প্রযুক্তির মাধ্যমে উষ্ণায়নের মোকাবিলা নিয়ে সংশয়
১১ ডিসেম্বর ২০১৮শুধু সমুদ্র নয়, জমির উপরেও ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রয়োগ নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে৷ যেমন সুইজারল্যান্ডে এক প্লান্ট বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে গাছের সার উৎপাদন করেছে৷ বিশাল গ্রিনহাউসে চাষের কাজে সেই সার কাজে লাগানো হচ্ছে অথবা মাটির নীচে তা জমা রাখা হচ্ছে৷ গোটা বিশ্বেই এমন মডেল প্রয়োগ করা যেতে পারে কি? সমুদ্রবিজ্ঞানী প্রো. আন্দ্রেয়াস ওশলিস মনে করেন, ‘‘সিওটু ভ্যাকুয়াম ক্লিনার অবশ্যই ভালো কাজ করে৷ কিন্তু তার মাপ কয়েকগুণ বড় হতে হবে৷ এমন অনেক যন্ত্র এবং মাটির নীচে দীর্ঘকাল কার্বন-ডাই-অক্সাইড রাখার ব্যবস্থাও প্রয়োজন৷ প্রযুক্তিগতভাবে এ সবই করা সম্ভব৷ প্রশ্ন হলো, আমরা কি সত্যি এমনটা চাই? সমাজে এর পক্ষে সমর্থন আদায় করা কি সম্ভব?''
মাটির নীচে সিওটু রাখার বিষয়টির সঙ্গে কিছু ভয়ভীতি জড়িয়ে রয়েছে৷ সমালোচকদের আশঙ্কা, এর ফলে তীব্র ভূমিকম্প ঘটতে পারে অথবা ভূগর্ভস্থ পানি দুষিত হতে পারে৷ মোটকথা, তার পরিণতি সম্পর্কে আজ ধারণা করা কঠিন৷
রাজনীতি জগতেও ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে৷ আদৌ অথবা কীভাবে তা প্রয়োগ করা সম্ভব, সে বিষয়ে কোনো বিধিনিয়ম নেই৷ তবে কিছুই না করলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা যে আরও বেড়ে যাবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷
তখন দুই মেরু অঞ্চলে আরও বরফ গলে যাবে এবং মরুভূমি আরও সম্প্রসারিত হবে৷ প্রো. আন্দ্রেয়াস ওশলিস বলেন, ‘‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যে নাটকীয় মাত্রায় বেড়ে চলেছে, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি৷ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রয়োগ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব নয়৷ অর্থাৎ হয় সব রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে, অথবা জলবায়ু সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা ত্যাগ করতে হবে৷''
প্রযুক্তিগতভাবে এখনই বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া কাজে লাগানো সম্ভব৷ যেমন অগ্ন্যুৎপাত ঘটলে সূর্যের রশ্মি অব্যাহত রাখা যেতে পারে৷
১৯৯১ সালে ফিলিপাইন্সের পিনাটুবো আগ্নেয়গিরি জেগে ওঠার পর গন্ধকের যত কণা আকাশ ছেয়ে গেছিল, খাতায় কলমে ঠিক তত সংখ্যক কণা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পাঠানো সম্ভব৷ সে সময়ে গন্ধকের আস্তরণ সরতে এবং তাপমাত্রা স্বাভাবিক হতে প্রায় ১ বছর সময় লেগেছিল৷ মাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউটের উলরিকে নিমায়ার বলেন, ‘‘পিনাটুবো পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেক কমিয়ে দিয়েছিল এবং বাতাসে গন্ধকের স্তর গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা আধ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গিয়েছিল৷ক্লাইমেট ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটতে পারে৷ গন্ধকের পরিমাণ অনুযায়ী আমরা পৃথিবীর তাপমাত্রা কমাতে পারবো৷''
বিশেষজ্ঞদের মনে অবশ্য এখনো সংশয় রয়েছে৷ কৃত্রিমভাবে জলবায়ুর উপর হস্তক্ষেপ করলে অন্য বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে৷ কিছু শক্তি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও এই প্রযুক্তির অপব্যবহার করতে পারে৷ উলরিকে নিমায়ার বলেন, ‘‘এই প্রযুক্তির রাজনৈতিক প্রয়োগ নিয়েই আমার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা৷ সবাই রাজি হবে এবং মেনে চলবে, এমন আন্তর্জাতিক বিধিনিয়ম স্থির করাও কঠিন৷ ব্যক্তিগতভাবে আমার আশঙ্কা হলো, কোনো এক সময় এর মাধ্যমে যুদ্ধ লেগে যাবে৷''
হাতে সময় খুব কম৷ তাছাড়া জলবায়ু প্রণালীর উপর এমন নির্দিষ্ট হস্তক্ষেপসত্যি সমাধানসূত্র হতে পারে কিনা, তা কেই বলতে পারে না৷
ডিয়র্ক কুনৎসে/এসবি