1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পেছনে হাঁটছে গণতন্ত্র, সহসা উল্টো ঘোরার সম্ভাবনা ক্ষীণ

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রে এখন মন্দা চলছে৷ এই অবস্থায় চলতি বছর ৬০-এর বেশি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ এসব নির্বাচনের ফল গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন৷ তবে পরিস্থিতি ইতিবাচক নয়৷

https://p.dw.com/p/4cmb8
‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ মিছিল
মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ মিছিলের একাংশ৷ ফাইল ফটো ছবি: Luis Barron/Eyepix Group/NurPhoto/picture alliance

লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) এর হিসাব বলছে, এ বছর ৭৬টি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ এর মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ১০ দেশের আটটি রয়েছে৷ সবমিলিয়ে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ এবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন বা করবেন৷ এর আগে কোনো বছর এতগুলো দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি৷

গণতন্ত্র নিয়ে গবেষণা করা চার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান লন্ডনের ইআইইউ, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রিডম হাউস, সুইডেনের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিসটেন্স' ও ভি-ডেম ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের দুরবস্থা তুলে ধরা হয়েছে৷

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এমন পরিস্থিতির উন্নতির ব্যাপারে নিশ্চিত হলেও কবে নাগাদ তা হতে পারে, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন৷

‘স্বৈরাচারীকরণের তৃতীয় ঢেউ’

প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন ১৯৯১ সালে ‘দ্য থার্ড ওয়েভ' নামে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন৷ সেখানে গণতন্ত্রের ‘তিনটি ঢেউ'-এর কথা বলেন তিনি৷ প্রথমটির ব্যাপ্তি ছিল ১৮২৮ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত৷ দ্বিতীয়টি ১৯৪৫ থেকে ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত৷ আর হান্টিংটনের বই প্রকাশের সময় তৃতীয় ঢেউ চলছিল৷

২০০৬ সাল নাগাদ এই ঢেউ ছিল বলে ডয়চে ভেলেকে জানান যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ৷ এরপর থেকে গণতন্ত্রের পশ্চাদপসরণ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি৷ ‘‘এই সময়ে যে দেশগুলো গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছিল শুধু যে তাদেরই ক্ষতি হয়েছে তা নয়, যে দেশগুলো অতীতে স্বৈরাচারী ছিল, সেই শাসনব্যবস্থা আরও কঠোর হয়েছে৷ যেমন চীন, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি,'' বলেন তিনি৷

এখন পর্যন্ত যে সময় চলছে সেটিকে ‘স্বৈরাচারীকরণের তৃতীয় ঢেউ' বলা হচ্ছে বলে জানান আলী রীয়াজ৷

হান্টিংটনের উল্লেখ করা গণতন্ত্রের প্রথম দুই ঢেউয়ের পরও ‘বিপরীত ঢেউ' এসেছিল৷ এখন আবার সেই পরিস্থিতি চলছে৷ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ল্যারি ডায়মন্ড এক দশক আগে এই পরিস্থিতিকে ‘গণতান্ত্রিক মন্দা' হিসেবে আখ্যায়িত করেন৷

চার সংস্থার প্রতিবেদনে গণতন্ত্র পরিস্থিতি

২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর গণতন্ত্র সূচক প্রকাশ করে আসছে ইআইইউ৷ সবশেষ সূচকে তারা বলেছে, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের মান বর্তমানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে৷ ইআইইউ বলছে, ১৬৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে মাত্র ২৪টিতে পূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে৷ এসব দেশে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭.৮ শতাংশ মানুষ বাস করেন৷ তবে বিশ্বের ৪৫.৪ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের গণতান্ত্রিক পরিবেশে (পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের মতো হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা) বাস করেন৷ আর কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় পরিচালিত দেশগুলোতে বাস করেন ৩৯.৪ শতাংশ মানুষ৷

বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের উন্নয়নে কাজ করা ৩৫ দেশে সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিসটেন্স’ গতবছর তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলে গণতন্ত্র সংকুচিত হচ্ছে৷ এবং টানা ছয় বছর ধরে গণতন্ত্রের মানের উন্নতির চেয়ে অবনতি হচ্ছে৷

