1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিকল্প খামারে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি স্বাস্থ্যের

২৮ জানুয়ারি ২০১৯

বাংলাদেশে বাড়ছে বিকল্প খামার৷ বাণিজ্যিকভাবে কুমিরের চামড়া রপ্তানিও হচ্ছে৷ এই খামারগুলোর সবচেয়ে বড় ঝুঁকি কী? ভবিষ্যত পরিকল্পনাই বা কী? জানাচ্ছেন প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক৷

https://p.dw.com/p/3CHjk
Thailand Krokodilfarm
ছবি: Reuters/A. Perawongmetha

ডয়চে ভেলে: গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে কুমির, সাপ, কচ্ছপ, টার্কিসহ নানা ধরনের খামার হয়েছে৷ জনসাধারণকে এ ধরনের খামার বা চাষে উৎসাহিত করতে সরকার কী কী উদ্যোগ নিয়েছে?

ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক: কুমিরেরটা আগে বলি, যা আমাদের নীতিমালার মধ্যেই আছে৷ যাঁরা এই খামার করতে চান, আমরা তাঁদের অনুমোদন দেই৷ আমরা ‘টেকনিক্যাল সাপোর্ট' দেই৷ ভালুকায় আমাদের একটা কুমির খামার আছে৷ ইতিমধ্যে তারা চামড়া রপ্তানি শুরু করে দিয়েছে৷ এছাড়া টার্কি তো সারাদেশেই আছে৷ এখন আমরা সরকারিভাবে বাচ্চা আমদনিরও অনুমতি দিচ্ছি৷ ‘হ্যাচারি' করার জন্য আমরা উদ্যোক্তাদের আহবান জানাচ্ছি৷ কেউ আবেদন করলে ‘অফিসিয়াল' নিয়ম-কানুনের মধ্যে থেকে আমরা তাঁদের অনুমোদন দিচ্ছি৷

সাপ, কচ্ছপ বা অন্য খামারগুলোর অবস্থা কী?

কচ্ছপ যেহেতু বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির, তাই এক্ষেত্রে কোনো অনুমতি দেওয়ার বিষয় নিয়ে আমরা ভাবছি না৷ হরিণের ক্ষেত্রে কিছু অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে৷ তবে সেটা আমরা দেই না৷ সেটা বন বিভাগ দেয়৷ কেউ যদি বন বিভাগের লাইসেন্স এনে আমাদের কাছ থেকে হরিণ কিনতে চায়, তাহলে আমরা সরকারি দামে চিড়িয়াখানা থেকে তাঁদের কাছে হরিণ বিক্রি করি৷

‘কারো দেখাদেখি নয়, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন’

এই বিকল্প খামার নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

আমরা এই খামারগুলোকে উৎসাহিত করতে চাচ্ছি৷ বিশেষ করে টার্কি, কোয়েল, এমনকি কুমিরের খামারকেও আমরা উৎসাহিত করছি৷ সেক্ষেত্রে আমাদের পরিকল্পনা হলো উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করা৷ এই বিষয়গুলোতে আমরা ‘ভ্যাটেনারি সার্ভিস' দিয়ে যাচ্ছি৷ আমাদের যে সমস্ত ভ্যাটেনারিয়ানরা আছেন তাঁদের আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি৷ আরো ভালো প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা আমাদের আছে, যাতে আমরা এই সার্ভিসটা ভালোভাবে দিতে পারি৷ এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তৈরির পরিকল্পনাও আমাদের আছে৷

এ সব বিকল্প খামার আমাদের অর্থনীতিতে কেমন ভূমিকা রাখছে?

এগুলো সবেমাত্র শুরু হয়েছে...৷ তবে টার্কির একটা বিরাট প্রভাব আমাদের স্থানীয় মার্কেটে আছে৷ টার্কিটা এখানে সম্ভাবনাময়৷ সম্ভাবনার দ্বার যে খুলে গেছে, সেটা আমরা বলতেই পারি৷ কুমিরের ক্ষেত্রে অবশ্য ‘ইনভেস্টমেন্ট' করাটা ‘লংটার্ম'৷ এখানে বিনিয়োগ করলে ৬/৭ বছর পর ‘রিটার্ন' আসা শুরু করে৷ আমাদের কাছে যে হিসাব আছে, তাতে গেল বছর সাড়ে ৩শ' কুমিরের চামরা রপ্তানি করা হয়েছে৷ প্রতি বছরই এমনটা হচ্ছে৷ এর বড় বাজার বর্তমানে জাপান৷

এ সব খামারে নিশ্চয় কিছু মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে?

হ্যাঁ, তা তো হচ্ছেই৷

বাংলাদেশে এ সমস্ত প্রাণীদের খামার আছে কতগুলো? কোনো পরিসংখ্যান আছে কি?

কুমিরের খামার একটাই আছে৷ আর সাপের খামারের কোনো অনুমোদন এখনো আমরা দেইনি৷ কেউ আমাদের কাছে আসেওনি৷ তবে টার্কির খামার বহু আছে৷ আমাদের ‘পোল্ট্রি' নীতিমালায় এটা ছিল না৷ ফলে রেজিস্ট্রেশনের বাধ্যবাধকতাও ছিল না৷ টার্কি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আমরা বসেছি৷ এটা এখন অনেক৷ তাও ১০ হাজারের কম হবে না৷

কোন প্রাণীর খামার সবচেয়ে বেশি?

অবশ্যই টার্কির৷

এই খামারগুলোর মূল উদ্দেশ্য কী?

অর্থনৈতিক তো অবশ্যই৷ টার্কি তো পুরোপুরি অর্থনৈতিক৷ এটা থেকে আমাদের মাংসের জোগান হচ্ছে, ডিমেরও জোগান দিচ্ছে টার্কি৷ পাশাপাশি এটা যাঁরা করছে, তাঁদের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে৷ প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে৷ আর কুমির পুরোপুরি রপ্তানিমুখি একটা ফার্ম৷

খামারের পরিবেশগত ঝুঁকিটা আপনারা কীভাবে দেখেন?

পরিবেশের দিকে আমরা সবচেয়ে বেশি মনোযোগী৷ আমাদের যে সব সাধারণ খামার আছে যেমন গরু, ছাগল – এগুলো করতে হলেও আমরা পরিবেশের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করেছি৷ এই ছাড়পত্র ছাড়া আমরা কাউকে অনুমোদন দেই না৷ এই ফার্মগুলো যেন পরিবেশের বিপর্যয় না ঘটায়, সেদিকে আমরা খুবই গুরুত্ব দিয়ে থাকি৷ 

কোন প্রাণীর খামার করা ঝুঁকিপূর্ণ?

আসলে সব প্রাণীর খামার করাই ঝুঁকিপূর্ণ৷ প্রাণী নিয়ে যেহেতু খামার হয়, তাই সেখানে নানা ধরনের ঝুঁকি তো আছেই৷ প্রথমত খামারিদের দিক থেকে যদি ধরি, তাহলে রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে যদি কোনো প্রাণী অসুস্থ্য হয় বা মারা যায়, তার ঝুঁকি আছেই৷ সবগুলোর ক্ষেত্রেই এই অর্থনৈতিক ঝুঁকি আছে৷ এখানে খামারির সর্বস্বান্ত হওয়ার সম্ভবনাও আছে৷

প্রাণীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনটা?

ঝুঁকি সবগুলোতেই আছে৷ আপনি যেদিক থেকে বলছেন, সেটা তো অবশ্যই কুমির৷ এর কারণ, কুমির মাংসাশী প্রাণী৷ তাই যাঁরা এদের খাবার দেয় বা লালনপালন করে, তাঁদের প্রাণের ঝুঁকি তো আছেই৷ এখানে সাবধানতা অবশ্যই নিতে হবে৷ আরেকটা হলো রোগ-বালাইয়ের ঝুঁকি৷ আমাদের মানবদেহে যেসব রোগ-বালাই হয়, তার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই জীবজন্তু থেকে আসে৷ সেক্ষেত্রে ঝুঁকি তো থেকেই যায়৷

ঝুঁকির বিষয়টি মোকাবেলায় তাঁদের কী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়?

আমরা প্রশিক্ষণ দেই৷ তবে কুমিরের ক্ষেত্রে আমরা এখনও প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করিনি৷ এখানে একটি মাত্র কুমিরের খামার হয়েছে৷ তাই এখনও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি৷ এই খামারে যে চিকিৎসক কাজ করেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে বা কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷ তবে টার্কি খামারে আমরা এ কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছি৷

যাঁরা এই ধরনের বিকল্প খামার করতে আগ্রহী, তাঁদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

আমি তাঁদের বলব যে, কারো দেখাদেখি এখানে আসবেন না৷ যদি করতে চান, তাহলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলুন৷ আপনি আগে জানেন আপনার কী ধরনের প্রস্তুতি দরকার৷ এর জন্য আপনার যে ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন, সেই ট্রেনিংটা আপনি আগে নিন৷ এর যে ঝুঁকি আছে, সেটা জানুন৷ সবকিছু জেনে তারপর আপনি এখানে আসুন৷ আরও একটা জিনিস দরকার৷ শুধু খামার করলেই হবে না, এটা বাজারজাত কীভাবে করবেন সেটাও আপনাকে ভাবতে হবে, জানতে হবে৷ তাই আমি শুধু বলব, শখের বসে এখানে না এসে জেনে-বুঝে যেন আপনি এখানে আসেন৷

বিকল্প খামার করার আগে কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত বলে মনে করেন? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷ 

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান