ভারত কি দলাই লামাকে উপেক্ষা করছে?
প্রায় ৬০ বছর আগে তিব্বত থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন দলাই লামা৷ এতকাল তিনি ভারতে দলমতনির্বিশিষে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে এলেও নরেন্দ্র মোদী সরকার ভারতে তাঁর ষাট দশকপূর্তি উৎসব সম্পর্কে শীতল মনোভাব দেখাচ্ছে৷
চীনের সঙ্গে আপোশ?
ভারত ও চীনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন মাত্রা ধারণ করেছে৷ বিশেষ করে গোটা অঞ্চলের দেশগুলিতে দুই দেশই নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ কায়েম করতে উঠেপড়ে লেগেছে৷ কিছু মহলের ধারণা, সেই প্রেক্ষাপটে নতুন করে তিব্বত নিয়ে চীনের সঙ্গে সংঘাত চায় না ভারত সরকার৷ তাই গোটা বিষয়টি নিয়ে বেশি হইচই চাইছে না নরেন্দ্র মোদীর সরকার৷
ভারতের একার সমস্যা নয়
গোটা বিশ্ব চষে বেড়ান দলাই লামা৷ এমনকি খোদ চীনেও তাঁর ভক্ত ও অনুরাগীর সংখ্যা কম নয়৷ তবে তাঁর সঙ্গে প্রকাশ্যে সাক্ষাৎ করলে এবং তাঁর সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দিলে চীনের রোষের মুখে পড়তে হয় বিশ্বনেতাদের৷ তাই তাঁদের অনেকেই সযত্নে এমন সংঘাতের আশঙ্কা এড়িয়ে চলেন৷
চীনের রোষের মুখে ম্যার্কেল
২০০৭ সালে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দলাই লামাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান৷ শুধু চীন নয়, জার্মানির কিছু রাজনৈতিক নেতাও এমন ‘বেপরোয়া’ মনোভাবের জন্য ম্যার্কেল-এর সমালোচনা করেছিলেন৷ তারপর আর এভাবে তাঁদের দু’জনের সাক্ষাৎ ঘটেনি৷
বিশেষ সম্পর্ক
রাজনৈতিক নেতারা সাধারণত চীনকে সন্তুষ্ট রাখতে দলাই লামার সঙ্গ এড়িয়ে চললেও তার পরোয়া না করে কিছু নেতা তাঁর সঙ্গে প্রায় বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন৷ যেমন জার্মানির রক্ষণশীল দলের প্রাক্তন নেতা রোলান্ড কখ হেসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে একাধিকবার দলাই লামার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷
নোবেলজয়ীদের সখ্য
নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী দুই ব্যক্তির মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক বিরল নয়৷ বিশেষ করে প্রাণখোলা অট্টহাসির জন্য পরিচিত দলাই লামা দক্ষিণ আফ্রিকার আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু-র সঙ্গে সংলাপের সময় এমনই হাসিতে মেতে ওঠেন৷ ২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটেল শহরে এমন সাক্ষাৎ নিয়ে চীন অবশ্য বিশেষ কিছু করতে পারেনি৷
গুরুর সঙ্গে বন্ধুত্ব
১৯৪৬ সালে তিব্বতে গিয়ে কিশোর দলাই লামার শিক্ষক হিসেবে কিছুকাল কাটিয়েছিলেন অস্ট্রিয়ার পর্বতারোহী হাইনরিশ হারার৷ তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল৷ ২০০৫ সালে জার্মানিতে এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে দু’জনের সাক্ষাৎ ঘটে৷
কূটনৈতিক প্রতীক
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা চীনের চোখরাঙানি সত্ত্বেও হোয়াইট হাউসে দলাই লামাকে ‘ব্যক্তিগত মিটিং’-এ স্বাগত জানিয়েছিলেন৷ ওভাল অফিসে সাক্ষাৎ না হলেও চীন এই ঘটনাকে সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের দৃষ্টান্ত হিসেবে সমালোচনা করেছিল৷ দুই নোবেলজয়ী নেতা মোট তিনবার মিলিত হয়েছেন৷
চীনের সঙ্গে অতীত সম্পর্ক
চীন প্রথমে খোদ দলাই লামাকে সঙ্গে নিয়েই তিব্বতের ‘মুক্তি’-র প্রচেষ্টা চালিয়েছিল৷ কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতা মাও সে তুং দলাই ও পাঞ্চেন লামার ‘রক্ষক’ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন৷ ১৯৫৬ সালে সেই সাক্ষাতের তিন বছর পর দলাই লামা ভারতে পালিয়ে যান৷