1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে সমাধান হলে সবার জন্য ভালো'

সমীর কুমার দে (ঢাকা)
২৮ জুলাই ২০২৩

সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ

https://p.dw.com/p/4UVgM
বাংলাদেশে প্রায়ই শিক্ষকদের আন্দোলন করতে দেখা যায়। এবার ১৫ দিন ধরে রাজপথে বসে আছেন শিক্ষকেরা। কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশে প্রায়ই শিক্ষকদের আন্দোলন করতে দেখা যায়। এবার ১৫ দিন ধরে রাজপথে বসে আছেন শিক্ষকেরা। কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। ছবি: Mortuza Rashed/DW

বাংলাদেশে প্রায়ই শিক্ষকদের আন্দোলন করতে দেখা যায়। এবার ১৫ দিন ধরে রাজপথে বসে আছেন শিক্ষকেরা। কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষকদের এই আন্দোলনের সমাধান কীভাবে হতে পারে? শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া কতটা যৌক্তিক? সরকারই বা কতটা আন্তরিক? এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।

ডয়চে ভেলে : শিক্ষকেরা যে বারবার আন্দোলন করেন, কারণ কী? তারা কী বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নামেন?

অধ্যাপক নেহাল আহমেদ : তাদের তো কিছু প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বিষয় আছে। এটা বাংলাদেশের সব শিক্ষকেরই আছে। দাবি দাওয়া নিয়ে তারা আন্দোলন করবেন এটা তো তাদের অধিকারও। বর্তমান সময়টা সবচেয়ে বড় সংকট। শুধু বাংলাদেশ না, সারা বিশ্বেই অর্থনৈতিকভাবে টালমাটাল অবস্থা। যে সময়টাতে তারা জাতীয়করণের দাবি করছে, তাদের হয়ত যুক্তি আছে, কিন্তু সরকারের সক্ষমতাও তো বুঝতে হবে। তারা যে হিসাব দিয়েছে তার সঙ্গে আমাদের হিসাবের অনেক ফারাক। এখানে বড় অংকের একটা টাকার বিষয় আছে। এখানে কিন্তু শিক্ষকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কেউ বলছে, সবাইকে জাতীয়করণ করতে হবে। আবার কেউ বলছে, আলাদাভাবে করতে হবে। এইসব কারণে দুইটা কমিটি করার কথা বলা হয়েছে। কারণ ভবিষ্যতে যদি করতেও হয় তাহলে কোনো প্রক্রিয়ায় এটা হবে। আসলে সবকিছুর উপরে সরকারের সক্ষমতা। এখানে কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষক আছে, অনুমোদনহীন শিক্ষক আছেন, এর বাইরে সরকারি বেসরকারি তো আছেই। এর মধ্যে বিসিএস আছে, নন বিসিএস আছে, এনটিএমসির মাধ্যমে, পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকও আছে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে। সবকিছু মিলিয়ে একটা জটিল অবস্থা। পর্যালোচনা ছাড়া সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।

আসলে সমস্যাটা কী আপনারা খুঁজে বের করেছেন?

এই সমস্যা খোঁজার জন্য আমরা একটা ওয়ার্কশপের কথা বলেছি। ওই ওয়ার্কশপে শিক্ষক নেতা যারা তারাই অংশ নেবেন। তারাই প্রস্তাবনা তৈরি করে সরকারের কমিটির কাছে উপস্থাপন করবেন। এরপর কমিটি সেটা পর্যালোচনা করে এবং শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত প্রস্তাবনা তৈরি করবেন। সেটাই সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে। এটা তো একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। এটা না করে যদি সরকার যোষণা দিয়ে দেয় সব সরকারি করা হল, সেটা কী যৌক্তিক? এখানে সক্ষমতার বিষয় আছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ। সেই কারণেই কিন্তু ওয়ার্কশপের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

আন্দোলনের মধ্যেই শিক্ষকদের অনুপস্থিতি দেখে শোকজ করা হচ্ছে। এটা কতোটা যৌক্তিক?

এটা কিন্তু প্রতি মাসেই হয়। প্রতি মাসেই আমরা দেখেছি ২০-২৫ জন শিক্ষক অনুমোদনহীনভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকেন। এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়। অনেকে মনে করছেন, এটা আন্দোলনের কারণে। কিন্তু ব্যাপারটা তা না। নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ।

এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বৈষম্য কতটুকু?

