1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিএনপি কি এখন একক নেতৃত্বে চলছে?

২৪ জুন ২০২১

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন আর দলীয় কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না। আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারাও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সব সিদ্ধান্ত দেন বিদেশে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

https://p.dw.com/p/3vVct
বিএনপি অফিস
ফাইল ছবিছবি: DW

বিএনপির কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে এই চিত্র স্পষ্ট হয়েছে। তাই দলের মধ্যে হতাশা আর নিস্ক্রিয়তা বাড়ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২২ জুন দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ওই দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লিভার ও অন্যান্য জটিলতার চিকিৎসা বিদেশের কোনো উন্নত কেন্দ্রে প্রয়োজন। এ পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি।’’

এর আগে অবশ্য খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে দলের প্রতি ক্ষোভ জানানো হয়। দলের পক্ষ থেকে কোনো অবস্থান না নেয়ায় খালেদা জিয়ার পরিবার ওই ক্ষোভ প্রকাশ করে।

জানা গেছে, বিএনপির পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এরইমধ্যে সরকারের দুইজন মন্ত্রীর সাথে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে কথা বলা হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আবেদন জনানো হবে বলে জানা গেছে। আবেদন জানানোর আগে অনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক করতে চান না বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। আগে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় তারা সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত সিগন্যাল পেতে চায়। সরকার চায় খালেদা জিয়া শর্ত মেনে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাক। জানা গেছে, সরকারের শর্তগুলোও পর্যালোচনা করে দেখছে বিএনপি। বিএনপি চাইছে যত কম শর্তে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো যায়।

কার্যত দল চালাচেছন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশের বাইরে থেকেই তিনি দলের সব সিদ্ধান্ত দিচেছন। এখানে যারা আছেন তারা শুধু মাত্র তা বাস্তবায়ন করছেন। বিএনপিতে এখন খালেদা জিয়া পন্থীরা বলতে গেলে পুরোপুরি কোণঠাসা। তাদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেই। দলের মহাসচিবও তারেক রহমানকে না জনিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাই সরকারের সাথে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে কোন শর্ত মানা হবে কি হবে না তা তিনিই ঠিক করবেন।
খালেদা জিয়ার দীর্ঘ অসুস্থতা এবং দুর্নীতির মামলায় শাস্তির বিষয়টি তাকে রাজনীতির বাইরে নিয়ে গেছে। তিনি এখন আর দলীয় কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন না। তার সঙ্গে দলের বিষয় নিয়ে কথা বলারও তেমন সুযোগ নাই। তাই বিএনপি এখন পুরোপুরি তারেক রহমান নির্ভর হয়ে পড়েছে। কিন্তু সেটা নিয়ে দলে আছে দুই মত।

খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড, করোনা পরিস্থিতি এবং খালেদা জিয়ার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় বিএনপি এখন অনেকটাই বিবৃতি এবং ভার্চুয়াল মিটিং কেন্দ্রিক দলে পরিণত হয়েছে। তবে ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতারা আজকাল কিছুটা সক্রিয় হয়েছেন। এর কারণ সামনে নতুন কমিটি হবে। তাই যারা মহানগরের শীর্ষ পদে আছেন এবং নতুন করে পদের প্রত্যাশীরা বিভিন্ন নাগরিক ও সামাজিক ইস্যুতে কর্মসূচি দিচ্ছেন। যেমন ২৪ জুন তারা পানির দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে ওয়াসার সামনে কর্মসূচি পালন করেছে।

তারেক রহমানকে দিয়ে বিএনপি চলবে না: ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

বিএনপির সুহৃদ বলে পরিচিত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘বিএনপি খালেদা জিয়ার জন্য কিছুই করেনি। তার চিকিৎসার জন্য করেনি। তার মুক্তির জন্যও করেনি। খালেদা জিয়া এখন মানসিক ডিপ্রেশনে ভুগছেন। বিএনপি এখন আরা খারাপের দিকে যাচ্ছে। তারা কোনো আন্দোলন করছে না। আন্দোলন করতেও নাকি দেশের বাইরে থেকে নিষেধ করা হচ্ছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘তারেক রহমানকে দিয়ে বিএনপি চলবে না। আসমানে বসে সেখান থেকে এখানকার পার্টি কন্ট্রোল করার চেষ্টা একটা বুজরুকি ব্যাপার। আমি তাকে পড়াশুনা করার পরামর্শ দিয়েছিলাম সেটা করলেও কিছুটা কাজ হত।’’

বিএনপির ভাইস চেয়াম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘‘তারেক রহমানের নেতৃত্বে গত আড়াই বছরে বিএনপি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে সংগঠিত। সরকার সমর্থকেরা তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছে।’’

দলকে চাঙা করার সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

আর খালেদা জিয়ার পরিবারের চেষ্টার পর দল এখন আরো বৃহত্তর পরিসরে তাকে দেশের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করছে। তার পরিবারের কিছু সীমবদ্ধতা আছে বলে জানান বিএনপির এই নেতা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘দলকে চাঙা করার সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’’

এতদিন পর দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ এখন। তাই দলের স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়েছে।’’

সামনে নির্বাচন কমিশন নিয়ে একটি রাজনৈতিক অবস্থানে যেতে চায় বিএনপি। মির্জা ফখরুল জানান, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে তারা একটি সিদ্ধান্ত নেবেন।