1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌ভারতে গর্ভবতীরা কি আর মাছ-মাংস খাবে না?

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৬ জুন ২০১৭

শুধু গরু নয়, ভারতের ভাবী নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়েও চিন্তিত কেন্দ্রীয় সরকার৷ ১৪ পাতার একটি পুস্তিকায় তাই কিছু হিতোপদেশ দেওয়া হয়েছে গর্ভবতী মহিলাদের৷ সেই নিয়ে হুলুস্থুল চলছে৷

https://p.dw.com/p/2emme
Indien Anand Untersuchung Schwangere Frau
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar

গর্ভধারণের পর নিরামিষ খাবার খান৷ আমিষ খাবেন না৷ যৌনতা পরিহার করুন৷ ঘরের দেওয়ালে সুন্দর সুন্দর ছবি টাঙান৷ তা হলেই গর্ভস্থ সন্তান সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান হবে৷ প্রথমে শোনা গিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের যে আয়ুর্বেদ বিষয়ক দপ্তর, অর্থাৎ ‘‌আয়ুষ মন্ত্রক'‌ আছে, তারাই এই উপদেশ দিচ্ছে গর্ভবতী মহিলাদের৷ সেই নিয়ে হুলুস্থুল পড়ে গেছে ভারতীয় সমাজে এবং সংবাদ মাধ্যমে৷ কী করে সরকারিভাবে এ ধরণের অবৈজ্ঞানিক এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিপজ্জনক তত্ব প্রচার করা হচ্ছে– সেই ভেবে স্তম্ভিত সবাই৷ এখন শোনা যাচ্ছে, বিজেপি সরকারের যে যোগ এবং প্রাকৃতিক চিকিৎসা বিষয়ক কেন্দ্রীয় পরিষদ, তাদের মা ও শিশু কল্যাণ বিষয়ক দপ্তর ১৪ পাতার এই জ্ঞানগর্ভ পুস্তিকাটির রচয়িতা৷ এবং আজ নয়, সেই ২০১৩ সাল থেকেই এটি বিনা মূল্যে বিতরিত হয় সরকারি হাসপাতাল আর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে৷

Dr. Mou Chatterjee, Gynecologist - MP3-Stereo

এখন হঠাৎ কেন ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সেটা নিয়ে হইচই শুরু করল তা ভেবে রীতিমতো অসন্তুষ্ট কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক৷ তাদের পাল্টা অভিযোগ– সংবাদ মাধ্যম পরামর্শের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে৷ ওই পুস্তিকায় কোথাও বলা নেই গর্ভাবস্থায় যৌনতা পরিহার করতে হবে!‌ বলা আছে কামনা-বাসনা এড়িয়ে চলার কথা৷ ইংরেজিতে লুস্ট, ‌যা চা-কফি, ইত্যাদি উত্তেজক পানীয়ের মতোই এড়িয়ে চলা উচিত৷

আর আমিষ ছেড়ে নিরামিষ ধরার উপদেশের মধ্যে অবশ্যই অস্বাভাবিক কিছু দেখছে না রক্ষণশীল, সংস্কারী বিজেপি সরকারের এই মন্ত্রক৷ কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক আচরণেই স্পষ্ট, হিন্দুত্বের সংজ্ঞা তাদের কাছে যা, সেই পথেই বাকি দেশকে হাঁটিয়ে নিয়ে যেতে চায় তারা৷ ভারতের বহুত্ব ও বিভিন্নতার সহাবস্থানের ঐতিহ্যকে অস্বীকার করেই তারা সেটা করতে চায়৷ যে কারণে গো-হত্যা নিষিদ্ধ করার সরকারি ফতোয়া জারি হয়, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার ওপর সামাজিক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয়, সেন্সরশিপ চালু হয় ফিল্মে, থিয়েটারে, সাহিত্যে, এমনকি মুক্তচিন্তা আর মত প্রকাশের স্বাধীনতাতেও৷

কিন্তু চিকিৎসকরা কী বলছেন গর্ভবতীদের আমিষ ছেড়ে নিরামিষ ধরার এই উপদেশ সম্পর্কে?‌ ভারতের মতো দেশ, যেখানে অপুষ্টিজনিত কারণে সন্তানজন্মের সময় মা ও শিশুর প্রাণসংশয় হয় দরিদ্র পরিবারে, সেখানে প্রোটিন বাদ দিয়ে খাবার উপদেশ কতটা বৈজ্ঞানিক যুক্তিসম্মত?‌ ডয়চে ভেলে কথা বলেছে ডা. ঋতু দাশের সঙ্গে, যিনি অবশ্য বলছেন, মাছ-মাংস থেকে পাওয়া প্রোটিন প্রয়োজনীয়, কিন্তু আবশ্যিক নয়৷ কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন নিজের সেইসব রোগীর কথা, যাঁরা এমনিতেই নিরামিষাশী, যাঁরা আমিষ কখনোই খান না৷ ডা. দাশের মতে, তাঁদেরও সুস্থ, স্বাভাবিক শিশুজন্মে কোনও সমস্যা হয় না৷ কাজেই বিষয়টা আমিষ-নিরামিষের নয়, সুসম আহারের৷

Dr. Ritu Das, Gynecologist - MP3-Stereo

আরেক মহিলা চিকিৎসক, তিনিও গায়নোকোলজিস্ট, ডঃ মৌ চ্যাটার্জি কিন্তু বলছেন, প্রোটিন এবং অ্যানিমেল প্রোটিন অবশ্যই জরুরি৷ কারণ, এর অভাবে মা এবং শিশুর অনেক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে৷ যাঁরা নিরামিষাশী, তাঁদের ক্ষেত্রে যে কারণে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট দেওয়াটা জরুরি হতে পারে৷ কিন্তু যাঁরা এমনিতে আমিষ খান, সন্তানের জন্ম দেবেন বলে তাঁদের হঠাৎ নিরামিষ খেতে শুরু করার কোনও কারণ তিনি দেখেন না৷ বিশেষ করে, নিরামিষ খেলে গর্ভস্থ সন্তান সতেজ এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে– এমন কোনও বৈজ্ঞানিক তথ্য যেখানে নেই৷ ঠিক যেমন গর্ভবতী মহিলার ঘরের দেওয়ালে সুন্দর ছবি টাঙানোর পরামর্শ ডা. চ্যাটার্জির কাছে হাস্যকর মনে হয়েছে৷ তাঁর প্রশ্ন, গর্ভের সন্তান কি সেই ছবি দেখতে পাবে?‌ তা হলে তার মানসিক বিকাশের ওপর ছবির প্রভাব পড়বে কী করে!‌ এই ব্যাপারেও কোনও প্রামাণ্য বৈজ্ঞানিক তথ্য তাঁর চোখে পড়েনি, জানিয়েছেন ডা. চ্যাটার্জি৷

কিন্তু সমস্যা হলো, যুক্তি দিয়ে, বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়ে বিশ্লেষণ করবেন না, এমন লোকও দেশে আছেন৷ তাঁদের কী ঠিক পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?‌ জনকল্যাণবাদী রাষ্ট্র কি এক্ষেত্রে তাঁর নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করছে?‌ সেটাই প্রশ্ন৷