1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের ছাত্রদের প্রতি সংহতি পশ্চিমবঙ্গে

২০ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশের কোটা বিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থী মৃত্যুর প্রতিবাদ কলকাতায়। বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের উদ্দেশে মিছিল করে বাম ছাত্র সংগঠনগুলি। পুলিশ তাদের পাকড়াও করে বলে অভিযোগ।

https://p.dw.com/p/4iXVK
বাংলাদেশে সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল কলকাতায়
রবীন্দ্র সদন চত্বর থেকে মিছিল শুরু করেন বাম ছাত্র কর্মীরা। এই মিছিল থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি ওঠে। ছবি: Bikas Das/AP/picture alliance

কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ। ঢাকা সহ অন্যান্য এলাকায় কোটা বাতিলের দাবিতে চলছে বিক্ষোভ। সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলিতে মৃতের সংখ্যা শতাধিক। এই ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতায় পথে নেমেছে বিভিন্ন সংগঠন।

বাংলাদেশের ছাত্রদের প্রতি সমর্থন জানিয়েপশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি বাম ছাত্র সংগঠন শুক্রবার কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশন অভিযান চালায়। এদের মধ্যে ছিল এআইডিএসও, এআইএসএফ, এআইএসএ প্রভৃতি সংগঠন।

রবীন্দ্র সদন চত্বর থেকে মিছিল শুরু করেন বাম ছাত্র কর্মীরা। এই মিছিল থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি ওঠে। অভিযানে আধঘন্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে নন্দনের সামনের দুই রাস্তা। নন্দনের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করে মিছিলকারীরা, তাদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। মিছিলকারীদের দাবি, ৭০ জনকে পাকড়াও করে লালবাজারে নিয়ে যায় কলকাতা পুলিশ। বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে পৌঁছতে পারেননি তারা।

'সব দেশে শাসকেরা সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ করে'

ডি এস ও রাজ্য সভাপতি মণিশঙ্কর পট্টনায়েক বলেন, "আমরা বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের পুলিশ বাধা দিয়েছে। সব দেশেই শাসকরা এভাবে সাধারণ মানুষের কণ্ঠরোধ করে। যেটা ঢাকায় হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গেও সেই ছবি।"

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংসতা প্রসঙ্গে বাম যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "কোনো অবস্থাতেই কোনো দেশে পুলিশের গুলিতে ছাত্র মৃত্যু কাম্য নয়। এই সমস্যা সমাধানের অনেক পথ আছে। আন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি জানানোর মিছিলে পুলিশ ধরপাকড় করেছে। এই রাজ্যে ছাত্র যুবদের কোন আন্দোলনের পাশে থাকে পুলিশ?"

ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। বীরভূমের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করেন ওপার বাংলার অনেক ছাত্র-ছাত্রী। তারা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পেরে উদ্বিগ্ন। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তারা শান্তির দাবিতে মিছিল করেন।

শুক্রবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন কার্যালয়ের বাইরে নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়েছে। হাইকমিশনের মূল ফটকের কাছে রয়েছে একটি পুলিশ কিয়স্ক। সেখানে ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকরা নিরাপত্তার দেখভাল করছেন।

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের মানুষরাও প্রতিবাদ করেছেন বাংলাদেশের সহিংসতা নিয়ে। সমাজ মাধ্যমে শিল্পী কবীর সুমন লিখেছেন, "বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় চুপ করে বসে থাকতে পারি না। থেকেছি কয়েক দিন। আর পারছি না। কিন্তু অবস্থাটা যে ঠিক কী, কী কী কারণে যে এমন হল এবং হচ্ছে, কারা যে এতে জড়িত তাও তো ঠিকমতো জানি না। তাও পঁচাত্তর উত্তীর্ণ এই বাংলাভাষী করজোড়ে সব পক্ষকে মিনতি করছি: অনুগ্রহ করে হিংসা হানাহানি বন্ধ করুন। ঢাকা সরকারকে অনুরোধ করছি: বাংলা ভাষার কসম শান্তি রক্ষার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আপনাদের ছাত্রবাহিনী যেন হিংসার আশ্রয় না নেন।”

কবি ও সাংবাদিক মৃদুল দাশগুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেন, "আজ থেকে ৫২-৫৩ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। আজ যারা মুক্তিযোদ্ধা বা তার পরিবারের সদস্য হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন, তারা সবাই যুদ্ধে অংশ নেননি। মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট বিক্রি হয়েছে। হাসিনার রাজাকার সংক্রান্ত মন্তব্য ছাত্রদের মনে লেগেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ চাকরি পাবে, বাকিদের কেন রাজাকার বলা হবে?

বাংলাদেশে বসবাসকারী চাকরিজীবী ও পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকার। মুখ্য সচিব এ নিয়ে কথা বলেছেন বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। নবান্নের তরফ থেকে আলোচনা করা হয়েছে ডেপুটি হাইকমিশনের সঙ্গে। বাংলাদেশ থেকে অনেকে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, যাতে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়। এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিদেশ মন্ত্রকে অনুরোধ জানিয়েছে নবান্ন।

পশ্চিমবঙ্গের অনেক অধিবাসীর আত্মীয়রা বাংলাদেশে থাকেন। সে দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না এপারের মানুষজন। ওপার থেকে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে বাংলাদেশিরা এই শহরে আসেন। তাদের অনেকে আটকে পড়েছেন।

কলকাতার মারকুইস স্ট্রিটে সারা বছর বাংলাদেশিদের আনাগোনা লেগে থাকে। এখানে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের অনেকগুলি কেন্দ্র রয়েছে। বাংলাদেশের মুদ্রার দাম কমে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন সে দেশের মানুষরা। শনিবার মারকুইস স্ট্রিট থেকে একটি বাস বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয়। তবে যাত্রীদের আশঙ্কা, সীমান্ত পার হয়ে নিজেদের দেশে ঢুকতে পারলেও বাড়ি পৌঁছাতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা নেই।

বাংলাদেশের অশান্তির জের পড়েছে বাণিজ্যে। মার খাচ্ছে আমদানি-রপ্তানি। ভারতের দিক থেকে হাতে গোনা কয়েকটি পণ্যবাহী গাড়ি বাংলাদেশে গেলেও, ওপার থেকে আসেনি বললেই চলে। পেট্রোপোল সীমান্তে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে একের পর এক ট্রাক। এগুলির বেশ কিছুতে কাঁচা সবজি বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছিল। সেগুলি নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