বিশ্বকাপে বাংলাদেশের তারকাদের প্রিয় দল
মাশরাফি, সাকিব, তামিম, জেসি, আকরাম বা ক্রিকেটের বর্তমান ও সাবেক অন্য তারকাদের প্রিয় দল কোনটি? ফুটবল, দাবা, টেবিল টেনিসসহ অন্যান্য খেলার তারকারাই বা কোন দলের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি দেখতে চান? ছবিঘরে থাকছে তারই বিস্তারিত...
মাশরাফি বিন মুর্তজা
মারাদোনাকে দেখে আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়েছেন৷ কিন্তু গতবার আর্জেন্টিনা ফাইনালে হেরে যাওয়ার পর ফুটবল দেখাই বন্ধ করে দিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘‘২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর টিভিতে আর কোনো ফুটবল দেখিনি৷ চার বছর পর সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল দেখলাম একটু৷’’ বিশ্বকাপ অবশ্য দেখবেন, তবে সেটি কোনো প্রত্যাশা নিয়ে নয়, ‘‘তারপর যদি মেসি জিতিয়ে দেয়, তো ভালো৷’’
সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বির
তাঁর আদুরে নাম ছিল ‘বাংলার ম্যারাডোনা’৷ অথচ সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালি সাব্বিরের প্রিয় দল ব্রাজিল! সে দল এবার ২০১৪ সালের মতো হতাশ করবে না বলেই সাবেক এই বলপ্লেয়ারের বিশ্বাস, ‘‘গত বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে নেইমার খেলতে না পারায় জার্মানির কাছে ওভাবে হারতে হয়েছে৷ এবার সেই নেইমার ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতাবে বলে আমার বিশ্বাস৷’’
সাথিরা জাকির জেসি
২০০২ বিশ্বকাপের সময় বিকেএসপিতে পড়তেন৷ প্রথম রাউন্ডে আর্জেন্টিনার বিদায়ের পর যা করেছিলেন তা মনে করে এখনো হাসেন সাথিরা জাকির জেসি, ‘‘তখন ক্লাস সিক্স বা সেভেনে পড়তাম৷ আর্জেন্টিনা বাদ পড়ার পর হাত কেটে-টেটে খুব বাজে অবস্থা করেছিলাম৷’’ বিশ্বকাপে এখন আরেকটি দলও সমর্থন করছেন এই নারী ক্রিকেটার, ‘‘আর্জেন্টিনার পর আমি জার্মানি৷ গত তিন বিশ্বকাপেই জার্মানির কাছে হেরেছে আর্জেন্টিনা৷ আমার তাই বেশি দুঃখ নেই৷’’
শেখ মোহাম্মদ আসলাম
বাংলাদেশ ফুটবলের স্বর্ণসময়ের প্রতিনিধি তিনি৷ আর বিশ্ব ফুটবলের সুবর্ণ সময়ের দলটির সমর্থক শেখ মোহাম্মদ আসলাম, ‘‘পেলের ব্রাজিলকেই সমর্থন করেছি সব সময়৷’’ এখন না হয় পেলে নেই, তবে উত্তরসূরিদের কাছে প্রত্যাশা কমেনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকারের, ‘‘ফুটবল গোলের খেলা৷ আর সেই গোল করার মতো অনেক ফুটবলার রয়েছেন এখনকার ব্রাজিল দলে৷ আমার তাই মনে হয়, তাঁদের বিশ্বকাপ জয়ের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে৷’’
সাকিব আল হাসান
