1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বর্ণনায় নির্যাতনের ভয়াবহতা

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাতের কারণে নির্যাতনের মুখে আবারো বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন রোহিঙ্গারা৷ রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে কীভাবে হামলা চালানো হচ্ছে তা জানালেন পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা৷

https://p.dw.com/p/4ky5h
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে পাহারারত এক বিজিবি সদস্য
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেনছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

তাদের একজন সাঈদ৷ তিনি গত মাসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন৷ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে তাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ নিরাপত্তার স্বার্থে ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন সাইদ৷

মিয়ানমারের সেনাদের পক্ষে যুদ্ধে সাইদ একা নন৷ হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে জোর করে যুদ্ধে যোগদান করানো হয়েছে৷ 

আর এর ফল ভোগ করছে মিয়ানমারে অবস্থানরত পুরো রোহিঙ্গা গোষ্ঠী৷ কারণ, সেনাবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে করতে যাওয়ায় বিদ্রোহীরা তাদের উপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে৷ ফলে আবারো হাজার হাজার রোহিঙ্গা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন৷

বাংলাদেশে পালিয়ে এসে বার্তা সংস্থা এএফপিকে সাইদ জানান, সেখানকার মানুষদের (রোহিঙ্গা) উপর নির্যাতন চলছে৷

‘‘আমি নিজের চোখে তা দেখে এসেছি৷ অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন অনেকে৷ সবাই নিজের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত৷''

গত জুন মাসে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় একটি সশস্ত্রগোষ্ঠী তাকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ধরে নিয়ে যায়৷ স্বাধীনতার দাবিতে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছে আরাকান আর্মি৷

সাইদসহ যুদ্ধে যোগ দেওয়া অন্য রোহিঙ্গার কাজ ছিল জিনিসপত্র আনা-নেওয়া করা, বাংকার খনন, সেনাবাহিনীর জন্য পানি সরবরাহ করা ইত্যাদি৷

সাইদ বলেন, ‘‘তারা আমাদের কোনো প্রশিক্ষণ দেয়নি৷ সেনারা পুলিশ স্টেশনের ভেতরে অবস্থান করে৷ বাইরে বের হয় না৷''

একপর্যায়ে সেখানকার একটি মুসলিমপ্রধান গ্রামের পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে৷ সেখান থেকে পালিয়ে আসেন সাইদ৷

বাংলাদেশ সরকারের এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য মতে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তীব্র সংঘাত শুরু হলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন

‘চারদিকে মরদেহ'

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে অন্তত দুই হাজার রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ আর এই রোহিঙ্গারা বলছেন, সশস্ত্রগোষ্ঠীরা তাদের জোর করে নিয়ে গেছে৷ বলা হয়েছে, জান্তার পক্ষে যুদ্ধে যোগ দিলে তাদেরকে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে৷

তবে কক্সবাজারের ক্যাম্পে সক্রিয় দুটি সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) বলছে, তারা কাউকে জোর করে যুদ্ধে নিয়ে যায়নি৷

আরএসও-এর সিনিয়র নেতা কো কো লিন বলেন, ‘‘আমরা কখনোই কাউকে আমাদের জন্য বা অন্যদের জন্য জোর করে নিয়ে যাইনি৷''

এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মি উভয়ই সংঘাতের সময়ে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে৷

অন্য অধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করতে নিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের উপর আরাকান আর্মি প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে৷

তবে মানবাধিকার সংগঠন ফর্টিফাইড রাইটস জানায়, বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি ড্রোন ও মটর হামলা চালিয়ে সীমান্তে একশ রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষকে হত্যা করেছে৷ শুধু তাই নয়, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা রোহিঙ্গারাও আরাকান আর্মিকে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করছে

যদিও আরাকান আর্মি সাধারণ রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে এমন হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷

চলতি মাসের শুরু দিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন ২২ বছরের মোহাম্মদ জোহার৷ তার বোনের স্বামীকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিলেন তিনি৷ এসময় হামলায় নিতহ হন তার বোনের স্বামী৷ জোহারের দাবি, আরাকান আর্মির ড্রোন হামলায় এই নিহতের ঘটনা ঘটেছে৷

‘‘সবখানে মৃতদেহ পড়ে আছে৷ নদীর পাড়েও মৃতদেহ পড়েছিল,''  জানান তিনি৷

জোহার আরো বলেন, ‘‘সেখানে আরাকান আর্মি খুব শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে৷ মিয়ানমার সেনারা পেরে উঠছে না৷ তারা একে উপরের উপর বোমা হামলা করছে৷কিন্তু মুসলিমেরা মারা যাচ্ছেন৷''

‘আমাদের সামর্থ্যের বাইরে'

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়৷ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এরইমধ্যে অর্থনীতি ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ সরকার৷ এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে রোহিঙ্গাদের আগমনকে নেতিবাচকভাবেই দেখছে দেশটি৷

বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘আমরা দুঃখিত, কিন্তু আর কাউকে জায়গা দেওয়া আমাদের সামর্থ্যের বাইরে৷''

কিন্তু মিয়ানমারে থাকা প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গার উপর চলা আক্রমণে অসহায় গোষ্ঠীটি৷ নতুন করে যারা আসছেন তারা বলছেন, সীমান্ত পাড়ি দেওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো পথ নেই

নিজের মেয়েকে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসা বিবি ফাইজা জানালেন, ‘‘মৃতদেহ দেখে আমরা ভয় পেয়েছি যে, আমাদের উপর হামলা আসছে৷ এখন আর আমি কোনো গুলির আওয়াজ শুনতে পাই না৷ এখানে শান্তি আছে৷''

আরআর/জেডএইচ (এএফপি)