বার্সার ইতিহাস গড়ার মুহূর্তগুলো
বুধবার রাতে নিজেদের মাঠে রেকর্ড গড়ল বার্সেলোনা৷ চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলার প্রথম পর্বে চার গোলে পিছিয়ে থাকা বার্সা অলৌকিকতার জন্ম দিয়ে চলে গেছে শেষ আটে৷
প্যারিসের ঝড়
এক, দুটি নয়, পিএসজির কাছে চার-চারটি গোল খেয়েছিল বার্সা৷ ভ্যালেন্টাইন ডে-তে প্যারিসে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম পর্বের ঐ খেলায় জার্মানির ইউলিয়ান ড্রাক্সলারও পিএসজির হয়ে গোল করেছিলেন৷ উনাই এমেরির দল হয়ত ধরেই নিয়েছিল যে তারা শেষ আটে মোটামুটি পৌঁছে গিয়েছে৷চ্যাম্পিয়নস লিগে এর আগে তো চার গোলের লিড নেয়া কোনো দলকে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়া থেকে কেউ বিরত রাখতে পারেনি!
শুরুতেই গোল
কিন্তু দলটা বার্সেলোনা বলেই হয়ত ইতিহাস গড়ার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে বুধবার নিজেদের মাঠে নেমেছিল মেসি, নেইমার, সুয়ারেজরা৷ তবে স্বপ্ন বাস্তবায়নে শুরুতেই পিএসজিকে ধাক্কা দেয়ার প্রয়োজন ছিল৷ মাত্র তিন মিনিট পর সুয়ারেজ ঠিক সেই কাজটিই করে বসেন৷
বিপক্ষ দলও যখন সহায়তায়
বার্সার দ্বিতীয় গোলটি তাদের কোনো ফুটবলার করেননি৷ ইনিয়েস্তার বল মাঠের বাইরে পাঠাতে গিয়ে নিজেদের জালেই ঢুকিয়ে দেন পিএসজির কুরজাওয়া৷ খেলার তখন ৪০ মিনিট পেরিয়ে গেছে৷ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বার্সার তখনও আরও দুটো গোল করা বাকি৷
মেসির গোল
দ্বিতীয়ার্ধের তখন তিন-চার মিনিট চলে গেছে৷ নেইমারকে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় বার্সেলোনা৷ সেখান থেকে গোল করতে সমস্যা হয়নি মেসির৷ ফলে খেলার বাকি ৪০ মিনিটে আর একটি গোল করতে পারলেই অন্তত পরাজয় এড়াতে পারতো বার্সা৷ তবে শর্ত আরও ছিল৷ নিজেদের গোল খাওয়া চলবে না৷ কিন্তু...
স্বপ্নের মৃত্যু?
হ্যাঁ, ঐ যে বললাম, বার্সার গোল খাওয়া চলবে না৷ কিন্তু ৬২ মিনিটের মাথায় ঠিক সেটিই হলো৷ কাভানির গোলে বার্সার ঐতিহাসিক কামব্যাকের স্বপ্ন যেন একেবারে ভেস্তে গেল৷ কিন্তু ক্যাম্প ন্যু-তে উপস্থিত বার্সা সমর্থকরা সেটি হতে দিতে চাননি৷ তাইতো ৮৮ মিনিট পর্যন্ত বার্সা আর কোনো গোল না পেলেও দর্শকরা স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে যাননি৷
নেইমারের জাদু
ম্যাচের আগে নেইমার নাকি সতীর্থদের বলেছিলেন তিনি দুটি গোল করবেন৷ কিন্তু ম্যাচের আর মাত্র কয়েক মিনিট বাকি থাকলেও নেইমার একটি গোলও করতে পারেননি৷ হঠাৎই কী যেন হলো৷ সতীর্থদের বলা কথাটা বোধ হয় নেইমারের মনে পড়ে যায়৷ তাইতো ৮৮ মিনিটের সময় ফ্রি-কিক থেকে অসাধারণ বাঁকানো শটে গোল করে বসেন তিনি৷ ছবিতে নেইমারের শট নেয়ার আগ মুহূর্তে টান টান উত্তেজনায় থাকা দর্শকদের দেখা যাচ্ছে৷
‘ইয়েস উই ক্যান’
বারাক ওবামার কারণে কথাটি এখন বেশ পরিচিত৷ খেলোয়াড়দেক উৎসাহ জোগাতে বুধবার অনেক বার্সা সমর্থক স্টেডিয়ামে এই কথা লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে এসেছিলেন৷ ইনজুরি টাইমের ১৮ সেকেন্ডে পেনাল্টি করে গোল করে নেইমার সতীর্থদের দেয়া কথা রাখেন৷ কিন্তু তখনও এক গোল করা বাকি৷
৯৪ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড
খেলা শেষ হতে বাকি আর মাত্র ৩০ সেকেন্ড৷ আবারও নায়কের ভূমিকায় নেইমার৷ তবে এবার নিজে গোল করেননি, করিয়েছেন৷ তাঁর অসাধারণ পাস থেকে গোল করেন বার্সার ‘লা মাসিয়া’র খেলোয়াড়, ২৫ বছর বয়সি সার্জিও রবার্তো৷ সেই সঙ্গে লেখা হয়ে যায় ইতিহাস৷ লাল-নীল রংয়ের জার্সির নীচে একরকম চাপাই পড়ে যান রবার্তো৷ কোচ লুইস এনরিকও যোগ দেন তাতে৷
অসাধারণ দৃশ্য
এমন এক ম্যাচ শেষে এরকমইতো হওয়ার কথা৷ এর আগে দ্বিতীয় বিভাগের খেলায় চার গোলের লিড পেরিয়ে যাওয়ার ইতিহাস থাকলেও চ্যাম্পিয়নস লিগের মতো ইউরোপের সেরা হওয়ার প্রতিযোগিতায় এই ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল৷