মাছ নিয়ে মহা দুশ্চিন্তা
১৭ এপ্রিল ২০১৪মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরা হচ্ছে বিশ্বজুড়ে৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অঞ্চলের দেশগুলোই বেশি দায়ী৷ ব্যাপক হারে মাছ ধরায় রাশ টানতে তাই নেয়া হচ্ছে বিশেষ উদ্যোগ৷ কিন্তু আইন করে, জেলেদের নিয়মে বাঁধার চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না৷ মাছ খাওয়া বেড়েই চলেছে ইউরোপে৷
গত ৬ এপ্রিল জার্মানি পালন করলো ‘ফিস ডিপেন্ডেন্স ডে', অর্থাৎ ‘মাছনির্ভরতা দিবস'৷ ইইউ অঞ্চলের সবগুলো দেশেই দিবসটি পালিত হয়৷ যেমন ইটালিতে পালিত হয়েছে ১৪ এপ্রিল, পর্তুগালে হবে আগামী পহেলা মে৷ দিবসটির মূল উদ্দেশ্য হলো, মাছ ধরা এবং আমদানির বিষয়ে সবাইকে একটা নির্দিষ্ট নিয়মে বাঁধা৷
বাঁধার চেষ্টা চলছে ঠিকই, তবে শেষ পর্যন্ত পুরো বিষয়টি হয়ে যাচ্ছে ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেড়ো '-র মতো৷ এ মুহূর্তে প্রত্যেক জার্মান বছরে অন্তত ১৫ কিলোগ্রাম (কেজি) মাছ খেয়ে থাকেন৷ বাঙালি হিসেবে ভাবলে পরিমাণটা কম মনে হতে পারে, তবে ইইউ নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে তা অনেক বেশি৷ জার্মানি বছরের শেষ আট মাস বিদেশ থেকে মাছ আমদানি করে৷ তার আগের চার মাস, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নিজেদের মাছ দিয়েই কাজ চালানোর কথা৷ কিন্তু জার্মানদের মেন্যুতেও মাছ প্রায় নিয়মিত ঢুকে পড়ছে বলে বিশ্বের অনেক দেশে মাছ ধরা বাড়ছে৷
ইউরোপের জেলেরা যে শুধু নিজের দেশের সমুদ্রেই মাছ ধরেন তা কিন্তু নয়৷ ইউরোপের মৎস সম্পদ বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা ‘ওশান ২০১২'-এর নিনা ভল্ফ মনে করেন, আফ্রিকার কিছু দেশে মাছ ধরার মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ার পেছনে ইউরোপীয় জেলেদেরও ভূমিকা রয়েছে৷ পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ডাব্লিউডাব্লিউএফ ১০১টি মাছের তালিকা প্রণয়ন করে সেগুলো আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুপারিশ করেছে৷ তালিকায় অবশ্য বাঙালিদের পছন্দের মাছ খুব একটা নেই৷
মাছের তালিকা প্রকাশ এবং মাছ ধরায় নিয়ন্ত্রণ আরোপের নিয়ম করে কাজের কাজ খুব বেশি হচ্ছে না৷ উন্নয়নশীল কিছু দেশে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে মাছ ধরা বেড়েই চলেছে৷ আফ্রিকার দেশ নামিবিয়ার প্রায় ৯০ ভাগ মাছই রপ্তানি হয় ইউরোপে৷ মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরার কারণে গিনি, বেলিজে এবং কম্বোডিয়াকে কালো তালিকভুক্ত করা হয়েছে৷ এই তিনটি দেশ থেকে তাই ইইউ অঞ্চলের সব দেশে মাছ আমদানি আপাতত বন্ধ৷
মাছের ওপর নির্ভরশীলতা তো বেড়েই চলেছে, তারপরও ‘মাছ নির্ভরতা দিবস'-কে ঘিরে আইন প্রয়োগের চেষ্টা এবং সবাইকে সতর্ক করার উদ্যোগ কতটা সাফল্য পায় সেটাই এখন দেখার বিষয়৷