1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গে অমিত শাহর ভার্চুয়াল জনসভা

৫ জুন ২০২০

করোনা ও আমফান বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গে সভা করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে ব্রিগেডে বা অন্য কোনও খোলা মাঠে নয়। অমিত শাহের সভা হবে ভার্চুয়াল।

https://p.dw.com/p/3dImT
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Kumar

করোনা পরবর্তী সময়ে প্রচারের পদ্ধতিটাই পুরোপুরি বদলে যাচ্ছে। এখন আর বড় বা ছোট মাঠে জমায়েত করে জনসভা নয়। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ভার্চুয়াল সভা। যেমন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ করবেন আগামী মঙ্গলবার, পশ্চিমবঙ্গে। অমিত শাহ অবশ্য থাকবেন দিল্লিতে দলের সদর দফতরে। তাঁর ভাষণ লাইভ দেখা যাবে ফেসবুক এবং ইউটিউবে। বিজেপির রাজ্য নেতারাও সেখানে বলবেন।

প্রকাশ্য জনসভা হলে যেমন অধিকাংশ ক্ষেত্রে লোককে মাঠে আনার ব্যবস্থা করতে হয়, ভার্চুয়াল জনসভায় তেমনই লোককে দেখানোর ব্যবস্থা করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিজেপি। সে জন্য শুরু হয়েছে প্রচার। একেবারে বুথ পর্যায়ের কর্মী থেকে রাজ্যের ওপরতলার নেতা পর্যন্ত সকলে এই ব্যবস্থাপনায় আছেন। ভার্চুয়াল সভায়সুবিধা বা অসুবিধা হলো, লাইভ একসঙ্গে কতজন দেখছেন তা দেখা যায়। লাইভ শেষ হওয়ার পর সবমিলিয়ে কতজন দেখলেন, সেটা জানাও কষ্টকর নয়। তাই দর্শক টানতে প্রাণপাত করছেন বিজেপির রাজ্য নেতারা। সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্যে ৬৫ হাজার বুথ আছে। প্রতিটি বুথে অন্তত ১০০ জন যাতে এই ভার্চুয়াল সভায় থাকেন, তার জন্য বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া অন্য রাজ্য ও বিদেশে বসবাসকারী বাঙালিদের কাছেও পৌঁছতে চাাইছেন তাঁরা। তাঁদের টার্গেট, অন্তত এক কোটি লোক যাতে অমিত শাহর সভা দেখেন, তার ব্যবস্থা করা। বিজেপি নেতা সৌরভ সিকদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''আমরা বুথ পর্যায় থেকে কর্মীদের বলেছি, সকলে যেন সভা লাইভ দেখেন।''

ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে পানির নীচে কলকাতার রাস্তাঘাট, ক্ষতচিহ্ন সর্বত্র

করোনার কারণে দেশ জুড়ে রাজনৈতিক সহ যে কোনও ধরনের জমায়েত বন্ধ। আগামী সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে আনলক ১ বা লকডাউন তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া। তাতেও সামাজিক দূরত্ব পালন করাটা বাধ্যতামূলক। এই অবস্থায় ভার্চুয়াল জনসভাতেই যেতে হবে। বিজেপি সেই কাজটা শুরু করে দিলো। এখন কেন্দ্রীয় সরকার, দিল্লিতে রাজনৈতিক দলগুলি সবাই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাংবাদিক সম্মেলন করে। সনিয়া গান্ধী কিছুদিন আগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিরোধী দলগুলির নেতাদের নিয়ে বৈঠক করলেন। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকও হচ্ছে ভার্চুয়াল। এমনকী অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মোদী ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠকও সেরে ফেলেছেন। বোঝা যাচ্ছে, রাজনীতি ও সংবাদের দুনিয়ায় ভার্চুয়াল সভা, বৈঠক  সম্মেলনই এখন ভবিতব্য। 

তৃণমূলের রাজ্যসভার চিফ হুইপ সুখেন্দু শেখর রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, করোনার পর দেখা যাচ্ছে, গোটা বিশ্বই আরো বেশি করে প্রযুক্তি-নির্ভর হয়ে পড়েছে। সাবেকি প্রচারের যে ধরণ ছিলো, তা থেকে এ বার অনেকটা সরে আসতে হতে পারে। তবে আপাতত আমরা ঠিক করেছি, আগে করোনা ও আমফানের ফলে দুর্গত লোকেদের পাশে দাঁড়াতে হবে। শাসক দল হিসাবে আমাদের রাজনৈতিক প্রচারও করতে হবে, তবে করোনার সঙ্গে আপস করে হবে না।

অবশ্য অমিত শাহের এই ভার্চুয়াল সভা নিয়েও জোরদার বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃমমূল প্রশ্ন তুলেছে, করোনার সময়ে আমফানে বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক প্রচার কেন শুরু করা হচ্ছে? রাজ্য অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তখন আগামী বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এখনই প্রচার শুরু করাটা কি খুব জরুরি? সুখেন্দু শেখর রায়ের বক্তব্য, ''এটা অমানবিক কাজ। সারা দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক কাজ বন্ধ। অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থা। পশ্চিমবঙ্গে করোনা ছাড়া আমফানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যের অবস্থা ভালো জায়গায় নেই। তখন রাজনৈতিক প্রচার একেবারেই কাম্য নয়।'' 

রাজ্য বিজেপি-র সহ সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''তৃণমূলের সমালোচনা অর্থহীন। এটা রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। করোনা ও আমফান নিয়ে সাধারণ কর্মীরা যাতে আরও উদ্বুদ্ধ হতে পারেন, তার জন্য এই সভার আয়োজন করা হয়েছে।  আর রাজনীতি তো তৃণমূল করছে। ওরা বিজেপির কর্মীদের রাস্তায় নামতে দিচ্ছে না। বিজেপি কর্মীরা রাস্তায় নামলে হয় গুন্ডা দিয়ে পেটানো হচ্ছে বা প্রশাসন গ্রেপ্তার করছে।''

বিজেপি সূত্রে খবর, অমিত শাহের পুরো ভাষণই হবে পশ্চিমবঙ্গকেন্দ্রিক। রাজ্যে জনসভায় তিনি যে ভাবে ভাষণ দিতেন, সেভাবেই রাজ্যের বিষয় নিয়ে বলবেন। 

কংগ্রেসের বক্তব্য, একটা রাজনৈতিক দলের এক শীর্ষনেতার সভা মানে তো সেখানে রাজনীতির কথা আসবেই। বিরোধী ও শাসক দলের সমালোচনা করা হবে। লোকের কাছে একটা বার্তা দেওয়ার জন্যই এটা করা হচ্ছে। আর বিজেপি করোনাকালেও রাজনীতি থামায়নি। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের সরকার ফেলা হয়েছে। গতকালই গুজরাটে দুই জন কংগ্রেস বিধায়ককে ভাঙিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কারণ, রাজ্যসভা নির্বাচন আসছে। সেখানে তাঁদের সমর্থনে বিজেপি-কে জিততে হবে। সনিয়া গান্ধীর দলের অভিযোগ, এই সঙ্কটসময়েও সমানে রাজনীতি করছে বিজেপি। 

 

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