প্রতিরোধের মুখে নিরাপদ সড়ক আইন
১৮ নভেম্বর ২০১৯১ নভেম্বর থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপদ সড়ক আইন কার্যকরের কথা থাকলেও তা করা যায়নি৷ শুরুর দিনেই নানা জটিলতার মুখে আইন কার্যকর করতে এক সপ্তাহ সময় নেয়া হয়৷ এর উদ্দেশ্য ছিল আইনটি সম্পর্কে পরিবহণ মালিক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ ও ট্রাফিক পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগকে সচেতন করা৷ শেষমেশ আরো সময় বাড়িয়ে ১৮ নভেম্বর (সোমবার) থেকে এই আইনটি কার্যকর করা হয়েছে৷
কার্যকরের প্রথম দিনে ঢাকায় বিআরটিএ'র আটটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করে৷ অভিযানে যেসব যানবাহনের ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন হালনাগাদ এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না, তাদের জরিমানা করা হয়৷
প্রথম দিনে কয়েক ঘণ্টা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়৷ আদালত যতক্ষণ ছিল ততক্ষণই চালক ও পরিবহণ শ্রমিকদের সাথে বেশ কয়েক জায়গায় কথা কাটাকাটি ও ঝামেলার খবর পাওয়া গেছে৷ বিশেষ করে মানিক মিয়া এভিনিউতে৷ সাধারণ যাত্রীরাও ভ্রাম্যমাণ আদালতে গিয়ে নানা ধরনের অভিযোগের কথা জানান৷ এসব অভিযোগের মধ্যে ছিল ভাড়া বেশি নেয়া, সিটিং সার্ভিস বলে লোকাল সার্ভিসের সেবা দেয়া ইত্যাদি৷
বিআরটিএ'র পরিচালক একেএম মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘প্রথম দিনে আটটি মোবাইল কোর্ট এক লাখ ২১ হাজার ৯শ' টাকা জরিমানা করেছে৷’’ জরিমানা এত কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের টার্গেট বেশি জরিমানা আদায় নয়৷ আমরা চাই আইনটি সবাই জানুক, সচেতন হোক৷ সে কারণেই আমরা শুরুতে কড়াকড়ি করছি না৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রতিদিনই এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে৷ এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া৷’’
এদিকে দেশের খূলনা এবং রাজশাহী বিভাগের পরিবহণ শ্রমিকরা এই নতুন আইন কার্যকরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পরিবহণ ধর্মঘট ডেকেছে৷ এরমধ্যে রয়েছে রাজশাহী, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুড়া, নড়াইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও চাঁদপুর৷ এর ফলে দেশের অনেক এলাকার সাথে ঢাকার সড়ক পরিহণ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে৷
চালক ও পরিকহণ শ্রমিকরা মূলত সড়ক দুর্ঘটনায় যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে তার বিরোধিতা করছেন ৷ নতুন এই আইনে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো চালক যদি দুর্ঘটনার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটান, তাহলে তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায়ই মামলা হবে৷ এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ তবে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর জন্য চালকদের সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর এবং এই অপরাধ জামিনের অযোগ্য৷ আগে এই অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল তিন বছরের কারাদণ্ড এবং তা জামিনযোগ্য ছিল৷
আইনে শুধু চালক ও পরিবহণ মালিক নয়, এবার পথচারীদেরও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে৷ পথচারীকেও সড়ক-মহাসড়কে জেব্রা ক্রসিং, ওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস ব্যবহার করতে হবে৷ যত্রতত্র রাস্তা পার হলে পথচারীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে৷
বিভিন্ন অনিয়মের জন্য জরিমানার পরিমাণ পাঁচ থেকে ৫০ গুণ বাড়ানো হয়েছে৷উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আগের আইনে যত্রতত্র হাইড্রোলিক হর্ন বাজালে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান ছিল৷ এখন তা করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা তিন মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড৷
খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা পেশাদার ড্রাইভার৷ আমাদের বেতন বাড়ে নাই৷ কিন্তু জরিমানা বাড়ানো হয়েছে৷ ৫ হাজাার থেকে ২৫ হাজার এক টাকা জরিমানা আমরা কিভাবে দেবো৷ মনে হচ্ছে, আমরা যেন এই দেশের নাগরিক না, সব দায় আমাদের৷ এটা হলে আমাদের পক্ষে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়৷ আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে৷’’
তিনি দুর্ঘটনায় শাস্তি প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে৷ কিন্তু কোনো ড্রাইভার ইচ্ছে করে দুর্ঘটনা ঘটায় না, একটা পিঁপড়াও মারে না৷ আর পুলিশের তদন্তে আমাদের আস্থা নেই৷’’
এদিকে সোমবার সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘‘এই আইন আরো দেরিতে বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ এসেছিল৷ সেই চাপ বিবেচনা করেই এই ১৫-১৬ দিন বাড়তি সময় দেয়া হয়েছে৷ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে৷ তিনি বলেছেন, সড়ক পরিবহণ আইন বাস্তবায়নে আর সময় দেয়া যাবে না৷’’