1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা : রক্ষকই যেখানে ভক্ষক

ডয়চে ভেলের অতিথি লেখক মাসুদ কামাল৷
মাসুদ কামাল
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোশ্চেন’ ডকুমেন্টরিটি খুঁজে পেতে শুরুতে আমার একটু কষ্টই হচ্ছিল৷ ইউটিউবে সার্চ দিলে পাওয়া যায়, কিন্তু যেটা পাওয়া যায় সেটা দেখা যায় না৷ শুরুর এক মিনিটের পরই দৃশ্য বা শব্দ- আর কিছুই নেই৷

https://p.dw.com/p/4NLD4
Bangladesch | Angriff auf Hindu Tempel
ছবি: Tarun Chakraborty Bishnu

তবে আমার এই হতাশা তেমন একটা দীর্ঘস্থায়ী হলো না৷ আজকাল ইন্টারনেটের যুগ, কোনো কিছুই লুকিয়ে রাখা যায় না৷ নানা উৎস থেকে নানা মাধ্যমে ঠিকই চলে আসে৷ আমার ক্ষেত্রেও তাই হলো, ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই সিরিজটির দুটি এপিসোডই পেয়ে গেলাম৷ দেখলাম, এবং কিছুটা হতাশই হলাম৷ হতাশ এ কারণে যে, এ তথ্যগুলো আমরা আগেই জানতাম৷ বিভিন্ন মাধ্যমে আগেই বিচ্ছিন্নভাবে এগুলো দেখা হয়েছে৷ বিবিসি সেগুলোকে গুছিয়ে এক জায়গায় নিয়ে এসেছে৷ আর সেই সাথে নিজেরা কিছু ইন্টারভিউ করেছে৷ আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না, এই তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী বন্ধ করতে ভারতের বিজেপি সরকার এতটা মরিয়া কেন হয়ে গেল? কেন তারা ইউটিউব, টুইটার—সকলকে এটা প্রদর্শনে বাধা দিলো? এই সবই কি বিভিন্ন মাধ্যমে এরই মধ্যে দেখে ফেলেনি ভারতের জনগণ? গুজরাটের ঘটনা আজ থেকে পুরো দুই দশক আগের৷ সেই ঘটনার, ঘটনার প্রতিক্রিয়ার শত শত ফুটেজ এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে অন্তর্জালে৷ সেসব নিয়ে তো এতটা ক্ষিপ্ত হতে দেখা যায়নি বিজেপি সরকারকে৷ তাহলে এবার কেন?

পেছনের কারণগুলো খুব একটা জটিল—তা কিন্তু নয়৷ প্রথমত, বিষয়গুলো একত্রিত হয়ে এবার এসেছে আন্তর্জাতিক একটা মিডিয়াতে৷ দ্বিতীয়ত, সাম্প্রদায়িক সেই জঘন্য কর্মকাণ্ডের পেছনে যে ধর্মীয় বিভেদের চেয়েও বহুগুণ সক্রিয় ছিল রাজনৈতিক মতলব, সে বিষয়গুলোও এই তথ্যচিত্রে পরিষ্কার করে তুলে ধরা হয়েছে৷ ঠিক এই জায়গাটিতেই যত আপত্তি৷ কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা যখন হয়, পেছনের কুশীলবরা সেটাকে ধর্মীয় বিভেদের চেহারাটাই দিতে চায়৷ আড়ালে রাখতে চায় রাজনৈতিক মতলবগুলোকে৷ সেগুলো প্রকাশ পেলেই যত বিপত্তি৷ আর সেই প্রকাশটি যদি হয় নির্বাচনের ঠিক আগে আগে, তাহলে তো মহাচিন্তার বিষয়৷ ভারতের সাধারণ নির্বাচন সামনে, আগামী বছর৷ তাই এমন সংবেদনশীল সময়ে তারা এ ধরনের একটা তথ্যচিত্রের স্বাভাবিক প্রচারকে বন্ধ করতে প্রাণপণ চেষ্টা করবে—এটাই স্বাভাবিক৷

