি করছিল সে।

আসাম থেকে গ্রেপ্তার

গত সপ্তাহেই আসাম থেকে আটজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে আসাম পুলিশ। সেখানেও একজন বাংলাদেশের নাগরিক আছে। আসামের গ্রেপ্তার হওয়া সন্ত্রাসীদের কাছ থেকেও পুলিশ জানতে পেরেছে, পাকিস্তানের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। পাকিস্তান যাওয়ারও পরিকল্পনা ছিল তাদের।

উত্তর-পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম সীমান্ত বরাবরই ট্রানজিট রুট হিসেবে চিহ্নিত। এই সীমান্ত দিয়ে একদিকে যেমন বাংলাদেশ ঢুকে পড়া যায়, তেমনই নেপাল এবং ভুটানের খোলা সীমান্ত ব্যবহার করে অন্য দেশে গা ঢাকা দেওয়া যায়। অতীতেও এই সীমান্ত ব্যবহার করেছে সন্ত্রাসীরা। সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ফের এই রাস্তা ব্যবহার করতে চাইছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলি, এমনটাই মনে করছে পুলিশ।

কলকাতা পুলিশের এক অফিসার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলি থেকে নানা খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারই ভিত্তিতে মুর্শিদাবাদ এবং ক্যানিংয়ে অভিযান চালানো হয়েছিল। আরো অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।''

সাবেক আইপিএস অফিসার সন্ধি মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''এক সময় পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত খুব সহজেই পারাপার করতে পারতো সন্ত্রাসীরা। কারণ, সীমান্তে কাঁটাতার ছিল না। কাঁটাতার লাগানোর পর এবং ভিজিলেন্স বাড়ানোর পর এই প্রবণতা কিছুটা কমেছিল। ইদানীং আবার তা বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে।'' বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি একটি বড় কারণ বলেই মনে করেন সন্ধি।

ভারতীয় সেনার সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্যও সন্ধির সঙ্গে সহমত। তার বক্তব্য, ''পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম সীমান্তে প্রচুর স্লিপিং সেল ছড়িয়ে রাখা আছে। সম্প্রতি সেগুলি আবার অ্যাক্টিভ করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত যে গ্রেপ্তারগুলি হয়েছে, তা থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়।'' উৎপলের মতে, পাকিস্তান সীমান্তে সেনার টহল নিশ্ছিদ্র হওয়ার ফলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি আবার পূর্বের সীমান্ত ব্যবহার করতে চাইছে। সে কারণেই কাশ্মীরের সন্ত্রাসীও পশ্চিমবঙ্গে ঘাঁটি গাড়ছে। এবং এই সমস্ত ঘটনার মধ্যেই একটি যোগসূত্র আছএ বলে তিনি মনে করেন।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই)