1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘প্রণোদনার অর্থ বড় ফ্যাক্টরিগুলো পেয়েছে, ছোটরা পায়নি’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১

পোশাক খাতে করোনার প্রভাব কতটা পড়েছে? কতটাই বা কাটিয়ে ওঠা গেছে? এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি ও হামীম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদ মনে করেন, করোনার সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাত৷

https://p.dw.com/p/3pxZS
এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি ও হামীম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদ
এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি ও হামীম গ্রুপের কর্ণধার এ কে আজাদছবি: Mahbub Hossain Khan Nobin

ডয়চে ভেলে : করোনার মধ্যে কীভাবে চলছে পোশাক খাত?

এ কে আজাদ : করোনার মধ্যে আমরা সবচেয়ে কঠিন সময় পার করলাম৷ গত বছরের মার্চে প্রথম করোনা ধরা পড়ার পর মার্চ-এপ্রিল মোটামুটি আমাদের কারখানাগুলো বন্ধ ছিল৷ তারপর মে-জুনে আমাদের প্রচুর অর্ডার বাতিল হয়ে যায়৷ এরপর জুলাই-আগস্ট থেকে আস্তে আস্তে কাস্টমাররা অর্ডারগুলো নেওয়া শুরু করে৷ এরপর আমরা কাজ শুরু করতে পারি৷

এখন কি পরিস্থিতির উন্নীত হয়েছে?

অনেক উন্নতি হয়েছে৷ তবে এখনও অনেক বাতিল গুডস রয়ে গেছে৷ তবে প্রাইসের চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে৷ এখন আর আগের প্রাইস নেই৷ এখন ১৫ থেকে ২০ ভাগ কমে কাজ করতে হচ্ছে৷

রফতানিতে কতটা প্রভাব পড়েছে?

রফতানিতেও আমাদের নেগেটিভ গ্রোথ হবে৷ গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ১৪ ভাগ নেগেটিভ গ্রোথ হবে

কী পরিমাণ রফতানি আদেশ বাতিল হয়েছে?

এখন আর বাতিল হচ্ছে না৷ বাতিল হয়েছিল আগে৷ এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত অনেক অর্ডার বাতিল হয়েছিল৷ এখন আবার সেগুলো ফিরে আসছে৷ এখন অবস্থা আগের চেয়ে ভালো৷ তারপরও ২০ থেকে ৩০ ভাগ ফ্যাক্টরিতে কোনো অর্ডার নেই

কী পরিমাণ শ্রমিকের চাকরি গেছে? পরে কি কেউ চাকরি ফেরত পেয়েছে?

গার্মেন্টস সেক্টরে বেশ কিছু ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে৷ সুনির্দিষ্ট করে আমি বলতে পারব না৷ তবে বেশ কিছু ছোট ও মিডিয়াম ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে৷ এবং তার পরিমাণ ২০০ ফ্যাক্টরি, আজকেই আমি একটা রিপোর্টে দেখলাম৷ তার মধ্যে মাত্র ২০টি ফ্যাক্টরি আবার খুলতে পেরেছে৷  

‘এ বছর প্রায় ১৪ ভাগ নেগেটিভ গ্রোথ হবে’

পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে৷ এর মধ্যে প্রণোদনা প্যকেজ দিয়েছে৷ এটা এক বছরের জন্য দিয়েছিল৷ এখন সেটা আরও ৬ মাস বাড়িয়েছে৷ তবে বড় ফ্যাক্টরিগুলো এই সুযোগ পেয়েছে৷ ছোট ও মাঝারি ফ্যাক্টরি এই সুযোগ পায়নি৷ যার জন্য ২০০ ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে৷

সরকারের এই পদেক্ষপ কি যথেষ্ট ছিল?

বড় ফ্যাক্টরির জন্য এটা যথেষ্ট ছিল৷ কিন্তু ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের জন্য এটা যথেষ্ট ছিল না৷

প্রণোদনার অর্থ কি যথাযথভাবে ব্যবহার হয়েছে? সবাই কি এটা পেয়েছেন?

আমি তো বললাম, বড় ফ্যাক্টরিগুলো পেয়েছে৷ ছোট আর মাঝারিরা পায়নি৷ আমি মনে করি, সরকার আন্তরিক ছিল৷ তবে এখন বেশ কিছু পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে তাতে ছোট ও মাঝারারিরা উপকৃত হবে৷

কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

বেশ কিছু পদক্ষেপ যেমন, সামর্থ্য না থাকলেও ব্যাংকগুলো টাকা দেবে৷ ওভার ডিউ থাকলেও ব্যাংকগুলো টাকা দেবে, এমন নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেওয়া হয়েছে৷

প্রণোদনার টাকা দিতে ব্যাংকগুলোর কোন গাফিলতি ছিল কি?

ব্যাংকগুলোর গাফিলতি না, ব্যাংকগুলো তাদেরই টাকা দিয়েছে যাদের ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য আছে৷ ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা যাদের ছিল, তাদেরই ব্যাংক টাকা দিয়েছে৷ বা যাদের ওভার ডিউ হয়ে গেছে, বা ব্যাংকগুলো সন্দেহ হয়েছে তাদের টাকা দেয়নি৷

পরিস্থিতি উত্তরণে মালিকদের যে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল, তারা সেটা নিয়েছেন কি?

মালিকদের ফ্যাক্টরি চালু রাখার জন্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা ছিল৷

রফতানি আদেশ বাড়াতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

এখন প্রত্যেক মালিক ফ্যাক্টরি পূর্ণভাবে চালানোর জন্য এবং সে যে লসটা করেছে, সেটা কভার করার জন্য, ভবিষ্যতে কোনো দুর্যোগ এলে সেটা মোকাবেলা করার জন্য প্রত্যেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সেভাবেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷

করোনার মধ্যে কি রফতানির জন্য নতুন কোনো দেশ পাওয়া গেছে?

না, নতুন কোনো দেশের সন্ধান পাওয়া যায়নি৷ তবে আমাদের মূল বাজার হচ্ছে, ইউরোপ ও অ্যামেরিকা৷ ব্রাজিল ও জাপানেও কিছু বাজার আছে৷ এর বাইরে চীনও একটা বড় বাজার৷ বিশেষ করে ইউরোপ ও অ্যামেরিকায় আমাদের বাজার যাতে বাড়তে পারে সেজন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি, তবে এখনও সফল হতে পারিনি৷

পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিকভাবে কোন অবস্থানে আছে? 

বাংলাদেশ আগের অবস্থানেই আছে৷ আমরা এখনও দ্বিতীয় অবস্থানেই আছি৷ তবে আমাদের চেয়ে ভিয়েতনাম আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে৷ যে-কোনো সময় আমরা তিন নম্বরে চলে যেতে পারি৷

এই সেক্টরকে সামনে এগিয়ে নিতে আর কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

আমার পরামর্শ হলো, প্রণোদনার যে টাকাটা দেওয়া হয়েছিল সেইটার সময় আরও বাড়ানো প্রয়োজন৷ প্রধানমন্ত্রী সেটা আরও ৬ মাস বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ পাশাপাশি সহজ শর্তে এবং ছোট ও মাঝারিরাও যাতে ঋণ পায় সেজন্য আইন শিথিল করা প্রয়োজন৷ এই শিথিলতা মেনে সবগুলো ব্যাংক যেন সবাইকে ঋণ দেয় সেটা যেন বাংলাদেশ ব্যাংক মনিটর করে৷ তাহলে যারা চাকরি হারিয়েছে এবং যেসব ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েছে তারাও আবার ফিরে আসতে পারবেন৷

ছোট ফ্যাক্টরি চালু করতে নতুন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি?

২০০ ফ্যাক্টরি বন্ধ হলেও মাত্র ২০টা ফ্যাক্টরি আবার চালু হয়েছে৷ এটা খুব একটা সহজ হবে না৷ কারণ ক্রেতারা এমন সব ফ্যাক্টরি পছন্দ করেন যাদের সব ধরনের ব্যবস্থা আছে৷

পোশাক মালিকদের সংগঠন থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি?

বিজিএমইএ-র তো নিজস্ব কোনো ফান্ড নেই৷ বিজিএমইএ-র কাজ হচ্ছে সরকারের সঙ্গে লিঁয়াজো করা৷ ইতিমধ্যে বিজিএমইএ সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, আমরা খুবই নাজুক অবস্থার মধ্যে আছি৷ ফ্যাক্টরি চালু রাখতে আমরা সংগ্রাম করে যাচ্ছি৷ সরকারি সহযোগিতা ছাড়া ফ্যাক্টরি চালানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না৷ সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের সময় বাড়ানো দরকার৷ শর্তও শিথিল করা দরকার৷ বিজিএমইএ এটা করে যাচ্ছে৷

যেসব শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন তারা পাওনা সঠিকভাবে পেয়েছেন কি?

শতভাগ সবাই পায়নি৷ ইপিজেডে বেশ কিছু ফ্যাক্টরির খবর আমি জানি, মালিক তাদের টাকা দিতে পারেনি৷ এর বাইরেও কিছু ফ্যাক্টরি আছে যারা লেঅফের টাকা পুরো বুঝিয়ে দিতে পারেনি৷ তাদের কোনো সক্ষমতাও নেই৷ ব্যাংকও তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না৷

এই শ্রমিকদের পাওনার কী হবে?

ব্যাংকগুলো যদি তাদের ইন্টারেস্ট বাদ দিয়ে এবং ১০ বছরের সময় দিয়ে লোন দেয় তাহলে এই কারখানাগুলো চালু হতে পারে৷ এমন একটি বিষয়ে বিজিএমইএ মধ্যস্ততা করছে৷

এটা কতদূর এগিয়েছে?

বেশ কয়েকটা ফ্যাক্টরি এর সফলতা পেয়েছে৷