রোহিঙ্গা বিবাহ নিষিদ্ধ
১১ জুলাই ২০১৪আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, ‘‘রোহিঙ্গাদের বিবাহের বিষয়ে বৃহস্পতিবারই আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে৷ সেই আদেশ অনুযায়ী, এখন থেকে যদি কোনো কাজি রোহিঙ্গাদের বিবাহ নিবন্ধন করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ অর্থাত্ এ দেশে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ তাই নিবন্ধন হলেও সেটি অবৈধ হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘কাজি ছাড়াও যাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন, তাঁদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে৷'' তবে সে শাস্তি এখনো নির্দিষ্ট করা হয়নি আদেশে৷ অবশ্য এই আদেশ জারির আগে কোনো বিয়ে হয়ে থাকলে সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা – তা স্পষ্ট করেননি আইনমন্ত্রী৷
এদিকে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার এলাকার জেলা প্রশাসকদের এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে৷ জেলা প্রশাসক সম্মেলন উপলক্ষ্যে তাঁরা এ মুহূর্তে রাজধানী ঢাকাতেই আছেন৷ জানা গেছে, আইন মন্ত্রণালয় আদেশ জারির আগে সকালে এ নিয়ে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী৷ জেলা প্রশাসকরাই বাংলাদেশে বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিবাহ বন্ধের প্রস্তাব করেন৷ বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার জেলা প্রশাসকরা জানান, ‘‘রোহিঙ্গারা এখানে বিয়ে-থা করে বাংলাদেশি জনগোষ্টির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে৷ তাদের আলাদা করা যাচ্ছে না৷ আত্মীয়তার সূত্র ধরে ভোটার তালিকায় নামও ওঠাচ্ছে তারা, যা একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে৷''
অন্যদিকে বাংলাদেশি-রোহিঙ্গা বিবাহ নিষিদ্ধে আইন মন্ত্রণালয়ের আদেশকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোনো আইনেই কোনো জাতি, গোষ্ঠী, বর্ণ, গোত্রের বা কোনো দেশের নাগরিকের সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ করা যায় না৷''
তাঁর মতে, ‘‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা কোনো কাজেও আসবে না৷ কারণ আইন করে বিবাহ, ভালোবাসা বন্ধ করা যায় না৷ যাঁরা করবেন, তাঁরা ঠিকই উপায় বের করবেন৷ বরং বাংলাদেশ সরকারের উচিত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে মিয়নমারের সঙ্গে কার্যকর আলোচনা চালিয়ে যাওয়া৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে বিষয়টি নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে৷ আর তা না করে বিবাহ নিষিদ্ধ করায় বাংলাদেশের ‘ইমেজ' আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষুণ্ণ হবে৷''
ড. আহমেদ বলেন, ‘‘রোহিঙ্গাদের বিষয়টি নিয়ে কোনো কাজ করার সময় অবশ্যই মানবাধিকারের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে৷ আমাদের মনে রাখতে হবে যে তাঁরা শরণার্থী৷''
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন মিয়ানমারের নিবন্ধিত ৩০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী আছেন৷ তবে অনিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা ৮ লাখ বলে ধারণা করা হয়ে থাকে৷