পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের আকাল
৮ জুলাই ২০১৯আষাঢ় মাস শেষ হতে চলল, অথচ বর্ষার দেখা নেই৷ এমনকি ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিও হচ্ছে না, যে বৃষ্টিতে মোহনা থেকে ইলিশ মাছের ঝাঁক উল্টো সাঁতার দিয়ে নদীতে আসে ডিম ছাড়তে৷ ছোট মাপের ইলিশ, অর্থাৎ খোকা ইলিশ ধরার ওপর ওদিকে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকারি মৎস্য দপ্তর৷ সে অবশ্য ইলিশ মাছ বাঁচাতেই৷ এদিকে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকেও ইলিশের জোগান নেই৷ ফলে বাজারে এখনো ইলিশ মাছের দেখা নেই, যেটুকু আসছে, সবই আকারে ছোট, ওজনে কম৷ অথবা কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষিত পুরনো মাছ, যা খেতে বিস্বাদ৷
প্রাকৃতিক কারণ ছাড়াও বাংলাদেশের ইলিশ আসা বন্ধ হয়ে যাওয়া এই আকালের অন্যতম বড় কারণ৷ বলছেন কলকাতা শহরের মাছ বিক্রেতারা৷ গড়িয়াহাট অঞ্চলের বড় মাছ ব্যবসায়ী ভরত সর্দার৷ প্রতিবছর ইলিশের খোঁজে তাঁর দোকানে ভিড় জমান ক্রেতারা৷ এবার খুব কমই ইলিশ বিক্রি করেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে জানালেন, মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দু-এক বছর পর থেকেই বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আসা বন্ধ হয়েছে৷ কারণ, তিস্তার জল বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগ করতে রাজি না হওয়া৷ এই বিক্রেতারা রীতিমতো খোঁজখবর রাখেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনা হওয়া সত্ত্বেও সমস্যার সুরাহা হয়নি৷ কারণ, প্রধানমন্ত্রী হাসিনা স্পষ্ট বলেই দিয়েছেন, তিস্তার জল না পেলে ইলিশ মাছও আসবে না৷
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও সম্প্রতি নিজের অপারগতার কথা জানিয়েছেন যে, তিস্তার জল যথেষ্ট নেই বলেই তিনি দিতে পারছেন না৷ নয়ত বাংলাদেশ বন্ধু দেশ, তাদের জলের ভাগ দিতে কোনো অসুবিধেই ছিল না৷ ইলিশ মাছ না থাকার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাসের সুরে বলেছেন, আগামী দিনে সারা বিশ্বকে ইলিশ মাছ খাওয়াতে পারবে পশ্চিমবঙ্গ৷ ডায়মন্ড হারবারে রাজ্য মৎস্য দপ্তরের যে ইলিশ সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র আছে, সেখানে কাজ চলছে৷ খুব শিগগিরই পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের ঢালাও ফলন হতে শুরু করবে৷
ঠিক কী হচ্ছে ওই মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রে? কেন্দ্রীয় মৎস্য পালন দপ্তরের ভূতপূর্ব মুখ্য বিজ্ঞানী ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় বিস্তারিত জানালেন ডয়চে ভেলেকে৷ জানালেন, একটা সময় যেমন ধারণা ছিল, ইলিশ মাছ জীবন্ত অবস্থায় দেখাই যায় না, এখন কিন্তু সেই ইলিশ মাছই চাষ করা হচ্ছে মিষ্টি জলের পুকুরে৷ একেবারে ছোট অবস্থায় ইলিশের পোনা এনে পুকুরে ছাড়া হলে এবং তাদের নিয়মিত দেখভাল হলে মিষ্টি জলেই দিব্যি বড় হচ্ছে ইলিশ মাছ৷ তবে প্রাকৃতিক পরিবেশে মাছের পেটে যে ডিম হয়, এখনও সেভাবে তার লক্ষণ দেখা যায়নি৷ তবে গবেষণা চলছে৷
কিন্তু মিষ্টি জলে বেড়ে ওঠা নোনা জলের মাছ কি স্বাদে, গন্ধে আসল ইলিশ মাছের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে? এই প্রশ্নের জবাবে ড. মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ইলিশ মাছের স্বাদ নির্ভর করে তার শরীরে দুই ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিডের উপস্থিতির ওপর৷ এই দুটি ফ্যাটি অ্যাসিড মানব শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে৷ কিন্তু এখন মাছের স্বাদ, বা গন্ধ নিয়ে বিজ্ঞানীরা ভাবছেন না৷ বরং বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে মাছের প্রজনন হারের ওপর৷ সাধারণভাবে একটি মাছের ডিম থেকে কয়েক লক্ষ পোনা জন্ম নিতে পারে৷ তার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০% পোনা বেঁচে থাকে৷ কিন্তু সেই পরিমাণটাই এত বেশি যে, যাঁরা মাছ চাষ করেন, তাঁদের পুষিয়ে যায়৷ আপাতত চেষ্টা হচ্ছে ইলিশ মাছের প্রজননের ক্ষেত্রে সেই সাফল্য পাওয়ার৷ তা যদি সম্ভব হয়, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, বাস্তবেও সেটা সম্ভব হবে৷ কাজেই হতেই পারে, অদূর ভবিষ্যতে বাংলার ইলিশ মাছ বিশ্ব বাজারে গিয়ে পৌঁছালো৷