1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভিসা নীতি: বাংলাদেশের জন্য এরপর কী?

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দেবে তাদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগ শুরুর খবরে রাজনৈতিক বিতর্ক জমে উঠেছে।

https://p.dw.com/p/4WjBy
বিশ্লেষকেরা বলছেন বাংলাদেশ সরকারের উচিত মার্কিন ভিসা নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের সব ব্যবস্থা করা
বিশ্লেষকেরা বলছেন বাংলাদেশ সরকারের উচিত মার্কিন ভিসা নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের সব ব্যবস্থা করাছবি: picture alliance/dpa/H. J. Boerger

শাসক দল আওয়ামী লীগ বিষয়টি নানা ভাবে ব্যাখ্যা করছে। আর বিএনপি এরজন্য সরকারকে দায়ী করছে।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন বাংলাদেশ সরকারের উচিত ভিসা নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের সব ব্যবস্থা করা । তা না হলে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে।

তারা বলছেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত এবং মার্কিন ভিসা নীতি কার্যকর শুরু- এই ঘটনাগুলো প্রায় একই সময়ে ঘটেছে। এগুলো কাকতালীয় মনে করার কোনো কারণ নেই। এরসঙ্গে কোনো একটা যোগসূত্র আছে।

শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে ভিসানীতি প্রয়োগ শুরুর কথা জানান। ইতিমধ্যেই যাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও বিরোধী দলীয় সদস্যরা রয়েছেন।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়," এসব ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। এর বাইরে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে আরো যাদের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করায় দায়ী বা জড়িত হিসেবে পাওয়া যাবে, তারাও এ নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য হিসেবে গণ্য হবেন। বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, বিরোধী ও সরকারি রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা সেবাদাতা সংস্থার সদস্যদের ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রযোজ্য হবে।''

বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে গত ২৪ মে। এই ঘোষণার চার মাসের মাথায় শুক্রবার দেশটির পক্ষ থেকে  প্রয়োগ শুরুর কথা জানানো হলো।

'যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সরকার কীভাবে ম্যানেজ করে সেটাই দেখার'

এর প্রতিক্রিয়ায় শনিবার ঢাকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন," যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক ও লজ্জাজনক। এজন্য বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর কোনো দায় নেই, সরকারই এককভাবে দায়ী।”

তার কথায়, "বাইডেন প্রশাসন বিশ্বে গণতন্ত্রের কথা বলছে। এর অংশ হিসেবে তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পক্ষে পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে।”

তবে মির্জা ফখরুল বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভিসা নীতি দিয়েছে। কিন্তু সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন এখনো হয়নি। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখব।”

এদিকে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন," ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করে খুব ভালো করেছে। তারা( যুক্তরাষ্ট্র)  বলেছে, যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের বিধিনিষেধ দেবে। সরকার বলেছে, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। বাধা দিতে চাই না।''

তিনি বলেন, "প্রধান বিরোধী দল বলছে, তারা নির্বাচন হতে দেবে না। তার মানে কীভাবে হতে দেবে না? একটাই পথ ভায়োলেন্স । ভিসা বিধিনিষেধ জারি হয়েছে যারা নির্বাচনে বাধা দেবে তাদের জন্য। বিধিনিষেধের তালিকায় তো অপজিশনের নামও আছে।”

অন্যদিকে সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা বাসস জানিয়েছে, নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘‘যদি দেশের বাইরে থেকে নির্বাচন বানচাল করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের জনগণও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। আমরা দেখতে চাই, দেশের বাইরে থেকেও যেন নির্বাচন বানচালের কোনো চেষ্টা না হয়।''

ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমি আশা করি, বিরোধী দলসহ নির্বাচন বানচালের প্রচেষ্টাকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।” তার কথায়, " আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।কে নিষেধাজ্ঞা দেবে বা দেবে না তা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।''

বিশ্লেষকেরা যা বলছেন:

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ভিসা নীতি কার্যকর প্রাথমিক পদক্ষেপ।  এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র একটা মনস্তাত্বিক চাপ সৃষ্টি করছে। তারা নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞায় অভ্যস্ত এবং নিষেধাজ্ঞাকে তারা বেশ কার্যকর মনে করে। ফলে সামনে তারা তাদের চাওয়া আদায় করতে আরো চাপ বাড়াবে। সেটা অন্য কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞাও হতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. শহীদুজ্জামান মনে করেন," তারা গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারকে সামনে রেখে কাজ করে। কিন্তু তাদের মূল বিষয় হলো ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় তাদের অবস্থান এবং নিরাপত্তা। বাংলাদেশকে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা এই দুইটি বিষয়ে তাদের পুরোপুরি পক্ষের মনে না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা নানা ধরনের চাপ বাড়াবে।”

তার কথায়," বর্তমান সরকার নিশ্চয়ই এখন এই প্রেসার রিলিজের চেষ্টা করছে।  কিন্তু সেটা কী রকম হবে তা  সরকারই ভালো জানে।”

'সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা না নিলে মানুষের কষ্ট বাড়বে'

তিনি বলেন," এখানে শুধু যুক্তরাষ্ট্র একা নয়, এর সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা আছে। ভিতরের বাইরের প্রতিক্রিয়াগুলো স্পষ্ট হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। কারণ কারা এই ভিসা নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত হলো। এর সঙ্গে প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ আছে। তারা কীভাবে ব়িয়্যাক্ট করে তাও দেখার আছে।”

তার মতে," আগামী নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেই যাবে। আর চাপও বাড়াবে। এখন দেখার বিষয় সরকার সেটাকে কতটা ম্যানেজ করতে পারে, কীভাবে ম্যানেজ করে।”

আর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর বলেন," যুক্তরাষ্ট্র আগেই আমাদের সতর্ক করেছে। তারা মে মাসের ২৪ তারিখ এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। আসলে তখন থেকেই তারা কাজ শুরু করেছে। তারপরও যদি আমরা ব্যবস্থা না নিই। আমাদের মতো আমরা কাজ করেই গিয়ে থাকি তাহলে তারা এখন সেকেন্ড সিগন্যাল দিচ্ছে যে তারা তাদের ভিসা নীতি কার্যকর শুরু করেছে। এই সময়ে তারা কে কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে তার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে। তারা ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে যে সামনে তারা এটা নিয়ে তাদের কাজ অব্যাহত রাখবে।”

তার কথায়, " আমরা যদি এখন সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা না করি তাহলে এটা আমাদের জন্য জটিলতা আরো বাড়াবে। কারণ এখানে তো শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, দুইদিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবেনা। তাদের সঙ্গে পুরো পাশ্চাত্য জগত। এগুলো যদি আমরা ধর্তব্যের মধ্যে না নিই তাহলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। দেশের মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে। তাই নির্বাচনটা নির্বাচনের মতো হওয়া উচিত।”