প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
১৯ এপ্রিল ২০১৩ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ বা এ এস আই-এর তত্ত্বাবধানে আছে – এমন প্রায় ৩,৬৭৮টি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে ১,৫৩৮টি নিদর্শন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটার জেনারেল সিএজি এবং এএসআই যৌথভাবে সমীক্ষা করে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে দেখা গেছে ৮১টি প্রাচীন নিদর্শনের কোন চিহ্ন নেই৷ এই রিপোর্ট পেশ করা হবে সংসদের আগামী অধিবেশনে৷
১৭টি তালুকের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যেমন গুহা, মন্দির, শিলালিপি, প্রাগৈতিহাসিক স্থল, প্রাচীন দুর্গ, স্মৃতিসৌধ ও গুহাচিত্র ইত্যাদির অস্তিত্ব নেই৷ তার মধ্যে আছে আসাম সার্কেলের তিনসুকিয়ায় সম্রাট শের-শাহের কামান, তেজপুরে চুমেরি চত্বরে ভাস্কর্য, কামাখ্যা হিলস-এর নির্মাণ, শিলং-এর প্রস্তর স্মৃতিসৌধ এবং অরুণাচল প্রদেশের তাম্র মন্দির৷
কলকাতা সার্কেলের সূর্য মূর্তি, জৈন মূর্তি, গাছের নীচে শ্রীশ্রী দুর্গার মহিষাসুর বধের স্মৃতিমন্দির, নদিয়ার দুর্গের ধ্বংসাবশেষ৷ মুম্বই সার্কেলে ১৮১৭ সালের জার্মান ও ফরাসি সমাধিক্ষেত্র লুপ্ত হয়ে গেছে দখলদারদের হাতে৷ আগরকোটের গম্বুজ, পর্বত গুহায় পর্তুগিজ মঠ এবং সন্নিহিত পাহাড়ে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার৷ হায়দ্রাবাদ সার্কেলে ব্রাহ্মী লিপি, প্রাচীন ঢিপি, ভাস্কর্য, মসজিদ ইত্যাদি৷
প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের এক কর্তাব্যক্তির মতে, ৩৫টি প্রাচীন নিদর্শনস্থল নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি, শুধু জলমগ্ন হয়ে গেছে এবং নতুন নির্মাণ কাজে ভেঙেচুরে গেছে৷ প্রাচীন নিদর্শন চিহ্ন রক্ষণাবেক্ষণে একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে এএসআইকে৷ এক, দ্রুত নগরায়ন ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রাচীন স্মৃতিসৌধগুলির ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করছে৷ দিল্লিতে ষোড়শ শতাব্দীর আকবরাবাদী মসজিদ মেট্রো রেল নির্মাণের সময় মাটির নীচে চাপা পড়ে৷ দুই, অনেক প্রাচীন নিদর্শনস্থলের জমি মালিকানা তাদের হাতে নেই, আছে রাজ্য সরকারের হাতে৷ জামিয়ানগরে যোগা বাই ঢিবি জমি হস্তান্তরিত না হওয়ায় তা চলে গেছে অবৈধ নির্মাণকারীদের হাতে৷
তিন, ৩,৬৭৮টি জাতীয় ঐতিহাসিক নিদর্শনের উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যেখানে দরকার ২০ হাজার কর্মী, সেখানে আছে মাত্র ২০০০৷ তবুও লুপ্ত হয়ে যাওয়া সব প্রাচীন নিদর্শন স্থলের পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়৷ দেশের প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে হলে নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে৷ দুঃখের বিষয়, নাগরিক সমাজ এবিষয়ে চরম উদাসীন৷