ভারত থেকে অনুপ্রবেশকারীরা ‘বাংলাদেশি’
২৩ নভেম্বর ২০১৯মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন তদন্তে দেখা গেছে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার নাগরিক৷ তারা পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে কাজের জন্য গিয়েছিল৷ এখন সেখানে কড়াকড়ি হওয়ায় তারা আবার ফিরে এসেছেন৷ তাদের সবার বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে মামলা হয়েছে৷
ওসি বলেন, ‘‘আজ (শনিবার) যে ২২ জনকে বিজিবি আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে, তাদের মধ্যে বাগেরহাটের শরণখোলার আছে ১৫ জন, নড়াইলের আছে পাঁচজন এবং দুইজন আছে আমাদের মহেশপুরের৷ এই দুইজন ভারত থেকে বাকিদের নিয়ে আসেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে৷ তারা বিভিন্ন সময় ভারতে গেছেন৷ ব্যাঙ্গালুরুর বাসাবাড়িতে কাজ করতেন, কাগজ টোকাতেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘বিজিবি শনিবারের আগে এক মাসে ২০৩ জনকে আটকের কথা বললেও থানায় হস্তান্তর করেছে ১৮৪ জনকে৷ তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে মামলা করা হয়৷ তারা এরইমধ্যে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন৷'' তিনি বলেন, ‘‘এরাও বাংলাদেশের নাগরিক৷ কিন্তু তারা পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে গিয়ে আবার ফিরে এসেছেন৷ তারা বাগেরহাট, খুলনা এবং পিরোজপুরের বাসিন্দা৷ কয়েক বছর আগে কাজের জন্য ব্যাঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন৷
তিনি বলেন, ‘‘তাদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোড়েলগঞ্জ এলাকার কিছু লোক ব্যাঙ্গালুরুতে থাকেন বহুদিন ধরে৷ আগে তারা দিল্লি থাকতেন৷ তারা বাংলাদেশে নিয়মিত আসা যাওয়া করেন৷ তাদের মাধ্যমেই এরা ছয় মাস থেকে দুই বছর আগে ব্যাঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন৷ তাদের সবার বাংলাদেশের ভোটার আইডি কার্ড আছে৷ তারা বাংলাদেশের নাগরিক৷''
যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় সমান সংখ্যক নারী, পুরুষ ও শিশু রয়েছে৷
এদিকে এই ‘অনুপ্রবেশে'র ঘটনায় বিজিবি মহেশপুর সীমান্তে টহল বাড়িয়েছে৷ বাড়ানো হয়েছে সতর্কতাও৷ মহেশপুরের সাথে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২০-২৫ কিলোমিটার সীমান্ত আছে৷ বিজিবি জানায়, তারা মহেশপুরের খোলাসপুর, পালিয়ানপুর ও মাটিলা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করছে৷ সংলগ্ন এলাকার সাধারণ মানুষকেও সতর্ক করা হয়েছে৷ কেউ ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করলেই বিজিবিকে খবর দিতে বলা হয়েছে৷
স্থানীয় কাজিরবেড় ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম রেজা বলেন, ‘‘ভারতে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা এই এলাকা থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে সেই আশঙ্কায় দুই বছর আগে থেকেই আমাদের সতর্ক করা হয়৷ তখন থেকেই স্থানীয় লোকজন বিজিবিকে সহায়তা করছে৷ অনুপ্রবেশের ঘটনা স্থানীয় কারো চোখে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে ফোনে বিজিবিকে জাননো হয়৷ এবারও আমরা সতর্ক রয়েছি৷''
খালিশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল আহসান এর আগে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘‘মাইগ্রেশন করে যারা ভারতে গিয়েছিলেন তাদের সেখানে বসবাসে অসুবিধা হচ্ছে৷ এনআরসি আতঙ্কসহ নানাভাবে চাপের মধ্যে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন৷ বিশেষ করে ব্যাঙ্গালুরু এলাকায় এই সমস্যা বেশি হচ্ছে৷ যে কারণে তারা ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছেন৷ তারা এক সময় বাংলাদেশে ছিলেন বলে দাবি করছেন৷''
শনিবার তাদের মিডিয়া উইং থেকে ল্যান্স নায়েক মোমিন বলেন, ‘‘আমরা সীমান্তে কড়াকড়ি ও সতর্কতা বাড়িয়েছি৷ শনিবারও ২২ জনকে আটক করা হয়েছে৷ তারা ভারত থেকে আসছে৷ আটকের পর তাদের নাগরিকত্ব যাচাই করা হচ্ছে৷ বাংলাদেশে যারাই অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করবে তাদেরই আটক করা হবে৷''
উল্লেখ্য, গত আগস্টে ভারতে নাগরিকপঞ্জি প্রকাশের পর সেখানে বাংলাভাষী অনেকেই চাপের মুখে আছেন৷ ২২ নভেম্বর বেনাপোল সীমান্ত দিয়েও বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ৫৪ জন নারী ও পুরুষকে আটক করা হয়৷