ফ্যাশন তরঙ্গ
১৫ এপ্রিল ২০১৬লন্ডনের ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারিতে ভোগ ম্যাগাজিনের গত একশ' বছরের ইতিহাস নিয়ে একটি প্রদর্শনী চলছে৷ মহিলাদের ফ্যাশন ও জীবনধারার এক চটুল, চলমান কাহিনি৷
‘ভোগ ১০০' প্রদর্শনীর কিউরেটর রবিন মুইর বলেন, ‘‘‘ভোগ' তো শুধু জামাকাপড় নিয়ে নয়, ‘ভোগ' হলো মানুষজনকে নিয়ে; যিনি ছবিটা তুলছেন, যার ছবি তোলা হচ্ছে, এদের নিয়ে৷ এডোয়ার্ড স্ট্রাইকেন, সেসিল বিটন, ম্যান রে, লি মিলার, এরউইন ব্লুমেনফেল্ড, আর্ভিং পেন, ‘ভোগ'-এর বড় বড় নামগুলো মডার্ন ফটোগ্রাফির বড় বড় নাম৷ এরা বিংশ শতাব্দীর আলোকচিত্র শিল্পকে গড়ে দিয়েছেন৷ কাজেই প্রদর্শনীটা দেখলে আপনার মনে হবে, বিংশ শতাব্দীর ফটোগ্রাফি কোথায় পৌঁছেছিল – থ্যাংকস টু ‘ভোগ'!''
এখানে যে সব ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে, তাদের কয়েকটিকে ‘ঐতিহাসিক' বললেও ভুল বলা হবে না৷ যেমন মার্কিন আলোকচিত্র শিল্পী ম্যান রে-র প্রখ্যাত করসেট-পরিহিতা নারীর ছবি৷ কিছু ছবি যুগ বদলানোর আভাস দিচ্ছে৷ ১৯৯০ সালে জার্মানির পেটার লিন্ডব্যার্গ ‘ভোগ' ম্যাগাজিনের হয়ে প্রথম প্রজন্মের সুপার মডেলদের ছবি তোলেন৷ তিন বছর পরে ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার করিন ডে তরুণ কেট মস-কে নিয়ে ছবি তোলেন, যা গ্রাঞ্জ ফ্যাশনের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ পরের কয়েক বছর এই গ্রাঞ্জ ফ্যাশনই চালু ছিল দুনিয়ার ফ্যাশন মেট্রোপোলিসগুলোতে৷
মেইনস্ট্রিম হলেও মনে রাখার মতো
জোসেফিন কলিন্স পেশায় ফ্যাশন জার্নালিস্ট; পড়ান লন্ডনের কলেজ অফ ফ্যাশন-এ৷ চার দশকের বেশি সময় ধরে ‘ভোগ'-এর পাঠিকা তিনি৷ জোসেফিন বলেন, ‘‘‘ভোগ' একটা মেইনস্ট্রিম ম্যাগাজিন হলেও, যা কিছু ঘটছে, তার একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করে৷ প্রতিমাসে যা-হোক একটা ইস্যু বের না করে, ওরা সত্যিই ভালো কিছু দেবার চেষ্টা করে৷ সেভাবেই ওরা ওদের মনে রাখার মতো ছবিগুলো বের করতে পেরেছে বলে আমার ধারণা৷ সেটা ওদের কোয়ালিটি আর প্রোডাকশন দেখলে বোঝা যায়৷''
লন্ডনের প্রদর্শনীটি দিয়ে ব্রিটিশ ‘ভোগ' ম্যাগাজিনের একশো বছর পূর্তি উদযাপন করা হচ্ছে – যদিও আসলে ‘ভোগ' ম্যাগাজিনটি জন্ম নেয় ১৮৯২ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে৷ মার্কিন প্রকাশক কন্ডে মন্টরোজ ন্যাস্ট পত্রিকাটি কেনেন ১৯০৯ সালে – শুরু হয় ‘ভোগ'-এর বিশ্বব্যাপী জয়যাত্রা৷ ‘ভোগ' আজ বিশ্বের ২১টি দেশে প্রকাশিত হয় – তার মধ্যে আছে চীন, ভারত ও রাশিয়া৷ একটিমাত্র ব্যতিক্রম ছাড়া সর্বত্রই পত্রিকাটির দায়িত্বে থাকেন একজন নারী৷ জোসেফিন কলিন্স জানালেন, ‘‘‘ভোগ' সারা পৃথিবীতে বিক্রি হয় একই লোগো দিয়ে, একই কোয়ালিটি-তে৷ বিশ্বের যে কোনো জায়গায় ‘ভোগ' দেখলেই চিনতে পারা যায়৷ গোড়া থেকেই এর পেছনে রয়েছে নিউ ইয়র্কের কড়া নিয়ন্ত্রণ৷ ওরা প্রথম থেকেই ‘ভোগ' ব্র্যান্ডটি সম্পর্কে খুব সচেতন৷''
‘দ্য সেপ্টেম্বর ইস্যু' নামের ২০০৯ সালে করা একটি তথ্যচিত্র থেকে ‘ভোগ' ম্যাগাজিন কিভাবে তৈরি হয়, তা জানা যায়৷ ফিল্মটি তথ্যচিত্র হলেও বিপুল সাড়া পাওয়ায় প্রধান সম্পাদিকা অ্যানা উইনটুর তারকা হয়ে ওঠেন৷
লন্ডনের ন্যাশনাল পোর্ট্রেট গ্যালারিতে ব্রিটিশ ‘ভোগ' ম্যাগাজিনের একশ' বছর পূর্তি সংক্রান্ত প্রদর্শনী চলবে মে মাসের শেষ পর্যন্ত৷
সব মিলিয়ে ‘ভোগ' ম্যাগাজিনের মাসিক বিক্রি তিন কোটি! অর্থাৎ ‘ভোগ' হলো বিশ্বের এক নম্বর ফ্যাশন ম্যাগাজিন৷ ফটো, পণ্য কিংবা মডেল, সর্বক্ষেত্রেই ‘ভোগ' যে জীবনধারাটি তুলে ধরছে, তা মহিলাদের বিশেষভাবে প্রিয়: লাক্সারি ও লাইফস্টাইল৷