1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মারাদোনা থেকে সুয়ারেজ

২৬ জুন ২০১৪

জমে উঠেছে বিশ্বকাপ৷ অঘটন, বড় বড় দলের বিদায়, অসাধারণ গোল – সবই দেখা যাচ্ছে৷ অনাকাঙ্খিত ঘটনাও ঘটছে৷ সর্বশেষ ঘটনা লুইস সুয়ারেজের ইটালির ডিফেন্ডার কিয়েলিনির পিঠ কামড়ানো৷ বিশ্বকাপে অবশ্য এর চেয়ে বড় কেলেঙ্কারিও হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/1CQ0V
Fußball WM 2014 Italien Uruguay
ছবি: Reuters

মারাদোনার ‘ঈশ্বরের হাত'

ব্রাজিল বিশ্বকাপে মঙ্গলবার ইটালির বিপক্ষে মুখ এবং দাঁতের ‘ভুল ব্যবহার' করেছেন উরুগুয়ের ফরোয়ার্ড লুইস সুয়ারেজ৷ স্বাভাবিক অবস্থায় পূর্ণ বয়স্ক মানুষ কামড় দেয় খাবারে, সুয়ারেজ কিনা বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে কামড় বসিয়েছেন ইটালির জর্জো কিয়েলিনির পিঠে! ফলে এবারের আসরে সুয়ারেজের ভবিষ্যৎ সংকটাপন্ন৷

Fußball-WM '86: Maradona und Bilardo jubeln
ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলটিও করেছিলেন মারাদোনাছবি: dpa

১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে কিন্তু মাথার বদলে হাত ব্যবহার করেও পার পেয়ে গিয়েছিলেন দিয়েগো মারাদোনা৷ কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেড না করে, হাত দিয়ে গোল করেছিলেন ‘আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর'৷ টিউনিসিয়ার রেফারি আলী বিন-নাসের বুঝতে পারেননি৷ মারাদোনার হাত দিয়ে করা গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা৷ তারপর অবশ্য ইংল্যান্ডের ছয়জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলটিও করেছিলেন মারাদোনা৷ তবে বেশি আলোচনা হয় সেই হাত দিয়ে করা গোল নিয়েই৷ ২-১ গোলে হেরে কোয়ার্টার ফাইনল থেকেই বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড৷ ম্যাচ শেষে হাতের গোল সম্পর্কে মারাদোনা বলেছিলেন, ‘‘গোলটি হয়েছে আসলে খানিকটা মারাদোনার মাথা আর ঈশ্বরের হাতের সমন্বয়ে৷'' সেই থেকে ‘ঈশ্বরের হাত' বললে সবার মনে পড়ে যায় মারাদোনার সেই হাত দিয়ে করা গোলটির কথা৷ সেবার মারাদোনা শুধু হাত দিয়ে গোলই করেননি, আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপও জিতিয়েছিলেন প্রায় একক নৈপুণ্যে৷

গোল নয়, তবু গোল

১৯৬৬ বিশ্বকাপের ফাইনাল৷ তখনকার পশ্চিম জার্মানির মুখোমুখি স্বাগতিক ইংল্যান্ড৷ ম্যাচে তখন ২-২ সমতা৷ ইংল্যান্ডের স্ট্রাইকার জিওফ হার্স্টের গোলার মতো একটা শট থেকে বল পোস্টে লেগে গোল লাইন বরাবর পড়েই ফিরে আসে মাঠে৷ ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা ‘গোল' দাবি করলে জার্মানরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন৷ জার্মানদের দাবি, বল গোল লাইন পার হয়নি, সুতরাং গোল হয়নি৷ সে আমলে ‘গোল লাইন প্রযুক্তি' বা এমন পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে এমন কোনো প্রযুক্তির শরণাপন্ন হবার সুযোগ ছিল না৷ তাই রেফারি লাইন্সম্যানের মতামত জানতে চাইলেন৷ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লাইন্সম্যান বললেন, ‘গোল'৷ শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলে ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড৷ কিন্তু লাইন্সম্যানের সেদিনের সিদ্ধান্তকে জার্মানরা এখনো মেনে নেয়নি৷

গোল, তবু গোল নয়!

২০০২ বিশ্বকাপে রেফারির ভুলের চরম মূল্য দিতে হয়েছিল ইটালিকে৷ সহ-আয়োজক দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে তাদের সেই ম্যাচে রেফারি কিছু ভুল ছিল রীতিমতো দৃষ্টিকটু৷ ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ইকুয়েডরের বায়রন মরেনো৷ ম্যাচের শুরুর দিকেই দক্ষিণ কোরিয়াকে একটা মরেনো পেনাল্টি দিয়েছিলেন, যা আদৌ পেনাল্টি ছিল না৷ তারপর ইটালির ফরোয়ার্ড ফ্রান্চেসকো টটিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘ডাইভ' দেয়ার অভিযোগে দেখালেন লাল কার্ড৷ অতিরিক্ত সময়ে বাতিল করলেন ইটালির গোল৷ অথচ ‘অফসাইড'-এর অজুহাতে বাতিল না করলে সেটাই হতো ‘গোল্ডেন গোল', ইটালি জিতে যেত৷ অথচ ফল হলো উল্টো৷ ২-১ গোলে হেরে বিদায় নিল ইটালি৷ রেফারি বায়রন মরেনোর ম্যাচ পরিচালনার দক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ৷ ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হেরোইন পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েন মরেনো৷ আড়াই বছরের জেল হয়েছিল তাঁর৷