এটা বিভিন্ন দেশেই দেখা যায় যে, নির্বাচনের আগে আগে সাম্প্রদায়িক সংঘাতগুলো কিভাবে কিভাবে যেন দানা বেঁধে উঠতে থাকে৷ আমাদেরও নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে৷ যতদূর শুনেছি, এ বছরের শেষ দিকেই হবে জাতীয় নির্বাচন৷ আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের একটা ক্লাসিক টাইপ আছে৷ এটা সাধারণত শুরু হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কোনো একটা পূজাকে কেন্দ্র করে৷ পূজামন্ডপে ভাংচুর হয়, কোথাও কোথাও প্রতিমাকে অবমাননা করা হয়৷ তবে সহিংসতাটা মূলত হয় তখন, যখন সংখ্যালঘুদের কারও মাধ্যমে সংখ্যাগুরুদের ধর্মের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো আঘাতের অভিযোগ তোলা হয়৷ যেমন ধরা যাক, কুমিল্লার সেই ‘বিখ্যাত’ ঘটনাটির কথা৷ প্রতিমার হাতে কোরআন শরীফ! এটা কি হিন্দু ধর্মাবলম্বী কেউ করেছে? এটা কি সম্ভব? কারণ, তারা কি জানে না, এর প্রতিক্রিয়া কতটা মারাত্মক হতে পারে? তাহলে আত্মহত্যার ইচ্ছা তার কেন হবে? আবার বিপরীত দিকে, প্রকৃত কোনো মুসলমান কি এটা করতে পারে? কোরআনকে যে ভালোবাসে, যে ধর্মপ্রাণ মুসলমান, সে কি তার পবিত্র ধর্মগ্রন্থকে নিয়ে প্রতিমার হাতে রেখে আসতে পারে? আসলে এভাবে হয় না৷ একেবারে সহজ যুক্তিতেই বলা যায়, পুরো অপকর্মটিই ঘটানো হয়েছে৷ যারা ঘটিয়েছে, তাদের কোনো ধর্মীয় উদ্দেশ্য ছিল না, ছিল রাজনৈতিক কিংবা বৈষয়িক স্বার্থ হাসিলের ঘৃণ্য প্রচেষ্টা৷

ইদানিং সাম্প্রদায়িক সংঘাত শুরুর আরেকটা পদ্ধতি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে৷ সেটা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অন্য ধর্মের কোনো বিষয়ে অবমাননাকর কিছু করা৷ এরকম একাধিক মর্মান্তিক ঘটনা আমরা দেখেছি৷ ফেসবুকের ছোট্ট একটা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে ভাংচুর, বাড়িঘরে আগুন, মন্দির বা ধর্মশালাকে গুড়িয়ে দেওয়া—অনেক কিছুই হয়েছে৷ লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ঘটনাগুলো ঘটে যাওয়ার পর সরকার হস্তক্ষেপ করেছে, অধিকাংশ সময় সরকারের পক্ষ থেকে ভেঙে দেওয়া উপাসনালয় নতুন করে গড়ে দেওয়া হয়েছে৷ এই নতুন ভাবে গড়ে দেওয়া উপলক্ষে আবার রাজনীতিও হয়েছে৷ জাকজমক করে নতুন মন্দিরের উদ্বোধন হয়েছে৷ সেখানে সংখ্যালঘুদের কাছে এমন বার্তা পৌছে দেওয়া হয়েছে যে, তাদের প্রতি এই সরকারের ‘মায়া-মমতা' অত্যন্ত বেশি বলেই আগের চেয়েও ভালো একটি উপাসনালয় পাওয়া গেল! সুতরাং তাদেরও উচিত হবে এই সরকারকে টিকিয়ে রাখা৷

এতে যে ফল কিছু হয় না, এমনও নয়৷ বাংলাদেশে একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে, এখানকার হিন্দুরা প্রধানত আওয়ামী লীগের সমর্থক৷ মুখে তারা যা কিছুই বলুক না কেন, ভোটটা তারা ঠিকই গিয়ে নৌকা মার্কায় দিয়ে আসে৷ আমার নিজের বাড়ি যে এলাকায়, সেটা মূলত হিন্দু অধ্যুষিত৷ আমার স্কুল কলেজ জীবনের বন্ধু-বান্ধবের সিংহভাগই হিন্দু ধর্মাবলম্বী৷ তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় অনেক সময়ই প্রসঙ্গগুলো এসেছে৷ আমার এমনই এক বন্ধু একদিন বলল, আমরা পড়েছি এক জটিল পরিস্থিতিতে৷ আমরা যদি আওয়ামী লীগের বিরোধী পক্ষের কাউকে ভোট দিতেও চাই, পারি না৷ কারণ, বিরুদ্ধে ভোট দিলেও কেউ তো বিশ্বাস করবে না যে—দিয়েছি৷ ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই নৌকায় ভোট দিতে হয়৷ অথচ তুমি তো জানো, বন্ধুটি বলছিল, বিষয়-আশয়ের দিকে দিয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগের লোকদের হাতেই হয়েছি! আসলেই এই এক অদ্ভুত বাস্তবতা৷ এক উভয় সংকটে আমাদের সংখ্যালঘুরা৷

