1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মতলববাজদের দুরভিসন্ধিতে সাম্প্রদায়িক হামলা’

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২

আর কয়েকদিন পরই শুরু হচ্ছে দুর্গাপূজা৷ গত বছর পূজার সময় একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকটি জেলায় মন্দির ও হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়৷ এসব সাম্প্রদায়িক হামলা কেন হয়? কারা থাকে এসবের পেছনে?

https://p.dw.com/p/4GzKo
হিন্দু মন্দিরে হামলা
হিন্দু মন্দিরে হামলার ছবিছবি: Tarun Chakraborty Bishnu

এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব৷

ডয়চে ভেলে : গত বছর পুজোর সময় সাম্প্রদায়িক হামলা হলো, এবারের পুজো কতটা নির্বিঘ্ন হবে?

অধ্যাপক ড. আসাদুল্লাহ আল-গালিব : ইসলাম অন্য ধর্মের লোকদের উপর কোনো ধরনের জুলুম স্বীকার করে না৷ এটা যারা করে, তারা নিজেদের মতলব হাসিল করার জন্য করে৷ এতে ইসলামের কোনো অনুমোদন নেই৷ এটা যারা করছে, তাদের দুরভিসন্ধি থাকতে পারে৷ এতে সাধারণ মুসলমানদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে আমি মনে করি৷

সাম্প্রদায়িক হামলা কেন হয়?

কিছু মতলববাজ লোক আছে, কিছু রাজনৈতিক মতলব হাসিল করে, কেউ অন্য কোনো মতলব হাসিল করে৷ কোনো ধার্মিক লোক কখনোই অন্য ধর্মের উপর হস্তক্ষেপ করে না৷ এই উপমহাদেশে আমরা হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ভাইদের মতো বসবাস করছি৷ কোনোদিন কারো সঙ্গে ঝগড়া হয় না৷ আমি নিজেই তো ছোটবেলায় হিন্দুর কোলে মানুষ হয়েছি৷ তারা একেবারে লোয়ার কাস্ট হিন্দু৷ এখনও তারা আমাদের দেখলে মহব্বতের সঙ্গে কথা বলে৷ আমরাও তাদের সঙ্গে আদর করে কথা বলি৷ আমরা তো শুধু পত্রপত্রিকায় দেখি আর ভাবি, কী করে এটা হয়, কারা করে? এটা নিশ্চিত যে কিছু লোকের কারসাজি আছে৷ মহলবিশেষের কাজ এগুলো৷ এতে ধর্মেরও কোনো অনুমোদন নেই, ধার্মিকদেরও কোনো হস্তক্ষেপ নেই৷ তারা নিজস্ব মতলবে করছে এটা৷

‘ইসলামি নেতাদের ব্যাপকহারে প্রচার থাকতে হবে, যেন অমুসলিম ভাইদের কোনো ক্ষতি না হয়’

সাম্প্রদায়িক হামলার কারণে হিন্দুদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়৷ এই ভয় আদৌ কি কাটে?

প্রশাসন যদি সুশাসন রাখে দেশে, তাহলে কেটে যাবে৷ ইসলামী নেতাদের ব্যাপকহারে প্রচার থাকতে হবে, যাতে অমুসলিম ভাইদের কোনো ক্ষতি না হয়৷ একইভাবে ইন্ডিয়ায় মুসলমান ভাইদের উপর হচ্ছে৷ সেটাও মনে করি মতলববাজদের কাজ৷ ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশে নানা ধর্মের লোক বসবাস করে৷ এটাই নিয়ম৷ সবাই এক ধর্মের হবে, এটা আদৌ সম্ভব নয়৷ এক কথায় উত্তর হলো, মতলববাজরা দুরভিসন্ধি নিয়ে কাজ করছে৷ এখানে ধর্মীয় কোনো বিষয় নেই৷ হিন্দু ভাইদের আমি বলবো, তারা যেন সাধারণ মুসলমানদের এ বিষয়ে দায়ী না করেন৷ প্রশাসন যদি শক্তভাবে এটা দেখে, তাহলে আশঙ্কার কোনো কারণই নেই, ভয় পাওয়ারও কোনো কারণ নেই৷

সাম্প্রদায়িক হামলা বা হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলা করে কার লাভ?

কার লাভ সেটা আমি জানি না৷ যারা হামলা করে, তাদের কোনো লাভ হয়ত আছে৷ আসলে তারা ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে৷ লাভ তো হচ্ছেই না, নিজেদের ক্ষতি নিজেরাই ডেকে আনছে৷

হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলার ব্যাপারে আপনার ধর্মে কোনো অনুমতি বা বিধিনিষেধ আছে?

আদৌ নেই৷ ইসলামে হিন্দু হোক আর খ্রিষ্টান হোক- কারো উপর জবরদস্তি করার অনুমোদন নেই৷ রসুলের বাড়িতে শেষ পর্যন্ত একজন ইহুদি কর্মচারী ছিল৷ এমন অসংখ্য প্রমাণ আমাদের ধর্মে আছে৷ কোরআন, হাদিস ঘাটলে আপনি পাবেন৷ এ নিয়ে অসংখ্য আর্টিকেল লিখেছি৷ এই হামলাগুলো আসলে যাদের দুরভিসন্ধি আছে, তারাই করছে৷ তাদের চিহ্নিত করে শস্তি দিতে হবে৷

হিন্দুরাও তো এ দেশের নাগরিক৷ তাহলে তাদের নিয়ে কেন বিদ্রুপ করা হয়?

যারা করছে, তারাই বলতে পারবে৷ আমরা তো হিন্দুদের ভালোবাসি৷ যে কোনো নাগরিকের অধিকার আছে এদেশে বসবাস করার৷ এই দেশটা সবার৷ ভারতে বিজেপি যে হিন্দুত্ববাদ করেছে, সে কারণে সেখানকার মুসলমানরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন৷ কিন্তু আমাদের দেশে সেটা নেই৷ এই কারণেই এখানে সব ধর্মের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আছে৷ শুধু ইসলামের কারণে আমাদের এখানে হিন্দু-মুসলমানদের সম্প্রীতির একটা দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে৷ এটা কোনো রাজনৈতিক কারণে নয়৷ রাজনীতিবিদরা তো নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে৷ ইসলাম কখনোই এগুলো সমর্থন করে না৷

পূজা মণ্ডপে এবার সিসিটিভি বসানো হচ্ছে৷ সিসিটিভি দিয়ে কি হামলা প্রতিরোধ সম্ভব?

যারা মনে করছে সহায়ক হবে, সেখানে কী হবে আল্লাহই জানেন৷ ইতিপূর্বে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেখানে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের শাস্তি হয়েছে বলে আমরা দেখতে পাইনি৷ ক্যামেরা দিয়ে কারা করেছে সেটা দেখা যেতে পারে, কিন্তু যারা তাদের পাঠায় তারা তো পেছনে থাকে, তাদের ধরা তো আসল কাজ৷ সরকারের বহু বিভাগ আছে, ইচ্ছে করলে তারা ধরতেও পারে৷ কেন ধরে না, সেটা তো আমরা জানি না৷ এগুলো নিয়ে আমরা চিন্তাও করি না৷ আমরা শুধু জানি, অমুসলিমদের পূর্ণ অধিকার আছে, আমরা তাদের ভাইয়ের মতো মনে করি৷ তাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আছে, আগামী দিনেও থাকবে ইনশাল্লাহ৷

এই ধরনের হামলা প্রতিরোধে সরকারের পদপেগুলো কী যথেষ্ট?

আমার তো আদৌ মনে হয় না৷ এগুলো সিসিটিভি ক্যামেরার কাজ নাকি? ভালোবাসা সৃষ্টি করা কাজ৷ সেটা ইসলামে আছে৷ সেটা প্রচার করলে আর কিছুই লাগে না৷ আলেমদের কাজে লাগাতে হবে৷ তারা এগুলো প্রচার করবে৷ যারা রাজনীতি করেন, তাদের এসব বিষয় জিজ্ঞাসা করাই ভালো৷

পুলিশ পাহাড়ায় পুজো উৎযাপন কতটা স্বস্তির?

এই কথাটাই খারাপ৷ পূজা উৎযাপন কেন পুলিশ পাহারায় হবে? মুসলমানরাই পাহারা দেবে তাদের৷ সবাই ভাই ভাই, পুলিশ লাগবে কেন? স্বাধীন দেশে স্বাধীন নাগরিক তার ধর্ম পালন করবে, তাহলে পুলিশ কেন?

হামলার বিচারের ব্যাপারে সরকার বা যারা আগে ক্ষমতায় ছিল তারা কতটা আন্তরিক ছিল?

আমি মনে করি, পলিটিক্যাল লোকদের কাজই সব পলিটিক্যাল৷ আন্তরিকতা কারো মধ্যেই নেই৷ সবই লোক দেখানো কাজ কারবার৷ এগুলো আমরা বিশ্বাস করি না, ফলে ধারে কাছেও যাই না৷ যে যার মতো করুক৷ ক্ষমতা লাভের জন্য তারা কত কী করে সেটা তো আপনারা আমাদের চেয়ে বেশি জানেন৷ 

সরকার আর কী পদক্ষেপ নিলে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা সম্ভব?

সরকারের কোনো পদক্ষেপেই ধর্মীয় সম্প্রীতি আসবে না৷ সম্প্রীতির জন্য মুসলমানরা নিজেদের ধর্মের কারণেই আসবে৷ সরকার কিছুই করতে পারবে না৷ লাঠিসোঁটা দিয়ে মহব্বত সৃষ্টি হয় না৷ এগুলো জবরদস্তির বিষয় না৷ ধর্মীয় বিষয়টা আন্তরিক বিষয়৷ হিন্দুদের বাড়িতে মুলসমানরা কামলা খাটছে না, আবার মুসলমানদের বাড়িতে হিন্দুরা কামলা খাটছে না? শিল্প কলকারখানায় কাজের সময় হিন্দু- মুসলমানদের কোনো ভেদাভেদ আছে? সবাই তো কাজ করছে৷ এগুলোর মধ্যে গোলামাল লাগিয়ে দেয় কিছু দুষ্ট লোক৷

ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে আপনারা কী করতে পারেন?

আমি সপ্তাহে একদিন জুমার খুতবায় বক্তৃতা করি৷ আপনি যদি কখনো আমার বক্তৃতা শোনেন, তাহলে বুঝতে পারবেন৷ যখনই এসব প্রসঙ্গ আসে, অটোমেটিকালি আমার বক্তব্য সেদিকে চলে যায়৷ আমাদের যে মাসিক ম্যাগাজিন আছে, সেখানেও আমার লেখা যায়৷ ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার জন্য আমি এবং আমার সংগঠন কথা বলি, লিখি৷ আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই৷ আমার বাসায় একজন সাঁওতাল মহিলা কাজ করে৷ আমরা তো কিছুই মনে করি না৷ সে তার ধর্ম পালন করে, আমরা আমাদের ধর্ম পালন করি৷ তার পরকাল তার, আমার পরকাল আমার৷ আমাদের কাছ থেকে সে কোনোদিন অন্যরকম কোনো আচরণ পায়নি৷ কোনো ভেদাভেদ আমরা রাখি না৷ হিন্দু ভাইদের উদ্দেশ্যে আমার বক্তব্য হবে, তারা যেন আদৌ কোনো ভয় না পান৷ এটা তাদেরও দেশ, আমাদেরও দেশ৷ যারা এগুলো করে, তারা দুষ্টু লোক৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য