1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নেতারা লন্ডনের ওহির অপেক্ষায় বসে থাকেন’

২৯ নভেম্বর ২০১৯

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে হাইকোর্টের সামনে বিক্ষোভ করেন বিএনপির সমর্থকদের একাংশ৷ দলের চেয়ারপার্সনকে মুক্তি না দিলে কঠোর আন্দোলনে নামবেন বলে জানাচ্ছেন কোনো কোনো নেতা৷

https://p.dw.com/p/3Txme
ফাইল ছবিছবি: bdnews24.com

তবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাষ্টি, ‘বিএনপির শুভাকঙ্খী’ হিসেবে পরিচিত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন, ‘‘বিএনপি নেতারা অলস হয়ে গেছেন৷ লন্ডনের ওহির অপেক্ষায় বসে থাকেন৷ এভাবে আন্দোলন হয় না৷’’

বিএনপি আন্দোলনের জন্য কতটুকু প্রস্তুত জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৫ ডিসেম্বরের মধ্যে খালেদা জিয়ার জামিন না হলে এক দফার আন্দোলনে যাবে বিএনপি৷ হয় খালেদা জিয়ার মুক্তি, না হয় সরকার পতন৷ এর কোনো বিকল্প নেই৷’’

চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে গত ২৬ নভেম্বর হাইকোর্টের সামনে বিক্ষোভ করে ‘রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম' নামের একটি সংগঠন৷ বিএনপির কর্মীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে৷ এরপর পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে৷ সে রাতেই পুলিশ বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতকে গ্রেফতার করে৷ পরের দিন বিএনপির সহ-সভাপতি হাফিজউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির ও ডাকসুর নির্বাচনে ভিপি পদে ছাত্রদলের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেফতার করে, যদিও তারা সবাই নিম্ন আদালত থেকে ওইদিনই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন৷ 

৫ ডিসেম্বরের মধ্যে খালেদা জিয়ার জামিন না হলে এক দফার আন্দোলনে যাবে বিএনপি: ড. খন্দকার মোশাররফ

হঠাৎ করে সিনিয়র নেতাদের কিছু না জানিয়ে এমন আন্দোলনে নামায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বও হতবাক৷ ওইদিনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘কর্মীরা প্রস্তুত৷ কিন্তু নেতারা তো নির্দেশনা দিচ্ছেন না৷ সেদিন কিন্তু হাজার হাজার নেতা-কর্মী সেখানে ছিলেন না৷ প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠানে হাজার তিনেক মানুষ ছিলেন৷ আর মিছিলের সময় ছিলেন দেড় হাজারের মতো৷ তাতেই কিন্তু একটা বার্তা দেওয়া গেছে৷ খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানি যখন চলছে, তখন জজ সাহেবদের একটা বার্তা দিতে হবে৷ তারা যেন নির্ভয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে৷ সবাই মিলে ঘরে বসে থাকলে তো আর খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না৷ বিএনপির যে আন্দোলনের সামর্থ আছে, সেটাও বুঝিয়ে দিতে হবে৷’’ 

২৬ নভেম্বরের ঘটনার পর বিএনপিতে গ্রেপ্তার-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে৷ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন৷

২৬ নভেম্বরের ঘটনায় পুলিশ শাহবাগ থানায় ২৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে৷ এতে বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যসহ জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদেরও আসামি করা হয়৷ 

ওই মামলায় জামিন পাওয়া বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সেখানে ছিলাম না৷ তারপরও আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷’’ সিনিয়র নেতাদের না জানিয়ে আন্দোলনে নামা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যে কেউ যে কোনো সময় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করতে পারেন৷ মিছিল করতে পারেন৷ মিছিল করা তো আর নিষেধ না৷ আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না৷ ফলে আমরা যতই লুকোচুরি করি না কেন, আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই৷’’

সবাই মিলে ঘরে বসে থাকলে তো আর খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না: ড. জাফরুল্লাহ

খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আগামী ৫ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে৷ বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, বিএনপির অধিকাংশ নেতাই চান খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে যেতে৷ কিন্তু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান লন্ডন থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দিচ্ছেন না৷ এমনকি মহাসচিবও নাকি এখন আন্দোলনের পক্ষে নন৷ ফলে দলের নেতারা তাদের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও মনে মনে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন৷ অনেকেই সিনিয়র নেতাদের না জানিয়ে মিছিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তারা৷ 

আন্দোলনের ব্যাপারে নীতি নির্ধারণী ফোরামে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘আমরা তো আন্দোলনের মধ্যেই আছি৷ তবে এক দফার আন্দোলনের ব্যাপারে এখনো নীতি নির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হয়নি৷ আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়৷’’

এদিকে বিএনপির মনিটরিং সেল সূত্র জানায়, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপি  চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামসহ সারা দেশের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১ হাজার ৯৮৬টি মামলা রয়েছে৷ এসব মামলায় নামে-বেনামে আসামির সংখ্যা ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯০৫ জন৷ এর মধ্যে বর্তমানে জেলে আছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৮০৪ জন৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