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহুল আলোচিত ঘটনার কথাই ধরুন৷ কী এক সামান্য ছুতা-নাতায় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হলো৷ সারা দেশে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা৷ এক পর্যায় সরকার হস্তক্ষেপ করলো৷ ক্ষতিগ্রস্থদের কেউ কেউ ক্ষতিপূরণ পেলেন৷ এই ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়েও আর এক দফা রাজনীতি৷ কিন্তু মূল যে কাজ, দায়ী ব্যক্তির সাজা, সেটাই আর হলো না৷ উল্টো কদিন পরেই যখন সেখানকার স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সরকারি দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলো সেই প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তিকেই! পরে অবশ্য দেশজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে সেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হয়েছিল৷ মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও এলাকায় তার দাপট কিন্তু কমেনি কিছুমাত্র৷ সরকারি দলের আনুকূল্য সে ঠিকই পেয়ে যাচ্ছে৷ আর ওই ঘটনার জন্য কোনো শাস্তিও সে পায়নি৷

অথবা ধরা যাক কুমিল্লার কথা৷ প্রতিমার হাতে কোরআন শরীফ নিয়ে যখন কুমিল্লাসহ পুরো দেশে তাণ্ডব, তখন ‘তৌহিদী জনতা'র ব্যানারে যে মিছিল হয়েছিল, সেখানে কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকেই দেখা গেছে! তাহলে আক্রান্ত সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তার আশায়, আশ্রয় পেতে, যাবে কার কাছে? শেষ পর্যন্ত তাদেরকে কিন্তু ওই জনপ্রতিনিধির কাছেই যেতে হয়েছে৷ তিনি এদিকে যেমন আছেন, ওদিকেও আছেন তেমনি সমান দাপটে৷ সহিংসতার এই ঘটনাটিকে বরং তিনি ব্যবহার করেছেন নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির উপকরণ হিসাবে৷ সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এটিই, অঘটন ঘটবে কিন্তু দায়ী বা অপরাধীর কোনই বিচার হবে না৷ এই যে বিচার না হওয়া, এটিই পরবর্তীতে আরও একটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণ হিসাবে কাজ করতে থাকে৷

মাঝে মধ্যে সান্ত্বনা দেওয়া হয়৷ সরকার দেয়, সরকারের আনুকূল্যে গড়ে ওঠা একাধিক সংগঠন দেয়৷ সারাদেশে সম্প্রতি সম্মেলন হয়৷ বিভিন্ন ধর্মের লোকদের নিয়ে আলোচনা হয়, গোলটেবিল বৈঠক হয়৷ ধর্মগুরুদের কাছে আহ্বান জানানো হয়, তারা যেন নিজ নিজ উপাসনালয়ে আগত ধর্মপ্রাণ মানুষদের প্রতি আহ্বান জানান ধর্মীয় সম্প্রতি বজায় রাখাতে৷  বিষয়টি কি তাহলে কেবলই ধর্মীয়? সম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার বা প্রশাসনের কি কোনই ভূমিকা থাকবে না? পৃথিবীর যে সকল দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রয়েছে, অথবা সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে নিয়ন্ত্রণ করা গেছে, সেখানে কার ভূমিকা মূখ্য ছিল? সরকার ও প্রশাসনের, নাকি ধর্মগুরুদের?

