নাবিক পেশায় ১৩ বাংলাদেশি নারী
১০ আগস্ট ২০১৪প্রথম ব্যাচে মোট ১৩ জন নাবিক যোগ দিচ্ছেন বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের বিভিন্ন জাহাজে৷ গত ডিসেম্বরে তাঁরা বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি থেকে ক্যাডেট হিসেবে তাদের প্রশিক্ষণ শেষ করেছেন৷ তারা জাহাজে মেরিন অফিসার হিসেবে যোগ দিচ্ছেন৷
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মকসুমুল কাদের ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাণিজ্যিক জাহাজে নারীদের মেরিন অফিসার হিসেবে চাকরি বাংলাদেশে নতুন এক ইতিহাস৷ বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের প্রতিটি জাহাজে দু'জন করে নারী মেরিন অফিসার নিয়োগ দেয়া প্রক্রিয়া শুরু করেছে৷ মেরিন একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করে ১৩ জন নারী মেরিন ক্যাডেট জাহাজে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন৷ তাদের আবেদন বিবেচনা করা হচ্ছে৷''
তিনি জানান, তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত হতে আরো এক বছর লাগবে৷ এখন তাঁরা ক্যাডেট হিসেবে শিপিং কর্পোরেশনে যোগ দিয়ে এক বছরের প্রশিক্ষণ নেবেন৷ তারপর বিভিন্ন জাহাজে তাদের নিয়োগ দেয়া হবে৷
জানা গেছে, সমুদ্রগামী জাহাজে নাবিক পদে বিশ্বের প্রথম নারী হিসেবে ১৯৪৫ সালে যোগ দিয়েছিলেন সুইডিশ এক নারী৷ পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় আড়াই জাহাজে অফিসার পদে যোগ দিলেও এত দিন বাংলাদেশি নারীদের কোনো সুযোগ ছিল না৷
মেরিন প্রশিক্ষণে নারী ক্যাডেট সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অরগানাইজেশন (আইএমও) নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ২০১২ সালে মেরিন প্রশিক্ষণ শুরু হয়৷ গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি থেকে নটিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিং দুই শাখায় মোট ১৩ জন নারী ক্যাডেট প্রশিক্ষণ শেষ করেন৷ আর বর্তমানে দ্বিতীয় ব্যাচে তিনজন নারী ক্যাডেট রয়েছেন৷
বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির কমান্ড্যান্ট ড. সাজিদ হোসাইন বলেন, ‘‘বিভিন্ন বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে এ দেশে প্রথমবারের মতো নারী মেরিন অফিসার সমুদ্রগামী জাহাজে যোগ দিতে যাচ্ছেন৷ বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এসব নারী মেরিন অফিসারকে চাকরির সুযোগ করে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করল৷''
জাহাজে নারীদের চাকরির সুযোগ প্রসঙ্গে ভারতের উদাহরণ দিয়ে ড. সাজিদ বলেন, ‘‘এই পেশায় নারীদের উত্সাহিত করতে ভারত নারীদের জন্য প্রশিক্ষণ ফি ৫০ ভাগ কমিয়েছে আর বয়স দুই বছর শিথিল করেছে৷ ফলে ভারতে ক্ষেত্রে নারী ক্যাডেটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে৷''
তিনি জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারী নাবিকরা আগে থেকেই কাজ করছেন৷ এবার বাংলাদেশও সেই তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে৷
এদিকে নারী নেত্রী এ্যাডভোকেট এলিনা খান নাবিক পেশায় প্রথম যোগ দিতে যাওয়া নারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘‘তাদের দেখে বাংলাদেশের নারীরা আরো এগিয়ে যাবেন৷''
তবে তিনি মনে করেন, তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে শিপিং কর্পোরেশনসহ সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে৷ তৈরি করতে হবে প্রয়োজনীয় নীতিমালা৷ আর কর্মক্ষেত্রে তারা যেন জেন্ডার বৈষম্যের শিকার না হন৷ আর নারী নাবিকদেরও মনে রাখতে হবে তারা নাবিক৷