মেসি আর আর্জেন্টিনার পাগলপারা ভক্ত তিনি৷ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সতীর্থদের সঙ্গে এ নিয়ে সাকিব আল হাসানের তর্কযুদ্ধ চলে নিয়মিত৷ বছরজুড়ে তা মেসির দল বার্সেলোনাকে নিয়ে, বিশ্বকাপে হবে আর্জেন্টিনার পক্ষ নিয়ে৷ বিশ্বকাপে প্রিয় দল হতাশ করেছে বারবার; কিন্তু আবারও আশায় বুক বাঁধেন সাকিব৷ এবার মেসির হাতে উঠবে বিশ্বকাপ– এ আশায় জাতীয় দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সময়ও টিভিতে খেলা দেখবেন চ্যাম্পিয়ন অলরাউন্ডার৷
মাবিয়া আক্তার সীমান্ত
১৪ জনের এক দল আছে তাঁদের– কাজিন ও বন্ধু মিলিয়ে৷ বিশ্বকাপের সময় তাঁরা তিন ভাগ– ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল৷ মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ব্রাজিলের পক্ষে৷ কিন্তু বিশ্বকাপের সময় তাঁদের এই গ্রুপের কী যে হবে, এ নিয়ে কপট দুশ্চিন্তায় এসএ গেমসে স্বর্ণপদকজয়ী এই ভারোত্তলক, ‘‘আমরা বলেছি, বিশ্বকাপের সময় ব্রাজিলের ম্যাচ সবাই মিলে দেখতে হবে৷’’ প্রিয় দল ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের ব্যাপারে খুব আশাবাদী সীমান্ত৷
কায়সার হামিদ
১৯৮২-র বিশ্বকাপ জিততে পারেনি ব্রাজিল, কিন্তু হৃদয় জিতে নিয়েছিল বিশ্বজোড়া অনেক ভক্তের৷ কায়সার হামিদেরও৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই ডিফেন্ডারের চোখে এখনো ভাসে জিকো-সক্রেতিসের খেলা৷ এখনকার ব্রাজিল দল নিয়েও আশাবাদী৷ প্রিয় দল ফাইনালে গেলে ইচ্ছে আছে রাশিয়া যাবার, ‘‘২০০২-র ফাইনাল গ্যালারিতে বসে দেখেছি৷ জার্মানিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল৷ এবারও সেমিফাইনাল, ফাইনালের টিকেটের জন্য চেষ্টা করছি৷ ’’
ইমতিয়াজ সুলতান জনি
বাংলাদেশে সমর্থকদের মূল বিভক্তি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায়৷ জাতীয় দলের সাবেক ডিফেন্ডার ইমতিয়াজ সুলতান জনি সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম৷ জার্মানির কট্টর সমর্থক তিনি৷ কেন? ‘‘জার্মানরা ম্যাচ শেষ হবার আগে কখনো হাল ছাড়ে না৷ আর লড়াই করে সবাই মিলে,’’ কারণটা জানান এভাবে৷ এই বিশ্বকাপে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যাচ্ছে প্রিয় দল৷ শিরোপা ধরে রাখায় আশাবাদী তিনি, ‘‘অবশ্য ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-স্পেনকে গোনায় ধরতে হবে৷’’
তামিম ইকবাল
বন্ধু সাকিব আল হাসানের সঙ্গে প্রিয় দল, প্রিয় খেলোয়াড় কিছুই মেলে না তামিম ইকবালের! বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার ভক্ত সাকিব; রিয়াল মাদ্রিদ ও ব্রাজিলের ভক্ত তামিম৷ ব্রাজিলের সমর্থক হয়েছেন তিনি চট্টগ্রামের বিখ্যাত খান পরিবারের আবহের কারণে৷ বাবা-চাচা সবাই যে ওই দলের সমর্থক! এবারের টুর্নামেন্টে নেইমারের হাতে ট্রফিটা খুব করে দেখতে চান তামিম৷ প্রিয় বন্ধু সাকিবকে তাহলে খোঁচানো যাবে খুব!
সাবিনা খাতুন
নতুন প্রজন্মের অনেকেই আর্জেন্টিনাকে ভালোবেসেছেন মেসিকে দেখে৷ যেমন, সাবিনা খাতুন৷ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক বলছিলেন, ‘‘ফুটবল যখন থেকে বুঝি, তখন থেকে তো মেসিকেই কেবল দেখছি৷ মেসির কারণেই আমি আর্জেন্টিনার সমর্থক৷’’ এ বছর ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগে খেলে আসা সাবিনা জানালেন, ‘‘প্রতি বিশ্বকাপই আশা নিয়ে দেখতে বসি৷ এবারও আশায় থাকবো, মেসি যেন আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারেন৷’’
আলফাজ আহমেদ
কিশোর লিগ খেলা ছোট্ট ছেলেটি প্রথম বিশ্বকাপ দেখে ১৯৮৬ সালে৷ আর দিয়েগো মারাদোনাকে দেখার পর মনে হয়, ফুটবলার তাঁকে হতেই হবে৷ তা হয়েছেন আলফাজ আহমেদ৷ প্রিয় দল আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন মারাদোনা৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকারের এবারের প্রত্যাশা লিওনেল মেসির কাছে, ‘‘ও তো ফুটবলে সব শিরোপাই পেয়েছে৷ আশা করি এবার বিশ্বকাপটাও পাবে৷’’
শফিকুল ইসলাম মানিক
১৯৯৮ সালে এক কোচিং কোর্সের জন্য ব্রাজিলে গিয়ে দেখা হয় রোমারিও, বেবেতো, কার্লোস আলবের্তো পারেইরা, মারিও জাগালোর মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গে৷ জাতীয় দলের সাবেক কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক অবশ্য ব্রাজিলকে সমর্থন করেন আরো অনেক আগে থেকেই৷ প্রিয় দলকে নিয়ে এবারও আশাবাদী তিনি, ‘‘আগে গ্রুপ পর্ব পেরোতে হবে৷ এরপর তো নকআউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচই ফাইনাল৷ তবে এবারের ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী৷’’
জোবেরা রহমান লিনু
ছিলেন ব্রাজিলের সমর্থক৷ কিন্তু ১৯৮৬ বিশ্বকাপে মারাদোনার খেলা দেখে সমর্থন পাল্টে যায় জোবেরা রহমান লিনুর, ‘‘মারাদোনার খেলা দেখার পর থেকে আমি আর্জেন্টিনার ভক্ত৷’’ টেবিল টেনিসে জাতীয় পর্যায়ে সর্বাধিক শিরোপায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখানো এই খেলোয়াড় বিশ্বকাপ ফুটবল দেখেন নিয়মিত৷ বাবার অসুস্থতার কারণে এবার সেদিকে মনোযোগ নেই খুব একটা৷ ‘‘তবে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতলে ভালো লাগবে’’–বলেছেন লিনু৷
আমিনুল হক
তাঁর কাজ ছিল গোল ঠেকানো৷ কিন্তু আমিনুল হক ব্রাজিলের ভক্ত হয়ে যান দলটির গোল করার ক্ষমতা দেখে৷ ‘‘ছোটবেলা থেকেই বিশ্বকাপ দেখি নিয়মিত৷ আর সব সময়ই দেখেছি, ব্রাজিলের গোল করতে সমস্যা হয় না কোনো৷ ডিফেন্সে সমস্যা থাকে৷ কিন্তু এবারের দলটির ডিফেন্সও ভালো৷ আমার তাই মনে হয়, এই ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিততে পারবে৷’’
জাহিদ হাসান এমিলি
মারাদোনার শেষ বিশ্বকাপেই তাঁকে প্রথম দেখেন জাহিদ হাসান এমিলি; ১৯৯৪ সালে৷ তাঁর নিজের বয়স তখন সাত বছর৷ কান্নাভেজা ওই আর্জেন্টাইনকে দেখে আর্জেন্টিনার ভক্ত হয়ে যান বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড৷ তবে প্রিয় দলকে বিশ্বকাপ জিততে দেখেননি কখনো৷ এবারও সে সম্ভাবনা বেশি দেখেন না এমিলি, ‘‘আবেগ একপাশে রেখে বললে, আর্জেন্টিনার জন্য বিশ্বকাপ জয় কঠিন৷ ব্রাজিল, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেনকেই বরং আমি এগিয়ে রাখবো৷’’
আকরাম খান
শুধু বিশ্বকাপ নয়, ইউরোপিয়ান ফুটবলের বিভিন্ন লিগের খেলাও নিয়মিত দেখেন আকরাম খান৷ বিশ্বকাপে প্রিয় দল ব্রাজিল৷ ২০১২ অলিম্পিকে ব্রাজিলের ম্যাচ দেখেছেন গ্যালারি থেকে৷ এবারও যাবেন বিশ্বকাপে৷ সেখানে প্রিয় দলের হাতে ট্রফি দেখতে চান আইসিসি ট্রফিজয়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, ‘‘আমি জুলাইয়ের ১০ তারিখ রাশিয়া যাবো৷ একটি সেমিফাইনাল ও ফাইনাল দেখবো৷ আশা করি, নেইমারের হাতে ট্রফি দেখেই ফিরতে পারবো দেশে৷’’
রানী হামিদ
বাংলাদেশে ‘দাবার রানী’ তিনি৷ ছেলে কায়সার হামিদ আবার ফুটবলের কিংবদন্তি৷ রানী হামিদের তাই ফুটবলও প্রিয়৷ আর বিশ্বকাপের প্রিয় দল? ‘‘বাসার সবাই ব্রাজিল সমর্থন করতো বলে আমাকেও তা করতে হতো৷ আমার কিন্তু মনে মনে ইংল্যান্ডকে ভালো লাগতো৷ কারণ, আমাদের সিলেটিদের জন্য ইংল্যান্ড দ্বিতীয় বাড়ির মতো৷ এবারের বিশ্বকাপে এ দুটো দলের একটি চ্যাম্পিয়ন হলে ভালো লাগবে৷’’
মিনহাজুল আবেদীন নান্নু
৮৬ বিশ্বকাপের সময় মাইনর কাউন্টি খেলার জন্য ইংল্যান্ডে ছিলেন৷ আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড ম্যাচের কথা মনে আছে স্পষ্ট, ‘‘আমি আর নোবেল একটি পাবে খেলা দেখছিলাম৷ মারাদোনা হাত দিয়ে গোল করার পর চিত্কার করে উঠেছিল নোবেল৷ বাকি সবাই চোখ ঘুরিয়ে দেখছিলো ওকে৷’’ ভাইয়ের মতো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়কের প্রিয় দল অবশ্য আর্জেন্টিনা নয়, ‘‘আমার পছন্দ ইংল্যান্ড৷ ওরা বাদ পড়ে গেলে জার্মানিকে সমর্থন করবো৷’’
হাবিবুল বাশার সুমন
১৯৮২ বিশ্বকাপ তাঁর মনে আছে আবছা৷ ১৯৮৬ বিশ্বকাপ পুরোপুরি৷ এ দুটো আসর ব্রাজিলের জন্য হতাশার হলেও হাবিবুল বাশার সুমনের ভালোবাসার বদল হয়নি৷ এবারও প্রিয় দলের বিশ্বকাপ জয়ের আশায় টিভির সামনে থাকবেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, ‘‘আর্জেন্টিনার ব্যক্তিবিশেষের খেলা হয়তো ভালো লাগে৷ আগে যেমন ছিলেন মারাদোনা, এখন মেসি৷ কিন্তু ব্রাজিল দল হিসেবে খেলে চমত্কার৷ আশা করছি এবার বিশ্বকাপ জিতে সে হতাশা কাটাবো৷’’
আবদুল্লাহ হেল বাকি
কমনওয়েলথ গেমসে রৌপ্যপদকজয়ী শুটার আবদুল্লাহ-হেল বাকি আর্জেন্টিনার পাঁড় সমর্থক৷ কেন? উত্তরটাও ওই পাঁড় সমর্থকের মতো, ‘‘খেলা যাঁরা বোঝেন, তাঁরা সবাই আর্জেন্টিনাই সমর্থন করেন৷’’ কিন্তু সেই ‘খেলা বুঝেই’ প্রিয় দলকে নিয়ে এবার খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না বাকী, ‘‘সত্যি বলতে কী, খুব একটা আশা আমি দেখছি না৷ তবে একজন মেসি যখন রয়েছে আর্জেন্টিনার, তখন কিছুই অসম্ভব না৷’’