বামপন্থায় ফের ছাত্র–যুবর ঢল
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই, যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই এবং আরও বেশ কিছু বামপন্থি ছাত্র সংগঠন৷ শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে মিছিল করে গিয়ে রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন’ ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি৷ কিন্তু রাজ্যে বিজেপির ক্রমশ শক্তিবৃদ্ধি এবং তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে একের পর এক নেতা, মন্ত্রী বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে আগে থেকেই বিচলিত মমতা ব্যানার্জির সরকার বাম বিক্ষোভ কড়া হাতে দমনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল৷ ফলে ব্যাপক লাঠি চলল ছাত্র–ছাত্রীদের ওপর, রাজপথে ঝরল রক্ত৷ মিছিল রুখতে দাগা হল জলকামান৷ কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ দমানো যায়নি৷ এসএফআই–এর নিজস্ব ফেসবুক পেজে সদস্যরা শেয়ার করেছেন কিছু ছবি, যাতে দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রের প্রবল পরাক্রমের মুখেও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিক্ষোভকারীরা, হাতের পতাকা উঁচুতে তুলে ধরে৷
ছাত্র–যুবদের ওপর পুলিসি অত্যাচারের প্রতিবাদে শনিবার ১২ ঘণ্টার ধর্মঘট ও বন্ধের ডাক দিয়েছিল বাম সংগঠনগুলির একটি জোট, যাতে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস৷ বন্ধের বিরোধী তৃণমূল সরকার অন্যদিকে যান চলাচল জারি রেখে, দোকান বাজার খোলা রেখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার সরকারি চেষ্টা করে৷ সরকারি কর্মচারীদের এদিন কাজে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়৷ ফলে অনেকেই এদিন আর পাঁচটা দিনের মতো কাজে বেরোন৷ লোকাল ট্রেন চলাচল শুরুতে বন্ধ সমর্থকদের অবরোধের কারণে ব্যাহত হলেও পরে ফের স্বাভাবিক হয়৷ কিন্তু লক্ষ্যণীয় যেটা, যে বহু মানুষ এদিন পথে যেতে যেতেই বন্ধ সমর্থকদের কাছে জানিয়ে যান, ছাত্র–ছাত্রীদের ওপর পুলিসের সন্ত্রাস তাঁরা সমর্থন করেননি৷ এবং এদিনও বামপন্থী কর্মীদের মধ্যে দেখা যায় অসংখ্য নবীন মুখ৷ বাংলায় যে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যে নবীন প্রজন্ম আর তাঁদের আদর্শে আস্থা রাখেন না৷ বাঙালি বামপন্থি মানেই পক্ককেশ বয়স্ক নেতা!
বামপন্থি যুব নেতা শতরূপ ঘোষ যদিও এটাকে কোনও আকস্মিক ঘটনা বলে মনে করছেন না৷ তাঁর বক্তব্য, লক ডাউনের সময় যখন শাসক দলের নেতা–কর্মীরা চাল–চুরি আর কাটমানিতেই মজে ছিল, সেখানে বাম ছাত্র–যুবই দিনের পর দিন সমবায় রান্নাঘর চালিয়ে গরিব মানুষকে দুবেলা খাইয়ে গেছে৷ কাজেই নবীনরা আর বামপন্থায় নেই, এটা ভুল কথা৷ এই দুদিনের আন্দোলনেই তার প্রমাণ মিলেছে৷ আগামীদিনে কীভাবে এই আন্দোলন এগিয়ে যাবে, সেই প্রসঙ্গে শতরূপ বললেন, ‘‘যেভাবে জনসমর্থন অর্জন করেছি, সেভাবেই ধরে রাখব৷ মানুষের পাশে থেকে৷ এত কম সময়ে এত মানুষ যে (বন্ধের ডাকে) সাড়া দিলেন, তার প্রথম কারণ, কাল যে ছেলেমেয়েগুলো মার খেয়েছে, লকডাউনের চার–পাঁচ মাস তারাই গরিব মানুষদের খেতে দিয়েছে৷ আর দ্বিতীয় কথা, এরা যে মার খেল, তা তো নিজেদের জন্যে নয়৷ যে পুলিশ আজ মারছে, সেই পুলিশের বাড়ির ছেলেমেয়েরাও যাতে চাকরি–বাকরি পায়, সেই জন্যে এই ছেলেমেয়েগুলো মিছিল করেছে৷ সুতরাং এদের ইস্যুটাও সার্বজনীন, এদের লড়াইটাও সবার জন্য৷’’