সরকারি স্কুলের শিক্ষক যারা তাদেরও কথা আছে। এই কারণেই তো ওয়ার্কশপের আয়োজনের কথা বলছি। ধরেন সরকার আজকে সবাইকে সরকারিকরণ করল তারপর কার কী অবস্থান হবে? সেটাও তো নির্ধারণ করতে হবে। আবার যারা পিএসসির মাধ্যমে এসেছে তারা বলছে, সবাইকে যদি এক করে ফেলেন তাহলে আমরা যে পিএসসি পাশ করে এলাম এর তো মূল্য থাকলো না। এই ধরনের বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন আছে। এগুলো সমাধানের জন্য যৌক্তিকভাবে বসতেই হবে। হুট করে সব সরকারি কর- এ কথা বলা কী সম্ভব? সরকারি যদি করতেও হয় তাহলেও একসঙ্গে তো সম্ভব না, ধাপে ধাপে করতে হবে। গত দুই তিন বছরে ছয় শতাধিক স্কুল-কলেজ সরকারি হয়েছে। এটা তো নীতিমালার আওতায় হয়েছে। আমাদের শিক্ষা নীতিতে ছিল প্রতিটি উপজেলায় একটি স্কুল ও একটি কলেজ সরকারি হবে, সেই আলোকে হয়েছে। ফলে এখনও কিছু করতে হলেও নীতিমালা করেই করতে হবে।

পর্যালোচনা ছাড়া সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন: অধ্যাপক নেহাল আহমেদ

যেখানে স্কুলের প্রয়োজন নেই, সেখানেও গড়ে উঠেছে স্কুল, আপনারা এগুলোর অনুমোদন কেন দেন?

নীতিমালার বাইরে অতীতে অনেক চর্চা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই যতটা না শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার চেয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে। এটা তো সত্যি। অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সেগুলোকে একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আনার চেষ্টা হচ্ছে। আমি যখন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলাম তখন ২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কেন? একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শর্ত হল, নিজস্ব জায়গা-জমি থাকতে হবে। নিজস্ব অবকাঠামো থাকতে হবে। ভাড়া বাড়িতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয় না। সেই প্রক্রিয়া চলমান। অনেকগুলোকেই ধরা হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানকে ছয় মাস, এক বছর সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শর্ত পূরণ করতে না পারলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এগুলো আগে হয়নি, এখন হচ্ছে। আমাদের অনেক সংকট আছে, সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

জনসংখ্যার অনুপাতে বাংলাদেশে যে পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকার কথা, তার চেয়ে বেশি না কম আছে?

আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মাধ্যমিকে যখন আমরা ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করি সেখানে আমাদের যে সিট সংখ্যা তার চেয়ে ছাত্র সংখ্যা অনেক কম। কোনো কোনো বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি থাকে, সেটা ঠিক কিন্তু সব মিলিয়ে সিট সংখ্যা বেশি। এই হিসেবে বলব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কম না। একটু বেশিই হবে। এটা এক দিক দিয়ে ভালো, কারণ আমাদের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার জন্য সিট পাবে না, সেটা তো ভালো হতো না।

নির্বাচন সামনে রেখে কী দাবি আদায় করতে সুবিধা হয়, যে কারণে এই আন্দোলন থামছে না? আপনি কী মনে করেন?

আমি তো সরকারি চাকরি করি, ফলে এই প্রশ্ন আমার কাছে না করে রাজনীতিবিদদের কাছে করাই ভালো।

শিক্ষকদের এই আন্দোলনের ফলে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হল, সেটা কীভাবে পোষাবেন?

আন্দোলন অবশ্যই আমরা করব। আমাদের সেই অধিকার আছে। আমাদের অনেক অপ্রাপ্তি আছে। আমি শিক্ষক হিসেবে বলছি, একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, দাবি আদায়ের জন্য আমি ছাত্রদের জিম্মি করতে পারি না। আমাদের নতুন কারিকুলামে প্রতিদিনের কাজ সুনির্দিষ্ট করা আছে। করোনার সময় আমাদের বিশাল শিখন ঘাটতি রয়ে গেছে। সেটাই এখনও আমরা পূরণ করতে পারিনি। এই আন্দোলনের ফলে আমাদের কারিকুলাম বিশাল প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে গেছে। আমরা আদৌ এটা শেষ করতে পারব কিনা? এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি যার হবে সেটা হল শিক্ষার্থীরা। সরকার যেহেতু সাড়া দিয়েছে, তাই আমাদের শিক্ষক ভাইদের উচিৎ হবে দ্রুত ক্লাসে ফিরে গিয়ে কারিকুলামে মনোযোগ দেওয়া। এখন আমাদের একটা দিনও নষ্ট করার সময় নেই।

শিক্ষকদের এই আন্দোলনের সমাধান কীভাবে হতে পারে?

সবাইকে যৌক্তিক হতে হবে। বুঝতে হবে সরকারের সক্ষমতা কতটুকু। সরকারের যারা দায়িত্বে আছেন তাদেরও শিক্ষকদের দাবি দাওয়াগুলো বুঝতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে পারস্পারিক আস্থার ভিত্তিতে সমাধান করা গেলে সেটাই হবে সবার জন্য ভালো।