বাংলাদেশ-ভারত জেলে বিনিময়ে স্বস্তি দুই পাড়ে
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জেলে বিনিময়ের আওতায় ১৮৫ জেলে নিজ নিজ দেশে ফিরেছেন৷ ভারতীয় জেলেরা আটকের সময় মারধরের অভিযোগ করেছেন৷ তবে সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাংলাদেশের কারা কর্তৃপক্ষ৷
অবশেষে ৯৫ জেলে ভারতে
বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরেছেন ৯৫ জন মৎস্যজীবী বা জেলে৷ অবৈধভাবে বাংলাদেশের সীমান্তে প্রবেশের অভিযোগে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ বাংলাদেশ সরকার রোববার তাদের ভারতের হাতে তুলে দেয়৷ সেদিন ভারতের হলদিয়ার কাছে আন্তর্জাতিক জল সীমানায় দুই দেশের মধ্যে ১৮৫ জন জেলে ও নাবিক বিনিময় হয়৷
বাংলাদেশে ফিরলেন ৯০ নাবিক ও জেলে
ভারতে আটক থাকা ৯০ বাংলাদেশি নাবিক ও জেলে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে পৌঁছান সোমবার রাতে৷ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা এলাকায় তাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ এ সময় মাছ ধরার দুটি ট্রলারও মালিকদের কাছে তুলে দেওয়া হয়৷ অবৈধভাবে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছিল৷
স্বজনদের ফিরে পেয়ে পরিবার খুশি
কয়েকমাস অনিশ্চিয়তা আর অপেক্ষার পর স্বজনদের পেয়ে হাসি ফিরেছে ভারতীয় জেলেদের পরিবারে৷ ভারতীয় এক মৎস্যজীবী পরিবারের সদস্য সুকৃষ্ণা গায়েন ডয়চে ভেলে বাংলার প্রতিনিধিকে বলেন, ‘‘পরিবারের মানুষদের ফিরে পেয়ে আমরা ভীষণ খুশি৷’’ বাংলাদেশি জেলেদের পরিবারের সদস্যদের মুখেও ফিরেছে স্বস্তির হাসি৷
মারধরের অভিযোগ
ধরা পড়ার পর বাংলাদেশের কোস্টগার্ডের কর্মীরা তাদের মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভারতীয় মৎস্যজীবী বিজয় বিশ্বাস৷ বাংলাদেশের জেলে থাকাকালীন পরিবারের কারোর সঙ্গে কেউ কথা বলতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ তবে তখন তাদের খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন বিজয়৷
‘লাঠি ভাঙা হয়েছে পিঠে’
আরেক ভারতীয় মৎস্যজীবী শেখ আবু তালেব তার ২ মাস ১৬ দিনের জেলজীবনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তাদের ওপর নানা ধরনের অত্যাচারের অভিযোগ করেন৷ তার দাবি, তিন বান্ডিল লাঠি ভাঙা হয়েছে তাদের শরীরে৷ তবে বাংলাদেশি বন্দিদের প্রশংসা করেছেন তিনি৷ আবু তালেব জানান, বাংলাদেশি বন্দিরা তাদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খেয়েছেন৷
মমতা ব্যানার্জির অভিযোগ, কারা অধিদপ্তরের অস্বীকার
ভারতীয় জেলেরা ঘরে ফেরার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘কয়েকজন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন৷ জানতে পারলাম, তাদের পিছনে দুই হাত বেঁধে মোটা লাঠি দিয়ে মারা হয়েছে৷ কোমর থেকে পা পর্যন্ত চোট আছে৷’’ ৯৫ জন মৎস্যজীবীকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথাও জানান তিনি৷ বাংলাদেশের কারা অধিদপ্তর অবশ্য এক প্রতিবাদলিপিতে ভারতীয় জেলেদের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
‘সব বন্দিকে সুস্থ অবস্থায় বুঝিয়ে দেয়া হয়’
বাংলাদেশের কারা কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদলিপিতে লিখেছে, ‘‘গত ২ জানুয়ারি পটুয়াখালী জেলা কারাগার থেকে ৩১ জন এবং বাগেরহাট জেলা কারাগার থেকে ৬৪ জন জেলেকে মুক্তি দেওয়া হয়৷ জেলেদের মুক্তি প্রদানকালে ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন৷ হস্তান্তরকালে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় নাগরিকরা কারাগারে নির্যাতনের কোনো অভিযোগ করেননি৷ সব বন্দিকে কারাগার থেকে হস্তান্তরকালে সুস্থ অবস্থায় বুঝিয়ে দেওয়া হয়৷’’
ফিরতে পারবেন ভাবেননি ইব্রাহিম
ভারতে আটকাবস্থায় আবার দেশে ফিরতে পারবেন ভাবেননি এফবি কৌশিকের বাংলাদেশি স্টাফ ইব্রাহিম৷ মঙ্গলবার চট্টগ্রামে জাহাজ থেকে নেমেই পরিবারের কাছে ছুটে যান, সন্তানকে কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি৷ তার সঙ্গে দেশে ফেরা লাইলা-টু ট্রলারের ইয়াসিন জানান, ভারতে আটকে থাকা অবস্থায় তাদের মোবাইল ও ওয়্যারলেস জব্দ করা হয়েছিল৷ দেশে কারো সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় দেশে আর ফিরতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে তিনিও শঙ্কায় ছিলেন৷
‘ভারতীয়দের ছাড়ানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়’
বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন রাহুল বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভারতীয় কোস্টগার্ড প্রথমে লাইলা-টু ট্রলারে উঠে সার্চ করে৷ অবৈধ কোনো কিছু না পেয়ে ছেড়ে দেয়া হয়৷ এরপর মেঘনা-ফাইভে অনবোট করে ভারতীয় কোস্টগার্ড৷ জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলে তাদেরকে কাছে যেতে বলা হয়৷ সমুদ্রসীমা আইন লঙ্ঘন না করা সত্ত্বেও সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয়৷’’ তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের হাতে আটক ভারতের জেলেদের ছাড়ানোর জন্য তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷
দ্বিপক্ষীয় সমঝোতায় বন্দিবিনিময়
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের কমান্ডার জহিরুল হক মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, বন্দিবিনিময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেয় এবং দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে বন্দিবিনিময়ের সিদ্ধান্ত হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘এই দায়িত্ব দেওয়া হয় কোস্টগার্ডকে৷ সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত রোববার আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমানায় উভয় দেশের হাতে আটক নাবিক ও জেলেদের হস্তান্তর করা হয়৷’’