একটা উদাহরণ দিই৷ মাস দুয়েক আগে শেরপুরে একটা অনুষ্ঠান হয়েছিল৷ ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সচেতনামূলক আন্তঃধর্মীয় সংলাপ৷ সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ ফরিদুল হক খান দুলাল৷ তিনি সেখানে ধর্মীয় সম্প্রতি বজায় রাখতে নানা কথা, নানা উদাহরণ দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘পবিত্র কোরআন ও মহানবী (সা.) এর জীবনী তথা মদিনা সনদ, মক্কা বিজয়ের ঘটনা, এবং বিভিন্ন হাদিস থেকে আমরা অসাম্প্রদায়িক সমাজ ব্যবস্থার কথা জানতে পারি৷ বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক সমাজ রক্ষায় আমাদেরকে মহানবীর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ধারা অব্যাহত রাখতে হবে৷’’ তার উচ্চারিত এই দুটি বাক্য থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়, অসাম্প্রদায়িক ব্যবস্থা কায়েমের জন্য আমাদেরকে মহানবী (সা.) এর জীবনধারাকে অনুসরণ করতে হবে৷ কিন্তু এই কাজটা কে করবে—হিন্দুরা নাকি মুসলমানরা? কথাগুলো যদি মুসলমানদের উদ্দেশ্যেই বলা হয়ে থাকে, তাহলে কি ধরে নিতে হবে মুসলমানরাই সব সময় থাকে সাম্প্রদায়িক সংহিসতার পিছনে? একটি ধর্মের মানুষকে দায়ি করে কি অপর ধর্মের মানুষের সঙ্গে সম্প্রীতি স্থায়ী করা যাবে?

মাসুদ কামাল, সাংবাদিক
মাসুদ কামাল, সাংবাদিকছবি: Hashibur Reza Kallol

আসলে সমস্যাটি এখানেই৷ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধে ধর্মের বাণীই একমাত্র প্রতিষেধক হতে পারে না৷ সবাই যদি ধর্মের কথা শুনত, সে অনুযায়ী চলত, তাহলে তো পৃথিবীটাই একটা স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়ার কথা৷ তেমন পৃথিবী কখনোই ছিল না, কখনো হবেও না৷ আর সে কারণেই ধর্মের বাইরেও পার্থিব আইনকানুনের প্রয়োজন পড়ে৷ আইন প্রয়োগের দরকার হয়৷ আইনটা যদি ঠিক মতো প্রয়োগ হয়, সাজাটা যদি পক্ষপাতহীনভাবে দেওয়া যায়, তাহলে আর সকলের মধ্যে ঐশ্বরিক নীতিবোধ জাগ্রত করার চেষ্টায় আমাদের আলহাজ মন্ত্রীদের কাতর হতে হবে না৷ এই যে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন এলাকায় অনুষ্ঠান করে বেড়াচ্ছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষায় এসব কি আদৌ কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে? কখনো পারতো? তাঁর কথায় কি সংখ্যালঘুরা নিশ্চিন্ত বা নিরাপদ বোধ করতে পারে? না, পারে না৷ কারণ এই ভদ্রলোক যতটা না ধর্ম প্রতিমন্ত্রী, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনীতিবিদ৷

একথা মানতেই হবে, আমাদের দেশে হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে রাজনীতি যতটা হয়, তাদেরকে সুরক্ষা দেওয়ার আগ্রহ ততটা কারো মধ্যেই দেখা যায় না৷ এদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাত একটা নিয়মিত বিষয়৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো একটি ঘটনারই দৃষ্টান্তমূলক কোনো বিচার হয়নি৷ সাজা পায়নি প্রকৃত অপরাধী৷ সরকার সমাজে এমন কোনো বার্তা দিতে পারেনি যে, এ ধরনের অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না৷ ফলে, হামলাকারীরা যেমন সতর্ক হয়নি, আক্রান্তরাও তেমনি নিজেদেরকে নিরাপদ অনুভব করতে পারেনি৷

শেষ করার আগের আর একটা কথা বলা দরকার৷ কোনো দেশ, সমাজ বা জনগণকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের বাইরে রাখা যায় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারবে৷  রাষ্ট্র হিসাবে আমরা কি আসলেই ধর্ম নিরপেক্ষ হতে পেরেছি? আচরণগতভাবে কী অবস্থায় আছি, সেটা বিশাল অস্পষ্টতায় ভরা, তাই সে আলোচনা বরং বাদই থাক৷ তত্ত্বগতভাবেই কি আমরা ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র? আমাদের সংবিধানে অবশ্য রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসাবে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি আছে৷ আবার এই সংবিধানেই ইসলাম কে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে৷ এই দুটি বিষয় কি কোনো বিবেচনাতেই একে অপরের পরিপূরক? নাকি সাংঘর্ষিক? সংবিধানের মধ্যেই এমন সব পরস্পরবিরোধী উপাদানকে সজীব রেখে সকল ধর্মাবলম্বীর সমঅধিকার নিশ্চিত করা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান কামনা করা, আসলেই বাস্তবসম্মত কি-না, তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য