বরফজলে সাঁতার রাশিয়ায় অনেক দিনের প্রথা
তাপমাত্রা শূন্যের নীচে হওয়া সত্ত্বেও হাজার হাজার রুশি তাদের ‘আইস সুইমিং’ ক্লাবগুলিতে নিয়মিত বরফঠান্ডা জলে ঝাঁপ দেন৷ এর জন্য নাকি শুধু মানসিক প্রস্তুতি দরকার, বলেন তারা৷
ঠান্ডার মজা
মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রাও সাইবেরিয়ার বরফ সাঁতারুদের ঠান্ডা করতে পারে না৷ বরফের উপর দিয়ে ছুটে তারা বরফ সাঁতারের মরশুমের সূচনা উদযাপন করেন৷
ছোটদের সাহস
দু’বছরের আলিসা আর তার সাত বছর বয়সের বোন লিজাকে ধীরে ধীরে বরফজলে স্নান করায় অভ্যস্ত হতে হবে৷ সাম্প্রতিক কয়েক বছরে রাজধানী মস্কোয় বরফ সাঁতারুদের সংখ্যা বেড়ে ৩০,০০০-এ দাঁড়িয়েছে৷
বরফ ঠান্ডা জলে রিল্যাক্স করা!?!
নোভোসিবির্স্কের এই ভদ্রলোক যেন ঐ বরফ ঠান্ডা জলে একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন৷ নয়ত ঐ জলে নামলে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে, অথবা নিউমোনিয়া হবে৷ কিন্তু অনুরাগীদের মতে বরফ সাঁতারে নাকি শরীর তাজা হয়৷
সিন্ধুঘোটক
রুশ বরফ সাঁতারুরা নিজেদের বলেন ‘মর্ঝি’ বা সিন্ধুঘোটক৷ ‘সিন্ধুঘোটক ক্লাবের’ সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে একবার করে বরফ ঠান্ডা পানিতে ঝাঁপ খান – কোনোরকম ডাইভিং সুট কিংবা অন্য কোনো ধরনের সুরক্ষা ছাড়া, শুধুমাত্র গ্রীষ্মের সুইমসুট পরে৷
‘যেন হাজারটা সুচ ফুটছে’
নোভোসিবির্স্কে বরফ সাঁতারুরা একটি জলের ট্যাংকে নামছেন৷ এক মহিলার ভাষায়: ‘‘যেন একসঙ্গে এক হাজারটা সুচ ফুটল!’’
খ্রিষ্টীয় এপিফানি পরব
রাশিয়ায় বরফ সাঁতারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংস্করণটি হলো তথাকথিত বরফে ব্যাপটিজম: পুরু বরফে ক্রুশের আকারের গর্ত খোঁড়া হয়৷ রাশিয়ার সনাতনপন্থি খ্রিষ্টানরা এপিফানি পরব পালন করেন ১৯শে জানুয়ারি তারিখে৷ প্রথায় বলে, এদিন নাকি পানি পবিত্র হয়ে যায় ও সব পাপ ধুয়ে দিতে পারে৷
সোভিয়েত আমলের পরের প্রথা
১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লবের আগে রাশিয়ার খুব কম মানুষই বরফে সাঁতার কাটতেন৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কিন্তু বরফ সাঁতার খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ প্রসঙ্গত, কমিউনিস্ট শাসনের অন্তের পর রাশিয়ায় ধর্মীয় অনুভূতিও জোরদার হয়েছে – যদিও সনাতনপন্থি গির্জা সরকারিভাবে বরফ সাঁতার অনুমোদন করেনি৷
বিপজ্জনক সখ
অভিজ্ঞ ‘সিন্ধুঘোটক’ না হলে, বরফ সাঁতার সাধারণ মানুষের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে৷ পানিতে শরীরের তাপমাত্রা কমে বাতাসের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি তাড়াতাড়ি৷ কাজেই তিন মিনিটের বেশি সময় বরফ ঠান্ডা জলে কাটালে জ্ঞান হারানোর ভয় আছে৷
প্রতিবেদন: নাডিনে ব্যার্গহাউজেন/এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