1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বল ভেবে বোমায় লাথি, শিশুর মৃত্যু, শিল্পীর গোপন লজ্জা

২৩ মার্চ ২০২১

২৫ বছর আগেও এমন হয়েছিল৷ বড়রা যে খেলার মাঠে বোমা সাজিয়ে রাখতে পারে বুঝতে না পেরে বেঘোরে প্রাণ দিয়েছিল এক শিশু৷ সেবার গানের দোহাই দিয়ে বোমা আর ভোট এড়িয়ে যেতে বলেছিলেন কবীর সুমন৷

https://p.dw.com/p/3r03h
কবীর সুমন
ছবি: privat

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তারপরও নির্বাচন হয়েছে৷ নির্বাচন হতেই হয়৷ আর নির্বাচন এলে সন্ত্রাসও যেন একটু বেশি মাত্রায় হতে হয়৷ এবারের বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে সন্ত্রাস আগের চেয়ে বেশি না কম হচ্ছে সেই বিতর্ক পরিসংখ্যান দিয়েও থামানো যাবে না৷ দলাদলির রাজনীতি তো এমনই!

সোমবার বর্ধমানের রসিকপুরের এক মাঠে খেলতে যাওয়া শিশু দু'টি যে এমন সন্ত্রাসনির্ভর দলাদলির রাজনীতির শিকার তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ শেখ ইব্রাহিম আর শেখ আফরোজের ভুল- তারা হাঁড়িতে রাখা গোল বস্তুটিকে বল ভেবেছে এবং বলসদৃশ বস্তুটি নিয়ে বিপুল উৎসাহে খেলতে গেছে৷ যা হবার তা-ই হয়েছে তারপর৷ মুহূর্তেই বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছে গোটা এলাকা৷ বড়রা ছুটে গিয়ে দেখেন মাটিতে তড়পাচ্ছে রক্তাক্ত দুই মানবশিশু৷ তাদের একজন এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে, অন্যজন চলে গেছে এই পৃথিবী ছেড়ে৷

ঘটনাটি নির্বাচনের ডামাডোলে খুব বড় খবর হতে পারেনি৷ বড় বড় খবরের ভিড়ে একদিনেই অনেক পেছনে চলে গেছে একটি শিশুর চিরতরে স্তব্ধ হওয়া, অন্যজনের বেঁচে থাকার লড়াই আর তাদের মা-বাবার সান্ত্বনার অযোগ্য দুঃখের কথা৷

২৫ বছর আগেও ক্রিকেট বল ভেবে বোমা নিয়ে খেলতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিল এক শিশু৷ স্টেটসম্যান পত্রিকায় খবরটি পড়ে শিল্পী কবীর সুমনের সংবেদনশীল মন খুব ধাক্কা খেয়েছিল৷ ঝটপট বসে পড়েছিলেন কাগজ-কলম আর গিটার নিয়ে৷ তারপর? চমৎকার একটি গান উপহার দিয়েছিলেন কবীর সুমন৷ ‘হাউ’জ দ্যাট’ শিরোনামের গানটির প্রথম দু লাইনে ছিল ভোটের নামে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে শিশুদের জন্য পৃথিবীটাকে নরক বানিয়ে ফেলায় বড়দের প্রতি তীব্র কটাক্ষ৷ সুমন লিখেছিলেন, ‘‘বাহবা সাবাস বড়দের দল এই তো চাই /ছোটরা খেলবে আসুন আমরা বোমা বানাই৷’’

আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলে
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/T. Mehedi

শিশুর এমন মৃত্যুতে কবীর সুমন তো বটেই, এমনকি তার ভাষায় ক্রিকেট ব্যাটও সেদিন ভীষণ কষ্ট পেয়েছিল৷ তাই তিনি লিখেছিলেন,

‘‘...ভোটের সকালে লজ্জিত শুধু ক্রিকেট ব্যাট! ৷৷

দেখুন বড়রা, কাঠও কতটা লজ্জা পান…

লজ্জা কিসের বোমাতন্ত্রটা চালিয়ে যান৷’’

আফরোজ আর ইব্রাহিমের পরিণতি বুঝিয়ে দিলো পশ্চিমবঙ্গে বোমাতন্ত্র এখনো দেদার চলছে৷

সুমনের গানের গুরুত্ব এ সমাজে খুব কম বলে ২৫ বছর আগে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া অমিত নিশ্চয়ই আজ দেখছেন আবার ভোট এসেছে পশ্চিমবঙ্গে, আবার তার সেই বন্ধুটির মতো আরেক শিশুও মৃত্যুকে বরণ করেছে বোমাকে বল ভেবে খেলতে গিয়ে৷ অমিত হয়ত বারবার শুনছেন ‘হাউ’জ দ্যাট’-এর শেষে তাকে নিয়ে লেখা চারটি অনবদ্য লাইন,

‘‘দেড় বছরের অমিতের আছে ভাগ্য জোর

বেঁচে গেলি তুই, সামলে রাখিস জীবন তোর,

বড় হোস তুই যখন যেখানে যেমন চাস

গানের দোহাই বোমা আর ভোট এড়িয়ে যাস৷৷’’

সেদিনের দেড় বছরের শিশু অমিত এখন ছাব্বিশ পেরোনো তরুণ৷ বড় হয়েছেন বেশ৷ হয়ত নিজের প্রাণের মায়া আছে বলেই অমিত বোমা আর ভোট এড়িয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টাও করছেন৷

তবে কবীর সুমন ভোট এড়াতে পারছেন না৷

তিনি একটি দলের জন্য ভোট চাচ্ছেন আর ২৫ বছর আগে নিজের লেখা গানটির কথা ভেবে হয়ত গোপনে লজ্জা পাচ্ছেন৷