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউস গতবছর তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে আফ্রিকার কয়েকটি দেশে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার উৎখাতের বিষয়টি উল্লেখ করেছিল৷ এছাড়া রিপোর্টে বলা হয়, ২০২২ সালে টানা ১৭ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতার মানের অবনমন হয়েছে৷ বৈশ্বিক স্বাধীনতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ফ্রিডম হাউস রাজনৈতিক অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতাকে বিবেচনায় নেয়৷

সুইডেনের গথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি-ডেম ইনস্টিটিউটের মতে, গত কয়েক দশক ধরে গণতন্ত্র দ্রুত স্বৈরাচারী ব্যবস্থার কাছে হারছে৷ ‘‘দুই দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো উদার গণতন্ত্রের চেয়ে বেশি স্বৈরতন্ত্র রয়েছে,'' বলে ভি-ডেম এর গবেষকেরা গতবছর তাদের প্রতিবেদনে লিখেছিলেন৷ ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী নাগরিকেরা যে মাত্রার গণতন্ত্রের মধ্যে ছিলেন তা ১৯৮৬ সালের পর্যায়ে নেমে গেছে বলেও মনে করছেন তারা৷

সামনে কী?

আলী রীয়াজ বলছেন, গণতন্ত্রের এখন যে পশ্চাদপসরণ অবস্থা তেমনটা অতীতে আরও দুইবার হয়েছে৷ এবং সেই অবস্থা থেকে গণতন্ত্র আবার ফিরে এসেছে৷ এবারও তা হবে বলে আশা করছেন তিনি৷

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক বলেন, গণতন্ত্রকে আদর্শ হিসেবে প্রচার-প্রসার ও তাকে শক্তিশালী করার জন্য এক বা একাধিক দেশকে পতাকাবাহী হিসেবে আবির্ভূত হতে হয়৷ যে দেশ বা অঞ্চল এই দায়িত্ব নিতে পারে তার দুটিতে এ বছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ এগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ ‘‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর নির্বাচনে যদি বড়রকমের ব্যত্যয় ঘটে এবং এসব নির্বাচনে যারা ক্ষমতাসীন হবেন, তারা যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেন, যেগুলো আসলে স্বৈরাচারী বা কর্তৃত্ববাদের পক্ষে যায়, তাহলে বিশ্বের জন্য সময়টা আরও কঠিন হয়ে পড়বে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে ফেরত আসার পথ আরও দুরূহ হয়ে যাবে,’’ বলে মনে করেন তিনি৷

এদিকে, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ল্যারি ডায়মন্ড ইতিহাস থেকে আশাবাদী হচ্ছেন৷ জাপানের গণমাধ্যম এনএইচকে-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, স্বৈরাচারী শাসকেরা দুর্নীতি আর নিপীড়নমূলক আচরণের কারণে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারে না৷ ‘‘জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা না থাকায়, ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের ব্যবস্থা না থাকায়, একসময় পরিস্থিতি খারাপ হয়ে উঠে৷ চীনের শি জিনপিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি৷ তাকে তার নিজের লোকেরাই এখন বেশি ঘৃণা করছে, কারণ তিনি অনেক বেশি অত্যাচারী হয়ে উঠেছেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত করছেন, চীনের অর্থনীতি এখন খারাপের দিকে যাচ্ছে,'' বলেন তিনি৷

ভারত নিয়েও মন্তব্য করেছেন ল্যারি ডায়মন্ড৷ দেশটির অর্থনীতি এখন অবিশ্বাস্য ভালো করলেও ভারত যদি কর্তৃত্ববাদের দিকে পথচলা জারি রাখে তাহলে বিজেপি আরও বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘তখন বিচার বিভাগ বা গণমাধ্যমও দুর্নীতির খবর তুলে ধরবে না৷ এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ জেগে উঠবে,'' বলেন ডায়মন্ড৷

এছাড়া গ্রিস, কলম্বিয়া, পোল্যান্ডের মতো একসময় অগণতান্ত্রিক পথে এগোনো দেশগুলোর আবার গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার ঘটনায়ও আশান্বিত হচ্ছেন অধ্যাপক ল্যারি ডায়মন্ড৷

ডয়চে ভেলের সাংবাদিক জাহিদুল হক৷
জাহিদুল হক ডয়চে ভেলের সাংবাদিক জাহিদুল হক৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য