ভবিষ্যদ্বাণী সফল করতে চাই...
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ভবিষ্যৎ চোখে দেখা যায় না, যা ঘটেনি – তা তো অদৃশ্য থাকবেই৷ ১৮২১ সালে আলেক্সিস বুভার কিন্তু নিশ্চিত ছিলেন যে, ইউরেনাসের পাশে একটি গ্রহ অবশ্যই রয়েছে৷ কারণ সূর্য প্রদক্ষিণ করতে ইউরেনাসের কক্ষপথ কেপলারের নিয়মের সঙ্গে কিছুতেই মিলছিল না৷ ২৫ বছর পর নেপচুন গ্রহ আবিষ্কারের ফলে বুভার-এর ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হলো৷
১৮৭০ সালে রাশিয়ার রসায়নবিদ দিমিত্রি মেন্ডেলিয়েভ পিরিয়ডিক টেবল সৃষ্টি করেন৷ অথচ তখনও কিন্তু সব মৌলিক রাসায়নিক উপাদান আবিষ্কৃত হয় নি৷ কোনো উপাদান সেই কাঠামোয় খাপ না খেলে তিনি সেই জায়গা খালি রেখে দিতেন৷ তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যে একদিন এই খালি অংশ ভরে যাবে৷ এমন পূর্ববাণী অবশ্য তুলনামূলকভাবে সহজ, কারণ বিজ্ঞান নিয়মের ভিত্তিতে চলে৷
প্রোফেসর টোমাস বাউয়ার-এর কাজটা সহজ নয়৷ অর্থনীতিবিদ হিসেবে তিনি প্রবৃদ্ধি ও জনসংখ্যা সংক্রান্ত পূর্ববাণী করেন৷ কিন্তু তাঁর হিসেবের ভিত্তি অনিশ্চয়তায় ভরা৷ তিনি বলেন, ‘‘অদূর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পূর্ববাণী করতে হলে আমার হাতে তার জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট তথ্য থাকে৷ কিন্তু আরও পরের কোনো সময়ের জন্য সেই কাজ করতে হলে তথ্যের অভাবে আমার ভুল করার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে৷ তাছাড়া এমন পূর্ববাণীর কথা জানলে মানুষের আচরণ বদলে যায়৷ ফলে সেই কারণেও তা বৈধতা হারায়৷''
পূর্ববাণী ভুল প্রমাণিত হবার এটা একটা কারণ৷ যেমন ১৯৭২ সালে ‘ক্লাব অফ রোম' ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, ২০০০ সালে পৃথিবীর সব প্রাকৃতিক সম্পদ নিঃশ্বেসিত হয়ে যাবে৷ বছর শেষ হবার আগেই তেল, গ্যাস ও কয়লা আর অবশিষ্ট থাকবে না বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল৷
ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা দিয়েছিল৷ ভোটগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত জনমত সমীক্ষায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেন থেকে যাবে বলে পূর্ববাণী করা হয়েছিল৷ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পূর্ববাণী তাই প্রায়ই খুঁতে ভরা থাকে৷ কারণ অনেকগুলি বিষয় অনিশ্চয়তায় ভরা থাকে৷ প্রো. টোমাস বাউয়ার বলেন, ‘‘কোনো পূর্ববাণী দ্রুত অবৈধ হয়ে যায়, যখন অপ্রত্যাশিত কোনো ঘটনা ঘটে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রিয়েল এস্টেট বাজারে ধস, কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রপ্তানির বাজারে গুরুত্বপূর্ণ কোনো দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা – এই সব অপ্রত্যাশিত ঘটনা তখন পূর্ববাণীকে ভুল প্রমাণিত করে৷''
বিশেষজ্ঞরা অত্যন্ত বিরল ও অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে প্রতীকী অর্থে ‘কালো হাস' বলে থাকেন৷ এমন ঘটনা সব পূর্ববাণী ভুল প্রমাণিত করে, গোটা বিশ্ব তোলপাড় হয়ে যায়৷ বিশেষ করে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়৷ তা সত্ত্বেও পূর্ববাণী ফলছে কিনা, তা দেখার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি৷ প্রো. বাউয়ার বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে কিছুটা নিশ্চয়তার খাতিরে আমাদের পূর্ববাণীর প্রয়োজন রয়েছে৷ পরিকল্পনার জন্য কিছুটা নিরাপত্তার প্রয়োজন৷''
তবে ভয়ংকর পূর্বাভাষেও সবসময় কাজ হয় না৷ যেমন জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশাল বালু ঝড় আমাদের শহরে বিপর্যয় আনে পারে – এমন সাবধানবাণী সত্ত্বেও আমরা আমাদের আচরণ তেমন বদলাই নি৷ এর অন্যতম কারণ হলো, আমাদের জীবদ্দশায় পৃথিবীতে এমন নাটকীয় পরিবর্তন ঘটতে পারে, এমনটা কল্পনা করার ক্ষমতা আমাদের নেই৷ আরেকটি কারণ হলো, অনেক পূর্বাভাষের মতো এটিও একশ ভাগ সত্য হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস৷ তাছাড়া কাকতালীয়ভাবেও তো কত কী ঘটে!