1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অ্যাসিড হামলা বাড়ছে কেন?

আরাফাতুল ইসলাম২ জুলাই ২০১৬

কঠোর আইন এবং শাস্তি সত্ত্বেও ভারতে অ্যাসিড সন্ত্রাস বেড়েই চলেছে৷ দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে অ্যাসিড সহিংসতার কারণ এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে ডয়চে ভেলের বিশেষ প্রতিবেদন৷

https://p.dw.com/p/1JGV5
ভারতে অ্যাসিড হামলা শিকার
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gupta

বিয়ের কয়েকদিন পর এক রাতে প্রজ্ঞা প্রসুন ভারতের বেনারস থেকে ট্রেনে নতুন দিল্লিতে যাচ্ছিলেন৷ গভীর ঘুমে থাকা প্রজ্ঞার উপর সেরাতে অ্যাসিড ছুড়ে মারে তারই এক দূরসম্পর্কের পুরুষ আত্মীয়৷

‘‘আমি প্রথম বুঝতেই পারিনি কি হচ্ছিল৷ আমরা চামড়া পুড়ে যাচ্ছিল, শরীর থেকে ধোয়া বেরুচ্ছিল৷ গন্ধ থেকে মনে হচ্ছিল, আমার শরীরের উপর একটা টায়ার পোড়া হচ্ছে'', বলেন প্রসুন, তাঁর বয়স তখন সবে ২২ বছর৷

প্রসুন তাঁর আত্মীয়ের বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন৷ আর তাই প্রতিহংসার বশে তাঁর শরীরে অ্যাসিড ঢেলে দেন সেই আত্মীয়৷ অ্যাসিডে তাঁর শরীর তখন ৪৭ শতাংশ পুড়ে যায়৷

সেই ঘটনার পর দশবছর পেরিয়ে গেছে৷ প্রসুন এখনো এক চিকিৎসকের কাছে কৃতজ্ঞ যে কিনা সেরাতে ট্রেনে তার পাশের কামরায় ছিলেন৷ প্রসুন মনে করেন, সেই নারী চিকিৎসক তাঁর জীবন বাঁচিয়েছেন৷

‘‘তিনি সঙ্গে সঙ্গে বুঝেছিলেন আমার উপর অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে৷ তাই ট্রেনে থাকা সবাইকে অনুরোধ করেন আমার শরীরে যতটা সম্ভব পানি ঢালতে, যাতে অ্যাসিড ধুয়ে যায়'', ডয়চে ভেলেকে বলেন প্রসুন, সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আমার শরীরের কাপড় অ্যাসিডে পুড়ে গিয়েছিল৷ তিনি তখন আমার শরীর ঢাকতে তাঁর স্কার্ফ খুলে দেন৷'’

অ্যাসিড হামলা বাড়ছে

প্রসুন ভারতে অ্যাসিড হামলার শিকার মেয়েদের কষ্ট বোঝেন, যেখানে হামলার পর উপযুক্ত চিকিৎসা পেতে ভুক্তভোগীদের অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারতে বিশেষায়িত বার্ন হাসপাতালের সংখ্যা খুব কম এবং সেগুলো সবসময় পোড়া রোগীতে ভর্তি থাকে৷ আর তাই, সরকারি বার্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অ্যাসিড হামলার শিকারদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব৷''

‘‘একজন অ্যাসিড পোড়া রোগীর ক্ষত শুকাতে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগে'', বলেন প্রসুন৷

পরিসংখ্যান পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে অ্যাসিড হামলা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে৷ ২০১২ সালে এরকম হামলার আনুষ্ঠানিক সংখ্যা ছিল ১০৬টি, জানিয়েছে ভারতের অ্যাসিড সারভাইভর্স ফাউন্ডেশন (এএসএফআই)৷ ২০১৩ সালে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১১২-এ, আর ২০১৪ সালে ৩৪৯৷ অ্যাক্টিভিস্টরা মনে করেন, গত বছর সেদেশে ৫০০-র বেশি অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে৷

তবে, প্রসুন মনে করেন এই সংখ্যা অনেক কম, কেননা অ্যাসিড হামলার অনেক ঘটনা আনুষ্ঠানিকভাবে রিপোর্ট করা হয় না৷ তাঁর মতে, ভারতে প্রতিবছর এক হাজারের মতো অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটছে৷

সেলিনা আহমেদ

‘‘অ্যাসিড হামলায় অনেক সময় ভুক্তভোগী মারা যান, বিশেষ করে প্রত্যন্তঅঞ্চলে, যেগুলো রিপোর্ট করা হয় না৷ স্বামী বা পরিবারের কেউ অ্যাসিড মারলে কখনো কখনো সেসব ঘটনা চেপে যাওয়া হয়'', বলেন প্রসুন, যিনি বাঙ্গালোরে অ্যাসিড হামলার শিকারদের পুর্নবাসনে কাজ করেন৷

