মার্কিন মহাকাশ ফেরি ‘ডিসকভারি’র শেষযাত্রা
১ মার্চ ২০১১পৃথিবী থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার উপরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র বা আইএসএস'এর অবস্থান৷ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আওতার বাইরে থেকে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করার জন্য এই কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে৷ পাশাপাশি চলছে গবেষণাও৷ এই কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয় ১৯৯৮ সালে৷
আইএসএস'এ বিজ্ঞানী ও গবেষণার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে যেতে মহাকাশ ফেরি ব্যবহার করা হয়৷ ডিসকভারি হলো সেই ধরনেরই একটি মহাকাশ ফেরি৷ আইএসএস'এর নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই মহাকাশে আসা যাওয়া ডিসকভারি'র৷ নির্দিষ্ট করে বললে ১৯৮৪ সাল থেকে৷
তখন থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৩৮ বার মহাকাশে যাতায়াত করেছে ডিসকভারি৷ এসময় প্রায় দু'শো মহাকাশচারী ডিসকভারিতে চড়েছেন৷ সব মিলিয়ে মোট ৩৫২ দিন মহাকাশে থেকেছে এই ফেরি৷ যেটা যে কোনো ফেরি'র চেয়ে বেশি৷ এছাড়া নাসা'র তৈরি এটাই সবচেয়ে পুরনো ফেরি৷ ফলে ডিসকভারি যে একটি ইতিহাস, সেটা বলা যায়৷
এতদিন ধরে মহাকাশচারীদের সেবা দেয়ার পর এবার পালা এসেছে বিশ্রামের৷ তাই তো শেষবারের মত এখন আইএসএস'এ অবস্থান করছে ডিসকভারি৷ যাত্রা শুরু করেছিল গত বৃহস্পতিবার৷ আর সেখানে পৌঁছেছে শনিবার৷ থাকবে মোট ১১ দিন৷ তারপরই পৃথিবীতে ফিরে এসে চলে যাবে জাদুঘরে৷ আর সাক্ষী হয়ে থাকবে একটা ইতিহাসের৷
তবে ডিসকভারি'র যাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল গত নভেম্বরে৷ কিন্তু বহির্ভাগের জ্বালানি ট্যাঙ্কে ফাটল দেখা দেয়ায় সেটা সম্ভব হয় নি৷ পরে নাসার বিজ্ঞানীরা অনেক চেষ্টা করে প্রায় দু'মাস পর একটা উপায় বের করতে সক্ষম হন৷
তারপর উড্ডয়নের আগেও আবার কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল৷ কিন্তু সেটা তাড়াতাড়িই ঠিক করে ফেলেন বিজ্ঞানীরা৷ ফলে আর দেরি করতে হয় নি৷
শেষযাত্রায় ডিসকভারির যাত্রী ছিলেন ছ'জন মহাকাশচারী৷ সঙ্গে আইএসএস'এ স্থাপনের জন্য একটি মডিউল৷ তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে জিনিসটি এবার গেছে সেটা হলো মনুষ্যাকৃতির একটি স্বয়ংক্রিয় রোবট – যা ইতিহাসে প্রথম৷ এই রোবট স্থায়ীভাবে আইএসএস'এ থেকে যাবে৷ এমনই বেশ কিছু ইতিহাসের সাক্ষী ডিসকভারি৷ যেমন প্রথম নারী শাটল কম্যান্ডার ডিসকভারিকে নিয়েই মহাকাশে গেছেন৷
এতকিছুর কারণে ডিসকভারিকে ঘিরে মহাকাশচারীদের মাঝে সবসময় একটা আবেগ কাজ করে৷ যেটা টের পাওয়া গেছে শেষযাত্রার দিন৷ আবেগতাড়িত হয়ে এক প্রকৌশলী বলেন, ‘ডিসকভারি আমার সন্তান৷'
কিন্তু কেন ডিসকভারি শেষযাত্রা করছে? এর কারণ, এর নকশা অনেক পুরনো হয়ে গেছে৷ ১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করলেও নকশা তৈরি হয়েছিল তারও প্রায় ১০ বছর আগে, বলছেন নাসা'র প্রধান প্রযুক্তিবিদ৷
ডিসকভারি'র পর বাকী থাকছে আরও দুটি মহাকাশ ফেরি৷ এর মধ্যে ‘এন্ডেভার' শেষযাত্রা করবে এপ্রিলের ১৯ তারিখে৷ আর ‘আটলান্টিস' জুনের ২৮ তারিখে৷
এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে এরপর থেকে মার্কিন মহাকাশচারীরা কীভাবে চলাচল করবেন? উত্তর - তাদেরকে রাশিয়ার ‘সোয়ুজ' মহাকাশযান ব্যবহার করতে হবে৷ যেটা অবশ্য মার্কিন যানগুলোর চেয়ে আকারে ছোট৷
তবে ২০১৫ সালের মধ্যে মার্কিন নতুন মহাকাশযান ‘ওরিয়ন' তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ তখন আবার নিজেদের যানে করে আইএসএস'এ যেতে পারবেন মার্কিন মহাকাশচারীরা৷
এখন পর্যন্ত যে পরিকল্পনা তাতে আইএসএস থাকবে ২০২০ সাল পর্যন্ত৷ অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বাজেট কম থাকায় একবার কথা উঠেছিল ২০১৫ সালের মধ্যেই এই কর্মসূচি শেষ করে দেয়ার৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেটা হয় নি৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম