বিশ্বের যত নারী প্রেসিডেন্ট এবং নারীর ক্ষমতায়ন
নারীর ক্ষমতায়নের পথে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিল নেপাল৷ এই প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি৷ বিদ্যা ভান্ডারি’র রাষ্ট্রপতি হওয়াকে উপলক্ষ্য করে সারা বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নের খণ্ডচিত্রটাও একটু দেখে নেয়া যাক৷
বিশ্বের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী
বিশ্বের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট আর্জেন্টিনার ইসাবেল পেরন৷ সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান পেরনের তৃতীয় স্ত্রী ইসাবেল প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পান৷ পরে ১৯৭৪ সালের ১লা জুলাই থেকে ১৯৭৬ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টও ছিলেন৷ বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী শ্রীলঙ্কার শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে৷ তিন দফা (১৯৬০-৬৫, ১৯৭০-৭৭, ১৯৯৪-২০০০) দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ ওপরে তাঁরই ছবি৷
হিমালয় কন্যা বিদ্যা ভান্ডারি
অবশেষে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পেলো নেপাল৷ সাংসদ এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (সিপিএন-ইউএমএল) -এর ভাইস চেয়ারপারসন বিদ্যা ভাণ্ডারিকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করেছে সে দেশের সংসদ৷ নেপালের রাষ্ট্রপতি এখন রাম বরণ যাদব৷ ২৪০ বছর রাজতন্ত্রের অধীনে থাকা দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপতি তিনি৷ তাঁর কাছ থেকেই দেশের প্রথম নারী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন ৫৪ বছর বয়সি বিদ্যা ভান্ডারি৷
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে নারীকে প্রেসিডেন্ট করেছে ভারত৷ ২০০৭ সালে সে দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হন প্রতিভা পাতিল৷ ভারতের দ্বাদশ প্রেসিডেন্ট প্রতিভা ২০১২ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন৷ তাঁর কাছ থেকেই দায়িত্ব নিয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি৷ ছবিতে প্রতিভা পাতিলের কাছ থেকে প্রণব মুখার্জির দায়িত্ব নেয়ার মুহূর্ত৷
১৪টি দেশে নারী প্রেসিডেন্ট
এ মুহূর্তে ১৪ দেশের প্রেসিডেন্ট নারী৷ আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, চিলি, ক্রোয়েশিয়া, কসোভো, লাইবেরিয়া, লিথুয়ানিয়া, মাল্টা, মরিশাস, স্যান মারিনো, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে বুধবার যোগ হলো নেপাল৷ ওপরের ছবিতে মরিশাসের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আমিনা ফিরদাউস গারিব ফাকিম৷
বাংলাদেশ এখনো অপেক্ষায়
প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিচারপতিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ পদেই নারী পেয়েছে বাংলাদেশ৷ তবে এ পর্যন্ত ২০ জন রাষ্ট্রপতি পেলেও এ দায়িত্বে এখনো কোনো নারীকে দেখা যায়নি৷
অনন্য সুইডেন ও ফিনল্যান্ড
নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য এক নজির রেখেছে সুইডেন৷ ১৯৯৯ সালে সে দেশের মন্ত্রীপরিষদে পুরুষের চেয়ে নারী সদস্যই ছিল বেশি৷ ১১ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ ছিলেন ৯ জন৷ এমনটি আগে কোনো দেশেই দেখা যায়নি৷ পরে ফিনল্যান্ডের মন্ত্রীপরিষদেও নারীর আধিক্য দেখা গেছে৷ ২০০৭ সালে ফিনল্যান্ডের মন্ত্রীপরষদের শতকরা ৬০ ভাগ সদস্যই ছিলেন নারী৷ ছবিতে সুইডেন ও ডেনমার্কের দুই নারী নেত্রী৷
যারা অনেক পিছিয়ে
বিশ্বের সব দেশ নারীর ক্ষমতায়নে কম-বেশি উদ্যোগী হলেও ব্রুনাই এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি পিছিয়ে৷ মুসলিমপ্রধান দেশটিতে নারীকে এখনো উপমন্ত্রীর চেয়ে বড় দায়িত্ব দেয়া হয়নি৷ তবে এ মুহূর্তে অ্যাঙ্গোলা, ভুটান, কোমোরো আইল্যান্ড, কুক আইল্যান্ড, লেবানন, মঁসেরাত এবং সলোমন আইল্যান্ডই সবচেয়ে বেশি নারীবিমুখ৷ এই দেশগুলোর মন্ত্রীপরিষদ, এমনকি সংসদেও এই মুহূর্তে কোনো নারী নেই৷ছবিতে ব্রুনাইয়ের কয়েকজন নারী৷
মালালা ও তাঁর প্রজন্ম
সাম্প্রতিক সময়ে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ অনেক দেশেই মাথা চাড়া দিয়েছে৷ তবে শান্তির পথে, মানবতার পথে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নারীর দৃপ্ত পদচারণাও দেখা যাচ্ছে৷ গত বছর (২০১৪) সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল জয় করেছেন মালালা ইউসুফজাই৷ পাকিস্তানের খাইবার পাখতুন রাজ্য তাঁর জন্মস্থান৷ সেখানে হত্যার উদ্দেশ্যে তালেবান তাঁর ওপর হামলাও চালিয়েছিল৷ মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসে মালালা এখন প্রজন্মের মুক্তচিন্তার মুক্তির প্রতীক৷