বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া মাছ ফিরে আসছে
১৭ ডিসেম্বর ২০১০একজন মাসুদ ফকির
পাবনার ছোট নওগাঁ গ্রামের মাসুদের পড়ালেখা খুব এগুয়নি৷ এসএসসি পাশ করার পর তাদের এলাকার অনেকের মতো তাকেও নামতে হয়েছে কাজে৷ কিন্তু কাজ পাওয়া তো এত সহজ নয়৷ বাবার আর্থিক অবস্থাও তেমন ভালো নয়৷ ব্যাবসা করতে হলে টাকার প্রয়োজন৷ কিন্তু কি করবে সে৷ বাড়ির পাশের মজা পুকুরের পাশে চাতালের দেবদারু গাছের গুঁড়িতে গা এলিয়ে দিয়ে ভাবে সে৷ হঠ্যাৎ তার মনে হয়, আচ্ছা এই পুকুরটাতো পড়ে আছে, এখানে যদি মাছ চাষ করা যায়, তাহলে তো বেশ হয়৷ গ্রামের হাটে এখন তো মাছ মেলেই না৷ যা ভাবা তাই কাজ৷ সে নেমে পড়ে মাছ চাষে৷ না, বিদেশি প্রজাতি নয়, দেশি প্রজাতির মাছ চাষ করছে সে৷ এখন বেশ ভালো আয় তার৷ তবে মাসুদের মতো অনেকেই নয়৷ অনেকেই মাছ চাষ করেন, কিন্তু বাড়তি লাভের আশায় বিদেশি প্রজাতির মাছ৷ অনেক সময় সেই মাছগুলো থাকে রাক্ষুসে প্রজাতির৷ মাছে ভাতে বাঙালি বলে আমাদের এক সময় পরিচিত ছিল৷ কিন্তু মনুষ্য সৃষ্ট নানা কারণে মাছেরা হারিয়ে যেতে বসেছে৷ আর দেশি মাছের জায়গা দখল করে নিচ্ছে বিদেশি নানা জাতের মাছ৷
হারিয়ে যাচ্ছে দেশি মাছের প্রজাতি বৈচিত্র্য
বিগত দুই দশকে দেশের মাছ উৎপাদনের পরিমাণ বিশ্লেষণ করে মৎস্য বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন, অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মোট উৎপাদনে দেশীয় মাছের অবদান ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে৷ দেশি মাছের প্রজাতি বৈচিত্র্যও দিন দিন কমে যাচ্ছে৷
৫১১ প্রজাতির মাছ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যত প্রজাতির মিঠা পানির মাছ আছে, তার অর্ধেক কমে গেছে৷ প্রতিবছর ৯ শতাংশ হারে মিঠা পানির মাছ এখন কমে যাচ্ছে৷ কমার এই হার যদি অব্যাহত থাকে, তবে আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে মুক্ত জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না৷ ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ১২০ প্রজাতির দেশীয় মাছ৷ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে বর্তমানে ২৯৬ প্রজাতির মাছ রয়েছে৷ এর মধ্যে মুক্ত জলাশয়ে রয়েছে ২৬০ প্রজাতির মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি৷
৫৪ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার বা আইইউসিএন বলছে, বাংলাদেশে মোট ৫৪ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে৷ এর মধ্যে ১২ প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব চরম হুমকিতে বা মহাবিপন্নের তালিকায়, ২৮ প্রজাতির মাছ বিপন্ন তালিকায় আর ১৪ প্রজাতির মাছের অবস্থা সংকটাপন্ন৷
সুখবর জানালেন শাইখ সিরাজ
বাংলাদেশের কৃষি বিষয়ক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘মাটি ও মানুষ'এর উপস্থাপক এবং চ্যানেল আই এর বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ৷ তার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ফোন করতেই তিনি জানালেন, মোহনগঞ্জে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান মৎস হাট থেকেই ফিরছেন তিনি৷ এবার সেখানে গিয়ে তিনি দারুণ খুশি৷ কেন? কারণ সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন বিপন্ন এবং হারিয়ে যাওয়া বেশ কয়েক প্রজাতির দেশি মাছের৷ তিনি সেখানে মহাশোল, রানি, নান্দিনা, আড় মাছের হারিয়ে যাওয়া প্রজাতি গুজ্জা, শিলং এরকম বেশ কিছু প্রজাতির মাছ দেখেছেন৷ জেলেরা বলেছে, গত আট দশ বছর আগে তারা এই মাছগুলো পায়নি৷ এবার পেয়েছে৷ তিনি জানালেন, গত বেশ কযেক বছর যাবত প্রজননকালে মাছ না ধরার সরকারি বিভিন্ন ভালো উদ্যোগের কারণেই এই সুফল পাওয়া গেছে৷
যা করা জরুরি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে এসব মাছ তথা জলজ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ খুবই জরুরি৷ সর্বোপরি পুষ্টির উৎস ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্যও দেশীয় মাছের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক