1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মমতার মন্তব্য় নিয়ে ভারতকে নোট হাসিনা সরকারের

২৫ জুলাই ২০২৪

বিজেপি আগেই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য়ের বিরোধিতা করেছিল। এবার মন্তব্য় করলো ঢাকা।

https://p.dw.com/p/4ihnV
মমতা-হাসিনা-মোদী শান্তিনিকেতনে এক মঞ্চে
একমঞ্চে মমতা-হাসিনা-মোদীছবি: DW/S. Bandopadhyay

বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন যখন অগ্নিগর্ভ, তখন কলকাতায় ২১ জুলাইয়ের সভা থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় বলেছিলেন, ''বাংলাদেশ থেকে কেউ ভারতে এলে তাকে আশ্রয় দেওয়া হবে।'' এখানেই শেষ নয়, জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত প্রস্তাবের প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানিয়েছিলেন, আক্রান্ত কোনো ব্য়ক্তি প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিতে চাইলে, প্রতিবেশী দেশ তাকে আশ্রয় দিতে বাধ্য।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ তখনই প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের জেরে ভারতীয় এবং নেপালি ছাত্ররা সীমান্ত পার করলেও বাংলাদেশের কোনো ব্য়ক্তি সীমান্ত পার করে ভারতে ঢোকেননি। তাহলে কেন মমতা ওই মন্তব্য় করলেন? নেহাতই রাজনৈতিক স্বার্থে?

ঠিক এই প্রশ্নই তুলেছে শেখ হাসিনার সরকার। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ''মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাই, তাঁর ওই বক্তব্য়ের জেরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।'' পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবিষয়ে তারা একটি নোট পাঠিয়েছে ভারত সরকারকে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য এখনো পর্যন্ত এবিষয়ে কোনো মন্তব্য় করেনি।

তবে মমতা কেন ওই মন্তব্য় করলেন, তা নিয়ে রাজ্য়পাল সিভি আনন্দ বোস রিপোর্ট চেয়েছেন। সমাজ মাধ্যমে সে বিষয়ে পোস্টও করা হয়েছে রাজ্য়পালের অফিস থেকে।

এদিকে মমতা ওই মন্তব্য় করার পরেই সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা রবিশংকর প্রসাদ সমালোচনা করেছিলেন। তার অভিযোগ ছিল, অনেক আগে থেকেই মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বৈধতা দিতে চাইছেন। তার এই মন্তব্য়ও তেমনই এক পদক্ষেপ। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, কাকে দেশে জায়গা দেওয়া হবে এবং কাকে দেওয়া হবে না, তা সম্পূর্ণ কেন্দ্রের এক্তিয়ারভুক্ত। কোনো রাজ্য় সরকার তা নিয়ে মন্তব্য় করতে পারেন না। নাগরিকত্ব আইনের প্রসঙ্গ তুলে রবিশংকর জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই আইনটিকেও গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বাংলাদেশের নোট নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য় করেনি। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য় নিয়েও সরকারের তরফে কোনো রিপোর্ট তলব করা হয়নি। তবে বিজেপির বহু নেতাই মমতার বিরোধিতা করছেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে বিজেপি নেতা সৌরভ সিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তা তাদের অভ্য়ন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে প্রতিবেশী দেশের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য সভায় মন্তব্য় করবেন কেন? বোঝাই যায়, মুখ্যমন্ত্রী সংকীর্ণ রাজনীতি করছেন। তিনি এই কথাগুলি বলে একটি নির্দিষ্ট ভোটব্য়াঙ্ককে তুষ্ট করার চেষ্টা করেছেন।''

তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এই সমালোচনার পাল্টা বক্তব্য় পেশ করেছেন। তার কথায়, ''মুখ্যমন্ত্রী মানবিকতার জায়গা থেকে এই মন্তব্য় করেছেন। যারা এর বিরোধিতা করছেন, তারাই আসলে সংকীর্ণ রাজনীতি করছেন।''

বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত আছে। ভারতীয় সেনার সাবেক লেফটন্য়ান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য মনে করেন, ''এই ধরনের ঘটনা যখন ঘটে তখন খুব সতর্ক হয়ে মন্তব্য় করা উচিত। প্রকাশ্য জনসভা মন্তব্য় করার জায়গা নয়। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশের পরিস্থিতির উপর আমাদের নজর থাকবে অবশ্যই, কিন্তু তা নিয়ে মন্তব্য় করার আগে পাঁচবার ভাবা দরকার।''

সাংবাদিক মিলন দত্ত মনে করেন, ''মমতাযখন এ মন্তব্য় করেছেন, তখন বাংলাদেশ থেকে সে দেশের মানুষ ভারতে উদ্বাস্তু হয়ে ঢোকেননি। ফলে তার মন্তব্য়ের কোনো অর্থ নেই। বোঝাই যায়, তিনি রাজনৈতিক স্বার্থেই সে কথা বলেছেন। কিন্তু বিজেপি যেভাবে আক্রমণ করছে, তা-ও মেনে নেওয়া যায় না। রোহিঙ্গারা যখন সত্যিই উদ্বাস্তু হয়ে ভারতের কাছে আশ্রয় চেয়েছিলেন, বিজেপির সরকার তাদের জায়গা দেয়নি। এটি অমানবিক এবং অগ্রহণযোগ্য়।'' বস্তুত, রোহিঙ্গাদের পশ্চিমবঙ্গ জায়গা দিয়েছিল। যা নিয়ে এখন সরব বিজেপি। কিন্তু মিলন মনে করেন, মানবিকতার জায়গা থেকেই পশ্চিমবঙ্গে তাদের জায়গা দেওয়া হয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কাদের জায়গা দেওয়া হবে এবং কাদের দেওয়া হবে না, তা নিয়ে কেন্দ্র আইন বানালেও মানবিকতার জায়গা থেকে রাজ্য়গুলি এক্তিয়ার আছে তা নিয়ে কথা বলার এবং সমালোচনা করার। ঠিক যেভাবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গিয়ে একসময় মিজোরামের সরকার মিয়ানমারের উদ্বাস্তুদের জায়গা দিয়েছিলেন। ফলে রবিশংকরপ্রসাদের বক্তব্য়ও রাজনীতির ঊর্ধ্বের নয়। তবে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের মন্তব্য় নেহাতই সংকীর্ণ রাজনীতি বলে মনে করছেন প্রায় সমস্ত বিশেষজ্ঞ।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