ভারতে অ্যাসিড হামলার শিকারদের অধিকাংশই নারী, জানাচ্ছে অ্যাসিড সারভাইভর্স ট্রাস্ট ইন্টারন্যাশনালের এক রিপোর্ট৷ গত বছর প্রকাশিত রিপোর্টটিতে আরো জানানো হয়েছে, ‘‘পারিবারিক বিষয়াদি, জমি নিয়ে বিরোধ, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান কিংবা যৌন আহ্বান অগ্রাহ্য করার মতো কারণে অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটছে৷''

অ্যাসিড হামলার শিকারদের নেটওয়ার্ক

স্টপ অ্যাসিড অ্যাটাকস (এসএএ) ক্যাম্পেইন প্রতিষ্ঠাতা অলোক দিক্ষিত রিপোর্টে প্রকাশিত হামলার কারণগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করেন৷ ভারতের উত্তরের শহর আগ্রাতে তিনি একটি ক্যাফে প্রতিষ্ঠা করেছেন যেটি অ্যাসিড হামলার শিকাররা পরিচালনা করেন৷

‘‘আমরা অ্যাসিড হামলার শিকারদের একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছি৷ আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে তাদের নেতা হিসেবে তৈরি করা৷ বিষয়টা অনেকটা তারাই তাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তারাই তাদের অধিকারের জন্য লড়ছেন'', ডয়চে ভেলেকে বলেন দিক্ষিত৷

Säureopfer in Bangladesch
বাংলাদেশে অ্যাসিড হামলা শিকারছবি: Reuters

এসএএ ক্যাম্পেইন ২০১৩ সাল থেকে অ্যাসিড সন্ত্রাস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে৷ চলতি বছর ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার একটি বিভাগে জুরি অ্যাওয়ার্ড জয় করেছে এই ক্যাম্পেইন৷

‘‘আমরা সমাজের পরিবর্তনের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি কেননা আমরা মনে করি, শুধুমাত্র আইন দিয়ে এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়৷ এ সব অপরাধ আবেগতাড়িত, এবং অধিকংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় ভুক্তভোগীর পরিবারের কোনো সদস্য, সহকর্মী কিংবা বন্ধু এর সঙ্গে জড়িত৷ সমাজে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এটা বন্ধ করতে হবে'', বলেন দিক্ষিত৷

তাঁর অনলাইন প্রচারণা ভারতে সাড়া জাগিয়েছে৷ অ্যাসিড হামলার শিকারদের সহায়তায় কখনো কখনো অনলাইনে ‘ক্রাউডফান্ডিংয়ের' মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেন তিনি৷ দিক্ষিত বলেন, ‘‘২০১৩ সালের দিকে মানুষ অ্যাসিড সন্ত্রাসের ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা শুরু করেন৷ এরপরই আমরা আরো ভালো আইন, নিয়মকানুন এবং হামলার শিকারদের জন্য আরো ভালো সুযোগসুবিধা পেয়েছি৷''

দিক্ষিত মনে করেন, অ্যাসিড হামলা সম্পর্কে ভারতের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং একটি ইতিবাচক পরিবর্তনও ঘটছে৷ কিন্তু সেই পরিবর্তন অনুধাবন করতে সময় লাগবে কেননা ভারত অনেক বড় এক দেশ৷

বাকি আছে অনেক কাজ

তবে এএসএফআই-এর মেঘা মিশ্রা মনে করেন, অ্যাসিড সন্ত্রাস প্রতিরোধে সরকারের আরো অনেক কাজ করতে হবে৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘সবার প্রথমে যা করতে হবে, তাহচ্ছে খুচরা বাজারে অ্যাসিড বিক্রি বন্ধ করা৷ দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে, অপরাধীদের বিচারে আরো বেশি সক্রিয় হতে পারে৷ তৃতীয়ত, অ্যাসিড হামলার শিকারদের উপযুক্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে কেননা এখনো অনেককে চিকিৎসা গ্রহণে সংগ্রাম করতে হচ্ছে৷''

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৩ সালে সরকারকে ব্যবস্থাপত্র ছাড়া খুচরা বাজারে ১৮ বছরের বেশি বয়সিদের কাছে অ্যাসিড বিক্রি সীমাবদ্ধ করার নির্দেশ দেন৷ তবে প্রসুন নিয়ন্ত্রকদের সমালোচনা করে জানান, অ্যাসিড বিক্রির ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে তারা৷

ফলে ভারতের সর্বত্রই অ্যাসিড খুচরা বাজারে পাওয়া যায়, জানান তিনি, সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আমি অ্যাসিডের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দাবি করছি৷ এটা এমন কোনো দরকারি জিনিস নয়, যা খুচরা বাজারে বিক্রি করা প্রয়োজন৷ অ্যাসিড শুধু ক্ষতিই করে এবং ইতোমধ্যে অনেকের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে৷''

অ্যাসিড আক্রমণের অর্থ জীবন নেওয়া নয়, নষ্ট করা – আপনি কি এ কথা স্বীকার করেন? আপনার মতামত জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান