মমতার বয়কট, বিরোধী ঐক্যে ধাক্কা
৯ জানুয়ারি ২০২০সিএএ নিয়ে মোদী-শাহের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ শুরুর আগে বিরোধীদের মধ্যেই লড়াই হয়ে গেল৷ কংগ্রেস ও সিপিএমের আচরণে ক্রুদ্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী বৈঠক বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিলেন৷ তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, সনিয়া গান্ধীর ডাকা বৈঠকে তিনি নিজে তো যোগ দেবেনই না, দলের কোনও নেতাকেও পাঠাবেন না৷ মমতার রাগের কারণ, বুধবারের বনধে সিপিএম ও কংগ্রসের ভূমিকা৷ ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা বনধে মালদা সহ রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় হিংসা হয়েছে৷ পুলিশের জিপ, বাস পোড়ানো হয়েছে৷ তার ওপর বৃহস্পতিবার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশেন তাঁর সঙ্গে কংগ্রেস, সিপিএম নেতাদের কথা কাটাকাটি হয়৷ তারপরই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ''যাঁরা ঘোলা জলে মাছ ধরছেন, তাঁদের বলছি, দিল্লিতে এক নীতি, রাজ্যে আরেক নীতি মানব না৷ এনআরসি, এনপিআর মানছি না৷ তার বিরুদ্ধে লড়ব৷ কিন্তু আপনাদের সঙ্গে থাকব না৷ বাস জ্বালিয়ে দেবে, এ সব মেনে নেব না৷''
এরপরই বিধানসভায় নিজের অফিসঘরে বসে মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেন এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারকে৷ তাঁকে সাফ জানিয়ে দেন, তিনি দিল্লি যাবেন না বাম-কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে যা করছে তা মেনে নেওয়া যায় না৷ কংগ্রেস নেতৃত্বকে এই সিদ্ধান্ত জানানোর অনুরোধও মুখ্যমন্ত্রী শরদ পাওয়ারকে করেছেন৷
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি না আসার সিদ্ধান্তে সিএএ-র বিরুদ্ধে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ লড়ইয়ের চেষ্টা বিশাল ধাক্কা খেল৷ কারণ, কংগ্রেস, বাম, ডিএমকে, এনসিপি ছাড়া খুব বেশি দল সিএএ নিয়ে প্রতিবাদের পথে যায়নি৷ মায়াবতী বা অখিলেশ এখনও পর্যন্ত চুপচাপ আছেন৷ সেখনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে পাওয়াটা জরুরি ছিল সনিয়া গান্ধীর৷ সেটা হচ্ছে না৷ সামনেই সংসদের বাজেট অধিবেশন৷ সেখানেও বিরোধী ঐক্যে ছায়াপাত করবে এই ঘটনা৷
পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম ও কংগ্রেস কী করেছে, যার জেরে এই সিদ্ধান্ত নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''তৃণমূল রাজ্যে সব জায়গায় শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছে৷ গণতান্ত্রিকভাবে করেছে৷ কিন্তু এ ভাবে বাস জ্বালিয়ে দেওয়া, ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া, মালদায় পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হল চূড়ান্ত গুন্ডামি৷ যা করল কংগ্রেস ও সিপিএম৷ যারা সিএএ ও এনআরসির বিরুদ্ধে, তারা গুন্ডামির রস্তায় গেলে লোকের সমর্থন পাবে না৷ আমাদের রাজ্যে আমরা হিংসা হতে দেব না৷''
সিপিএম অবশ্য বিজেপি-বিরোধী ঐক্যে ফাটলের দায় পুরোপুরি মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়ের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে৷ বিধানসভায় সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসাবে মমতা বন্দ্যোপধ্যায়ের আগেও কোনও গ্রহণযোগ্যতা ছিল না৷ এখনও যে নেই তা আবার প্রমাণিত হল। দেশজুড়ে বিজেপি বিরোধী শক্তি যখন জোট বাঁধছে, তখন তিনি বিশ্বাসঘাতকতা করলেন৷'' বামেরা জানিয়েছেন, বিধানসভায় সিএএ বিরোধী প্রস্তাবও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আনতে দেননি৷
দোষ যারই হোক, ঘটনা হল, সিএএ নিয়ে একজোট হয়ে কোনও লড়াইয়ে নামতে পারছে না বিরোধীরা৷ তাতে রাজনৈতিক দিক থেকে সুবিধা পেয়ে যাবে বিজেপি৷ মোদী-শাহের ওপর থেকে চাপ কমবে৷