Zinedine Zidane Statue
কে ঢুঁশ মেরে মাতেরাৎসিকে ফেলে দেন জিদানছবি: AP

ঢুঁশ মেরে জিদানের বিদায়

২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে ইটালির চতুর্থ শিরোপা জয় আর জিনেদিন জিদানের দুঃখজনক বিদায়ের কারণে৷ পেনাল্টি থেকে জিদানের করা গোলে প্রথমে এগিয়ে যায় ফ্রান্স৷ তারপর ইটালির হয়ে গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান মার্কো মাতেরাৎসি৷ পরের ঘটনাটির নায়ক-খলনায়কও তাঁরা৷ অতিরিক্ত সময়ে হঠাৎ বুকে ঢুঁশ মেরে মাতেরাৎসিকে ফেলে দেন জিদান৷ সঙ্গে সঙ্গেই লাল কার্ড৷ মাথা নীচু করে মাঠ ছেড়ে যান ‘জিজু'৷ পরে জিদান জানান, তাঁর বোনকে নিয়ে মাতেরাৎসি আপত্তিকর কথা বলার কারণেই মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি৷ ফ্রান্সকে দ্বিতীয় শিরোপা জেতানোর কাছাকাছি গিয়েও ‘খলনায়ক'-এর মতো মাঠ ছাড়ার পর আর কোনো পেশাদারি ফুটবল ম্যাচ খেলেননি জিনেদিন জিদান৷

আবার মারাদোনা

নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে তখন সবে ফুটবলে ফিরেছেন দিয়েগো মারাদোনা৷ ১৯৯৪ বিশ্বকাপে এলেন আবার আসর মাতানোর লক্ষ্য নিয়ে৷ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত সেই আসরে নায়ক না হয়ে ‘খলনায়ক' হয়েই দেশে ফিরতে হয় তাঁকে৷ নিষিদ্ধ ড্রাগ নেয়ার অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রমাণিত হওয়ার পর কেঁদেকেটে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হয় মারাদোনাকে৷#

Diego Maradona Fußball Flash-Galerie
নায়ক না হয়ে ‘খলনায়ক' হয়েই দেশে ফিরতে হয় তাঁকেছবি: AP

গোলরক্ষকের নিষ্ঠুরতা

১৯৮২ সালের আসরে ফ্রান্সের বিপক্ষে তখনকার পশ্চিম জার্মানির গোলরক্ষক টনি শুমাখার যে কাণ্ড করেছিলেন তেমনটি ফুটবলে কমই দেখা যায়৷ সেমিফাইনালে জার্মানির প্রতিপক্ষ ছিল ফ্রান্স৷ ম্যাচের এক পর্যায়ে পেনাল্টি বক্সের কাছে বল নিয়ে পাত্রিক বাতিস্তা ছুটে এলে তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন শুমাখার৷ মাটিতে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারান বাতিস্তা৷ পরিষ্কার ফাউল৷ শুমাখারকে লাল কার্ড দেখালে সেটাই হতো উপযুক্ত শাস্তি৷ কিন্তু রেফারি ফ্রি-কিক দেননি, হলুদ কার্ডও দেখাননি শুমাখারকে!

পাতানো ম্যাচ

বিশ্বকাপে পাতানো ম্যাচ খেলার অভিযোগ অনেকবারই উঠেছে৷ তবে দু'পক্ষের সমঝোতার ম্যাচের সবচেয়ে লজ্জাজনক দৃষ্টান্ত হয়ে আছে ১৯৮২ সালের আসরের জার্মানি-অস্ট্রিয়া ম্যাচ৷ এক বা দুই গোলে জার্মানি জিতলে দু'দলই উঠে যাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে৷ অস্ট্রিয়া জিতলে বিদায় নেবে জার্মানি৷ ম্যাচ ড্র হলে বা জার্মানি দুটোর চেয়ে বেশি গোলে জিতলে শেষ হয়ে যাবে অস্ট্রিয়ার বিশ্বকাপ অভিযান৷ জার্মানি বা অস্ট্রিয়া বাদ পড়লে পরের পর্বে উঠে যেত আলজেরিয়া৷ কিন্তু প্রতিবেশী দেশ জার্মানি আর অস্ট্রিয়া তা হতে দেয়নি৷ দশ মিনিটের মধ্যে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় জার্মানি৷ তারপর থেকে দু'দলের খেলোয়াড়রা শুধু বল নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করেই সময় পার করে৷ ফলে জার্মানি আর অস্ট্রিয়া পরের পর্বে উঠলেও বিদায় নিতে হয় আলজেরিয়াকে৷

এসিবি/ডিজি (এপি, রয়টার্স)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য