ইউরোপে মানব-ব্যবসা
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪‘‘আমরা মনে করি মানব-ব্যবসার শিকার অন্যান্য দেশের নাগরিক৷ কিন্তু এই ধারণা ভুল৷ ইউরোপের অভ্যন্তরে যেসব মানুষ নিয়ে অবৈধ ব্যবসা চলে, তাঁদের বেশিরভাগই ইউরোপের নাগরিক৷'' জানান ইউরোপীয় কমিশনের মানব-ব্যবসা প্রতিরোধের সমন্বয়কারী মিরিয়া ভাসিলিদৌ৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরেই ব্যবসা
এই সব মানুষকে নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরেই ব্যবসা-বাণিজ্য চলে৷ এছাড়া খদ্দেররাও ইইউ-এর নাগরিক৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম পরিসংখ্যান সংস্থা ‘ইউরোস্ট্যাট'-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৩ সালে মানব-ব্যাবসার শিকার ৬১ শতাংশ আদতে ইইউ-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির নাগরিক৷ ‘ইউরোপোল' যাঁদের শনাক্ত করেছে, তাঁদের মধ্যে ৪০ শতাংশ রোমানিয়ার, ১৮ শতাংশ হাঙ্গেরি ও ১১ শতাংশ বুলগেরিয়ার নাগরিক৷
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরাই শিকার
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েরা এই বাণিজ্যের শিকার৷ এঁদের মধ্যে অধিকাংশই যৌন ব্যবসার কবলে পড়েন৷ ‘ইউরোস্টাট' ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত যে সব ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করতে পেরেছে, তাঁদের ৬২ শতাংশকে এই লক্ষ্যে অপব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে৷
এই সব মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে বেসরকারি কিছু সংস্থা বা এনজিও৷ জার্মানিতে ৩৭টি প্রতিষ্ঠান ও পরামর্শকেন্দ্র এই দায়িত্বে রয়েছে৷ এই প্রতিষ্ঠানগুলির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি দল ‘কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ কমব্যাটিং ট্র্যাফিকিং ইন উইমেন অ্যান্ড ভায়োলেন্স', সংক্ষেপে ‘কোক', যারা নারী পাচার এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সক্রিয়৷ ‘‘বেসরকারি সংস্থাগুলিই বহু বছর ধরেই মানব-ব্যবসার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে'', বলেন কোক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাইলে টানিস৷
কোক-এর পক্ষ থেকে সহায়তা করা হয়
ভুক্তভোগীদের ডাক্তার, আইনজীবী কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করা হয় কোক-এর পক্ষ থেকে৷ স্বদেশে ফিরে যেতে হলেও অসহায় মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসে কোক৷
নাইলে টানিস বলেন, মানব-বাণিজ্যের কবলে পড়া বেশিরভাগ মানুষই ইইউ-এর দেশ থেকে আসা৷ তবে নাইজেরিয়ার মতো অন্যান্য দেশ থেকেও এসেছেন কেউ কেউ৷ অনেক দেশে আইনত দেহব্যবসা নিষিদ্ধ হলেও এবং খদ্দেরদের সাজা দেওয়া হলেও, আসল কথা হলো ইইউ-এর ২৮টি দেশেই মানব ও দেহব্যবসা চলছে৷
মানব ও দেহব্যবসার মধ্যে যোগসূত্র
মানুষ নিয়ে বাণিজ্য ও দেহব্যবসার মধ্যে সরাসরি একটা যোগসূত্র আছে বলে মনে করেন মিরিয়া ভাসিলিদৌ৷ বলা যায়, এই গ্রুপটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে৷ মানব-বাণিজ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাধ্যতামূলক শ্রম৷ এছাড়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অপসারণ, অবৈধ দত্তক, বাধ্যতামূলক বিয়ে, এসব কারণেও মানুষ নিয়ে ব্যবসা করা হয়৷
মিরিয়া ভাসিলিদৌ মনে করেন, এক্ষেত্রে আরো অনেক কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে৷ এ সম্পর্কে ইইউ-এর একটি নীতিমালার উল্লেখ করেন তিনি৷ ২০১১ সালের এই নীতিমালায়, অপরাধীদের ধরার ব্যাপারে আরো সক্রিয় হওয়া ও ভুক্তভোগীদের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে৷ ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ দেশের মধ্যে মাত্র ২০টি দেশ এক্ষেত্রে উন্নততর আইন প্রণয়ন করেছে৷ জার্মানি অবশ্য এখন পর্যন্ত গড়িমসি করছে৷