প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ থেকে আ. লীগ নেতার নাম বাদ
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি৷ মারধরের শিকার ওই শিক্ষকের নাম মো. আবুল কালাম৷ তিনি কাঞ্চন সাত্তার জুট মিলস মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক৷ স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিলের দাওয়াতপত্র ও পোস্টারে কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল ওরফে কলির নাম নিচের দিকে ছোট হরফে দেওয়ায় তার নেতৃত্বে প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠে৷ বর্তমানে আবুল কালাম রূপগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন৷
এ ঘটনায় মারধরের শিকার ওই শিক্ষকের ছোট ভাই আতাউল করিম গতকাল রোববার রাতে রূপগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন৷ অভিযোগে ৫ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে৷ তারা হলেন রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌর এলাকার মো. বাছির (৩৮), মতিউর রহমান (৩৮), মো. শাহিন ওরফে লোহা শাহিন (৩৭), মঞ্জুর আলম (৩৮) ও মো. মতিন (৪০) ৷
রূপগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রত্যেকেই বিভিন্ন মামলার আসামি৷ তাদের মধ্যে বাছির ও শাহিন র্যাবের হাতে এবং মঞ্জুর আলম পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন৷
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় দুজন আওয়ামী লীগ নেতা আমাদের কনটেন্ট পার্টনার প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে গোলাম রসুলের সহযোগী হিসেবে পরিচিত৷ গতকাল দুপুরে ওই শিক্ষককে মারধরের সময় আসামিরা সবাই গোলাম রসুলের সঙ্গে ছিলেন৷
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৩ ফেব্রুয়ারি হাটাব এলাকাবাসীর উদ্যোগে কবরস্থানের উন্নয়নের জন্য ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে৷ সেই মাহফিলের দাওয়াতপত্রে কয়েকজন অতিথির পরে অভিযুক্ত বাছিরের নাম দেওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে ওই শিক্ষককে কাঞ্চন বাজারে মারধর করেন৷ এতে ওই শিক্ষকের বাঁ হাত ও ডান পায়ের হাড় ফেটে যায়৷ এ সময় ওই শিক্ষকের কাছে থাকা মাহফিলের ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়৷ পরে শিক্ষককে উদ্ধার করে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়৷
এদিকে প্রথম আলোর হাতে আসা ওই ওয়াজ মাহফিলের পোস্টারের কোথাও অভিযুক্ত বাছিরের নাম দেখা যায়নি৷ পোস্টারটিতে দেখা যায়, স্থানীয় সংসদ সদস্যকে মাহফিলের প্রধান অতিথি এবং কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র ও পৌর যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলামকে মাহফিলের উদ্বোধক করা হয়েছে৷ তাঁদের নামের পর পোস্টারের বিশেষ অতিথির তালিকায় ছোট করে গোলাম রসুলের নাম রয়েছে৷
স্থানীয় দুজন আওয়ামী লীগ নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম ও গোলাম রসুলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে৷ এই বিরোধকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকবার দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিসহ হামলা-মামলাও হয়েছে৷ নিজের প্রধান প্রতিপক্ষের নাম মাহফিলের পোস্টারে নিজের নামের আগে বড় করে লেখার বিষয়টি গোলাম রসুল নিতে পারেননি৷
মারধরের শিকার প্রধান শিক্ষক গতকাল জানিয়েছিলেন, মাহফিলের আয়োজক হিসেবে তিনি ও কাঞ্চন পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আবদুল কাইয়ুম গতকাল দুপুরে গোলাম রসুলের বাড়িতে মাহফিলের দাওয়াতপত্র নিয়ে যান৷ এ সময় দাওয়াতপত্রে নাম ছোট হরফে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে গোলাম রসুল তাদের গালাগাল দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন৷ বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর গোলাম রসুল ফোন করে তাদের কাঞ্চন বাজারে অপেক্ষা করতে বলেন৷ কিছুক্ষণ পর গোলাম রসুল লাঠিসোটাসহ তার কয়েকজন অনুসারী নিয়ে বাজারে এসে শিক্ষককে মারধর করেন৷
অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতার নাম না থাকার বিষয়ে কথা বলতে অভিযোগকারী আতাউল করিমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা ধরেননি৷ মারধরের শিকার শিক্ষকের মুঠোফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ‘আমি আপনাকে পরে ফোন করব' বলে তিনি সংযোগ কেটে দেন৷
শিক্ষককে মারধরের সময় তার সঙ্গে থাকা একজন পরিচয় গোপন রাখার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় গোলাম রসুলকে প্রধান অভিযুক্ত করে একটি অভিযোগ লেখা হয়েছিল৷ কিন্তু গোলাম রসুল ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে শেষ পর্যন্ত গোলাম রসুলের নাম বাদ দিয়ে বাছিরের নাম ১ নম্বরে দেওয়া হয়৷
তবে শুরু থেকেই গোলাম রসুল অভিযোগ অস্বীকার করছেন৷ তার দাবি, মতিন নামের তার এক সমর্থকের সঙ্গে শিক্ষকের কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ‘একটু হাতাহাতি'র ঘটনা ঘটে৷ পরে তিনি ঘটনা মীমাংসা করে দেন৷
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷
এনএস/কেএম (প্রথম আলো)